পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ নিয়ে রাজ্য বিধানসভায় ‘নতুন বিল’ আনছে সরকার। বুধবার নন্দীগ্রামে এক প্রকাশ্যে সভায় ওই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “মা-বোনেরা যাতে ভাল ভাবে কাজ করতে পারেন, যাতে তাঁরা অগ্রাধিকার পান, সে জন্য তাঁদের জন্য ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ করে দেব। এটা সরকারের পক্ষ থেকে বলে গেলাম। মা-বোনেদের সম্মান দিতে আমাদের নতুন বিল আনতে হচ্ছে।”
তার আগেই মমতা বলেন, “সংখ্যালঘুদের এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক করে দেব। তার জন্য নতুন করে সমীক্ষাও হচ্ছে।”
মুখ্যমন্ত্রী ওই ঘোষণায় ‘বিস্মিত’ বিরোধী দলনেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য ৫০% সংরক্ষণের কথা, মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের কথা বলেছেন। বামফ্রন্টের আমলেই তো এ সব হয়ে গিয়েছে! বামফ্রন্ট আমলেই পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য ৫০% সংরক্ষণের বিল পাশও হয়েছে। এখন উনি বলছেন, উনি করবেন! তা হলে তো আবার ওঁকে বিল আনতে হবে! নতুন ভাবে কী করে বিল আনেন দেখি!”
বিরোধী দলনেতার কথায় এই ইঙ্গিত স্পষ্ট যে, মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণা নিয়ে ‘বিতর্কের’ অবকাশ থাকছে। আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। সেই অধিবেশনে সরকার বিল আনলে বিরোধীরা কী করেন, তা-ও দেখার।
কৃষিজমি রক্ষার আন্দোলনের শহিদদের স্মরণ কর্মসূচিতে নন্দীগ্রামে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে ‘কৃষি-রত্ন’ পুরস্কার চালুর কথাও ঘোষণা করেছেন। ব্লকের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ফলনের সাফল্য যে কৃষিজীবীর, তাঁকেই আগামী বছর থেকে ওই পুরস্কার দেওয়া হবে। রাজ্যে এই মুহূর্তে ব্লকের সংখ্যা ৩৪১। সেই হিসাবে ৩৪১ জন ওই পুরস্কার পাবেন। প্রসঙ্গত, ১৪ মার্চ, নন্দীগ্রামের শহিদ-দিবসকে আগেই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য জুড়ে ‘কৃষক-দিবস’ হিসাবে পালনের ঘোষণা করেছিলেন। এ বার যোগ হল পুরস্কার। |
কৃষিজমি রক্ষা আন্দোলন-পর্বে পাঁচ বছর আগে এই ১৪ মার্চে পুলিশি গুলি-চালনায় ১৪ জন নিহত হন নন্দীগ্রামে। পরের বছর থেকেই দিনটিতে ‘শহিদ-স্মরণ’ কর্মসূচি পালন করে আসছে তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন নন্দীগ্রামের ভূমি-উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। এদিনও সোনাচূড়া, গোকুলনগরে শহিদবেদী তৈরি করে স্মরণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। বিকেলে নন্দীগ্রাম কলেজ-মাঠে আনুষ্ঠানিক সভার আয়োজন করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এই প্রথম নন্দীগ্রামে এলেন মমতা। জানুয়ারিতে দিঘার সৈকত-উৎসবে নন্দীগ্রামকে স্বাস্থ্যজেলা করার ঘোষণা করে গিয়েছিলেন তিনি। এদিন সেই ‘স্বাস্থ্যজেলা ভবন’ এবং ‘সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ভবনে’র শিলান্যাস করেন তিনি। নন্দীগ্রামের হরিপুরে প্রস্তাবিত কৃষি-বাজারের (সব্জি মান্ডি) শিলান্যাস করান নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরের শহিদ পরিবারের সদস্যদের হাত দিয়ে। উপস্থিত ছিলেন সিঙ্গুরে নিহত তাপসী মালিক ও রাজকুমার ভুলের বাবা-মা।
সে বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রীকে ‘কটাক্ষ’ করেছেন বিরোধী দলনেতা। সূর্যবাবু বলেন, “উনি নন্দীগ্রামে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরির কথা বলেছেন। সেই হাসপাতালে চিকিৎসক পাবেন কিনা, সে কথা তাঁকে আগে ভাবতে হবে। রাজ্যে আরও যে সব হাসপাতাল রয়েছে, সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নেই। সে দিকে ওঁর নজর দেওয়া উচিত।” সব্জি মাণ্ডি প্রসঙ্গে সূর্যবাবু বলেন, “এ সব না-বলে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় ওঁর দলের লোকেরা যে সব রাস্তা খুঁড়েছিলেন, সেতু ভেঙেছিলেন, সে গুলি সারানো ও নতুন করে তৈরির ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর নজর দেওয়া উচিত। কারণ, নন্দীগ্রামে ওঁদের পঞ্চায়েত। রাজ্যেও ওঁদের সরকার। উন্নয়নমূলক কাজ না করে উনি সত্যের অপলাপ করছেন!” উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার কারণে মাইক বাজানোয় বিধিনিষেধ থাকায় পরীক্ষা শেষের পর বিকেলে কাপড়ের ঘেরাটোপে কলেজ-মাঠে বক্তৃতা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মাইকের বদলে সাউন্ডবক্স ছিল। পরীক্ষার কারণে এ বারের অনুষ্ঠান ‘ছোট’ করে হচ্ছে উল্লেখ করে পরের বার থেকে ‘বড়’ করে দিনটি পালনের কথাও জানান মমতা। সেই সূত্রেই জানান ‘কৃষি-রত্ন’ পুরস্কার চালু করারও কথাও।
নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলনে নিহত-নিখোঁজ ২৪ জনের নিকটাত্নীয়ের হাতে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহহিল থেকে তিন লক্ষ করে টাকা দেওয়া হয়। সিঙ্গুরের ১৪টি পরিবারকেও এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়। ১৪ মার্চের ঘটনায় নিহতদের পরিজনেরা আগেই আদালতের নির্দেশে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। এ দিন তৃণমূল দলীয় ভাবে তাঁদের ২৫ হাজার টাকা করে সাহায্য করে। ১৮ জনের হাতে কিষাণ ক্রেডিট-কার্ড, ২৯ জন ভূমিহীনের হাতে জমির পাট্টাও তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। দু ’টি স্কুলের ৩০০ পড়ুয়ার জন্য মেধাবৃত্তি বাবদ অর্থও প্রধান শিক্ষকদের হাতে দেন তিনি। নন্দীগ্রামে স্টেডিয়াম, জেলিংহ্যাম, নয়াচরে শিল্প গড়ারও কথাও ফের ঘোষণা করেন মমতা। |