বাড়ির উঠোনে থেকে যুবকের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধারের ঘটনায় এক দম্পতিকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার ভোরে পূর্বস্থলী ২ ব্লকের ছাতনি এলাকার ঘটনা। মৃত যুবকের নাম স্বপন রায় (২৭)। বাড়ি ওই ব্লকেরই বিশ্বরম্ভা গ্রামে। দেহের পাশ থেকে একটি পাইপগান উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃতের মা থানায় চার জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতেই মিলন বিশ্বাস ও রিনা বিশ্বাস নামে ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দশেক আগে মিলনের ভাই শীতলের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় স্বপনের। সেই সুবাদে বিশ্বাস পরিবারে যাতায়াত শুরু করেন স্বপন। এক সময়ে মিলনের অপর ভাই নির্মল বিশ্বাসের গাড়ি চালানোর কাজও করতে শুরু করেন স্বপন। বাড়িতে যাতায়াতের সূত্রেই মিলনের স্ত্রী রিনার সঙ্গে স্বপনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক সময়ে বাড়ি ফেরা বন্ধ করে ছাতনি এলাকায় দেবু পালিত নামে এক ব্যক্তির হোটেলে থাকতে শুরু করেন স্বপন। নির্মলবাবু গাড়ি বিক্রি করে দিলেও স্বপন ছাতনি থেকে চলে যাননি। নিজে একটি গাড়ি কিনে ভাড়া দেওয়া শুরু করেন তিনি। শুক্রবার নির্মলবাবু জানান, সম্প্রতি মিলন ও রিনাদেবীর মেয়ের বিয়ে হয়। সেই সময় থেকে রিনাদেবী স্বপনকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছিলেন। |
বৃহস্পতিবার ধৃত দম্পতিকে কালনা মহকুমা আদালতে তোলা হয়। মিলনবাবুকে তিন দিন পুলিশ হেফাজত ও রিনাদেবীকে চোদ্দ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন এসিজেএম এম এম রায়। অভিযুক্তদের আইনজীবী প্রভাত ঘোষ জানান, রিনাদেবী তাঁকে জানিয়েছেন, বুধবার রাতে তাঁরা বাড়িতে ঘুমোচ্ছিলেন। আচমকা দরজায় কেউ জোরে ধাক্কা মারে। তাঁরা মনে করেন, বাড়িতে চোর এসেছে। তার কিছুক্ষণ পরেই একটি বিকট শব্দ হয়। ঘরের দরজা খুলে তাঁরা দেখেন, স্বপনের রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। নির্মলবাবু জানান, তিনি মিলনবাবুর বাড়ির কাছেই থাকেন। তাঁর দাবি, ঘটনার রাতে রিনাদেবী তাঁকে ফোন করে জানান, বাড়িতে কোনও লোক ঢুকেছে। টর্চ হাতে দাদার বাড়ি গিয়ে তিনি দেখেন, স্বপনের মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। এর পরেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। নির্মলবাবুর আরও দাবি, তাঁকে রিনাদেবীর এড়িয়ে চলার বিষয়টি স্বপন মেনে নিতে পারেননি। সে কারণে নিজেই পাইপগান থেকে গুলি ছুড়ে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি।
স্বপনবাবুর মা ভগবতী রায় অবশ্য পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন, তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছে। মিলনবাবু ও রিনাদেবী ছাড়াও শীতল বিশ্বাস এবং দেবু পালিতের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছেন তিনি। পুলিশকে ভগবতীদেবী জানিয়েছেন, মাস দুয়েক আগে শীতল ও দেবু বাড়িতে গিয়ে ছেলেকে ছাতনি এলাকা থেকে ফিরিয়ে আনার হুমকি দেয়। পুলিশ জানায়, দেবু ও শীতল পলাতক।
মৃতের মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জনকে গ্রেফতার করলেও ঠিক কী ঘটেছে, প্রাথমিক তদন্তের পরে তা জানাতে পারেনি পুলিশ। জানা গিয়েছে, স্বপনের বুকে গুলি লাগলেও তাঁর পরনের জামায় কোনও ছিদ্র নেই। স্বপন নিজে জামা তুলে বুকে গুলি চালিয়েছিলেন, না কি তাঁকে গুলি করার পরে কেউ জামা পরিয়ে দিয়েছিল, এ প্রশ্নের কোনও উত্তর পুলিশের কাছে মেলেনি। স্বপন আত্মঘাতী হয়ে থাকলে পাইপগানটি তিনি কোথা থেকে পেলেন, সে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মহকুমার এক পুলিশকর্তা বলেন, “ধৃত এক জনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁকে জেরার পরেই ঘটনাটি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।” পাইপগানটিতে আঙুলের ছাপ পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। |