নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
কাজের টোপ দিয়ে ফুঁসলে পাঁচ তরুণীকে নিষিদ্ধপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে ৪ যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটে নিউ জলপাইগুড়ি পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায়। শিলিগুড়ি থানার খালপাড়ার নিষিদ্ধপল্লি থেকে ৫ তরুণীকেও উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম নুরসামাদ আলি, মহম্মদ জানিব আলি, আজাহারউদ্দিন এবং আবুল বাসার। তাদের বাড়ি অসমের দরং জেলার দলগাঁও থানা এলাকায়। ধৃতরা পেশায় রিকশা চালক। উদ্ধার হওয়া তরুণীদের মধ্যে ২ জনের বাড়ি অসমের কামরূপে, একজন দলগাঁও, বাকি ২ জন তেজপুর ও বঙ্গাইগাঁও-এর বাসিন্দা।
জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “দুষ্কৃতীদের ওই দলটি অসম থেকে তরুণীদের নিয়ে এসে নিষিদ্ধপল্লিতে বিক্রি করছিল বলে এনজেপি ওসির কাছে খবর ছিল। সেই ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে ৫ জন তরুণীকেও উদ্ধার করা হয়। তাদের সঙ্গে একজন শিশুও ছিল। একটি মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। নারী পাচার বিরোধী দলের সদস্যরাও ঘটনার তদন্ত করছেন। ওই ঘটনায় আরও কারা জড়িত রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দলগাঁওয়ের রাণীপুকরি’র বাসিন্দা আয়েষা খাতুন (আসল নাম নয়) ২২ বছর বয়সেই বিধবা হয়ে যান। তার দেড় বছরের একটি শিশু রয়েছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জানিব আলি তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে আয়েষাকে শিলিগুড়ি নিয়ে যায় জানিব। জানিবের সঙ্গে তার ৩ সঙ্গী ছিল। নিষিদ্ধপল্লিতে নিয়ে গিয়ে আয়েষাকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় জানিব। সেখান থেকে বেরিয়ে অভিযুক্তরা এনজেপির একটি হোটেলে ওঠে। সেখানে বসেই ওই তরুণীর সম্পর্কে আলোচনা করছিল তারা। বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ হোটেলে হানা দেয়। ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে খালপাড়ার নিষিদ্ধপল্লির কথা জানতে পারে পুলিশ। রাতেই এনজেপি ও শিলিগুড়ি থানার পুলিশ নিষিদ্ধপল্লিতে হানা দেয়। একটি বাড়ি থেকে শিশু সহ আয়েষাকে উদ্ধার করা হয়।
অভিযানে অংশ নেওয়া এক পুলিশ কর্তা জানান, ওই তরুণীকে উদ্ধারের পরই বিভিন্ন ঘর থেকে আরও ৪ জন তরুণী বেরিয়ে আসে। তাঁরা পুলিশকে জানান, কিছুদিন আগে তাঁদের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে শিলিগুড়িতে নিয়ে আসে ওই চার যুবক। পরে তাঁদের নিষিদ্ধপল্লিতে বিক্রি করে দেয়। তাঁরা সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করেও বেরোতে পারেননি। তাঁদের ঘরবন্দি করে রেখে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ অবশ্য নিষিদ্ধপল্লি থেকে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। শিলিগুড়ি পুলিশের এক কর্তা বলেন, “নিষিদ্ধপল্লির কারা তরুণীদের জোর করে আটকে রেখে দিয়েছিল তা তদন্ত করা হবে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।”
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই চার যুবক একটি চক্র গড়ে দীর্ঘদিন ধরে নারী পাচারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। রিকশা চালানোর কাজ করার সঙ্গে তারা বিভিন্ন গ্রামের গরিব মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে কাউকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আবার কাউকে বিভিন্ন কাজের প্রলোভন দেখিয়ে নিষিদ্ধপল্লিতে পাচার করত ওই যুবকেরা। |