সরকার আসে, সরকার যায়। কিন্তু কোনও মন্ত্রী স্রেফ হাতে নির্দেশ লিখে নোট দিয়ে আগেকার সরকারের জারি করা বিজ্ঞপ্তি খারিজ করে দিতে পারেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠল কলকাতা হাইকোর্টে। প্রশ্ন উঠল নতুন মন্ত্রীর এক্তিয়ার নিয়েই। বিভিন্ন ক্লাবকে উন্নয়ন খাতে টাকা দেওয়া নিয়ে ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের একটি নোটকে কেন্দ্র করেই এই সব প্রশ্ন উঠেছে।
কিছু দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ১২০০ ক্লাবের হাতে দু’লক্ষ করে টাকা তুলে দেন। ক্লাবের উন্নয়নের জন্যই ওই অনুদান দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে আটটি ক্লাব হাইকোর্টে মামলা করে। বুধবার সেই মামলার শুনানির সময় বিভিন্ন ক্লাবের পক্ষে আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও দেবাশিস সাহা জানান, ২০১১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। তাতে বলা হয়, ১০৮টি ক্লাবের উন্নয়নের জন্য মোট ৪৮ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা দেওয়া হবে। বিভিন্ন ক্লাবকে তা জানিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু ১১টি ক্লাব ছাড়া কেউই সেই টাকা পায়নি। তার পরে সরকার বদল হয়েছে। নতুন সরকার যে-সব ক্লাবকে টাকা দিয়েছে, সেই তালিকায় কিন্তু আগেকার বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী টাকা না-পাওয়া অনেক ক্লাবেরই নাম নেই।
সুব্রতবাবু ও দেবাশিসবাবু জানতে চান, এই খাতে আগেকার সরকারের বরাদ্দ করা টাকা কোথায় গেল? তালিকাভুক্ত ক্লাবগুলি টাকা পেল না কেন? রাজ্য সরকারের পক্ষে জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এটা গত আর্থিক বছরের ঘটনা। হয় টাকা দেওয়া হয়েছে অথবা টাকা ফেরত গিয়েছে। সরকারের বরাদ্দ করা টাকা হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে না।
তার পরেই আবেদনকারীদের তরফে নতুন ক্রীড়ামন্ত্রী মদনবাবুর একটি নোট আদালতে জমা দেওয়া হয়। গত ১৭ জানুয়ারি ওই নোটে লেখা হয়েছে, ১০৮টি ক্লাবকে টাকা দেওয়ার ব্যাপারে যে-বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল, তা খারিজ করা হল। নতুন ব্যবস্থায় ১২০০ ক্লাবকে দু’লক্ষ করে টাকা দেওয়া হবে। নতুন ক্রীড়ামন্ত্রী নোটটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠান। ২৪ জানুয়ারি রাজ্য সরকারের সহকারী সচিব গৌতম বিশ্বাস একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেন, বিভিন্ন ক্লাবকে দেওয়ার জন্য ১১ কোটি টাকা ২৬ লক্ষ মঞ্জুর করা হয়েছে। আবেদনকারীদের আইনজীবীদের প্রশ্ন, এক জন মন্ত্রী নোট দিয়ে পূর্ববর্তী সরকারের জারি করা বিজ্ঞপ্তি খারিজ করতে পারেন কি? নতুন মন্ত্রীর এক্তিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে হলফনামা দিয়ে বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে জানানোর জন্য সরকারকে নির্দেশ দেন বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত। |