|
|
|
|
 |
এ রাজ্যের জন্য দীনেশ ‘যথাসাধ্য’ দরাজ
শঙ্খদীপ দাস ও অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
|
ভাড়া বাড়ানোর প্রশ্নে দলনেত্রীকে খুশি করতে না পারলেও পূর্বসূরির ঘোষিত প্রকল্পগুলিতে ‘যথাসম্ভব’ অর্থ বরাদ্দেরই চেষ্টা করেছেন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী।
ভোট বছরে বাংলার জন্য কল্পতরু হয়েছিলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তুলনায় আজকের প্রাপ্তির ঝুলি কিছুটা হালকা। তবে মমতার ঘোষিত প্রকল্পগুলির জন্য ‘যথাসাধ্য’ দরাজ দীনেশের বাজেট। কোষাগারে টান থাকা সত্ত্বেও শুধু কলকাতা মেট্রো ও সার্কুলার রেলের জন্যই বরাদ্দ করা হয়েছে চার হাজার কোটি টাকার বেশি। আর সেই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য ঘোষণার মধ্যে রইল নৈহাটিতে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মরণে একটি নতুন কোচ টার্মিনাল, শ্যামনগরে রেল কারিগরি কারখানা ও রাজ্যের উপযুক্ত স্থানে ৭২ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ার প্রস্তাব। পাশাপাশি রাজ্যকে ১৩টি নতুন এক্সপ্রেস ট্রেনও উপহার দিয়েছেন দীনেশ। শহরতলিতে লোকাল ট্রেনের ৪৪টি ও মেট্রো রেলের ৫০টি যাত্রা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। তবে কলকাতা ও তার সংলগ্ন প্রকল্পগুলি যে হারে বরাদ্দ পেয়েছে, সেই তুলনায় কম বরাদ্দ পেয়েছে বাকি বাংলার প্রকল্পগুলি।
বস্তুত রেলের তীব্র অর্থসঙ্কটের কথা আজ বাজেট বক্তৃতায় বারবারই তুলে ধরেছেন রেলমন্ত্রী। তা সত্ত্বেও কলকাতার মেট্রো প্রকল্পগুলির জন্য কার্পণ্য করেননি রেলমন্ত্রী। গত বছর রেল বাজেটে কলকাতার মেট্রো সম্প্রসারণে সাড়ে ছয় হাজার কোটি বরাদ্দ করেছিলেন মমতা। আর দীনেশ ওই প্রকল্পগুলিতে বরাদ্দ করেছেন ৪ হাজার ৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে দমদম থেকে নোয়াপাড়া হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রো রেল সম্প্রসারণের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। জোকা থেকে মাঝেরহাট হয়ে বিবাদী বাগ পর্যন্ত মেট্রো রেল সম্প্রসারণে বরাদ্দ হয়েছে ৭৫০ কোটি টাকা। তা ছাড়া নোয়াপাড়া থেকে বিমানবন্দর হয়ে বারাসত এবং বিমানবন্দর থেকে রাজারহাট হয়ে নিউ গড়িয়া পর্যন্ত মেট্রো রেল সম্প্রসারণের জন্য ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বরানগর থেকে দক্ষিণেশ্বর ও ব্যারাকপুর পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৬০২ কোটি টাকা। বাজেট বক্তৃতায় দীনেশ এ-ও বলেছেন, কলকাতার মেট্রো রেল সম্প্রসারণ প্রকল্পগুলির কাজ সন্তোষজনক ভাবেই এগোচ্ছে।
তবে মমতার প্রস্তাবিত রেল কারখানাগুলির সম্পর্কে দিশা দেখাতে পারেননি দীনেশ। তা সে নোয়াপাড়ায় রেল কোচ মেরামত কারখানাই হোক বা রেল লাইন পাততে উলুবেড়িয়ার স্বয়ংক্রিয় রেল কারখানা। রেল মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, আসলে রেলের অনটনের কথা মাথায় রেখেই এই সব প্রকল্পগুলি সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে করার কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী। কিন্তু বেসরকারি বিনিয়োগ যে আসছে না, তা-ও এখন স্পষ্ট। আর সেই কারণেই ওই কারখানাগুলির জন্য আজকের রেল বাজেটেও কোনও দিশা নেই। কাঁচরাপাড়ায় রেলের ওয়ার্কশপের জন্য মাত্র ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আর ৭৬০ কোটি টাকা খরচ করে যে রেল কোচ কারখানা তৈরি হওয়ার কথা কাঁচড়াপাড়ায়, সেখানেও বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ১০ কোটি টাকা। অন্য দিকে ডানকুনিতে প্রস্তাবিত রেল কারখানাটির জন্যও গত বারের ৩৮ কোটি টাকার তুলনায় বরাদ্দ কমিয়ে ২২ কোটি টাকা করা হয়েছে এ বার।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কেন্দ্র ব্যারাকপুরের শ্যামনগরে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে বৈদ্যুতিক ট্রেনের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ‘প্রপালশন ব্যবস্থা’ তৈরির কারখানা গড়ার কথা আজ ঘোষণা করেন রেলমন্ত্রী। সেই সঙ্গে নৈহাটিতে কোচ টার্মিনাল গঠনের কথাও ঘোষণা করেছেন। প্রশ্ন উঠে গেল বাংলার অন্যান্য রেল প্রকল্প রূপায়ণের গতি নিয়েও। যেমন লক্ষীকান্তপুর-নামখানা-কাকদ্বীপ-বুড়াখালি রেল প্রকল্পের জন্য গত বাজেটে বরাদ্দ হয়েছিল ৩৭৭ কোটি টাকা। এ বার মাত্র ৩০ কোটি। তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর নতুন লাইনের জন্য গত বছর বরাদ্দ হয়েছিল ৪৬১ কোটি টাকা। এ বছর হয়েছে ৬৫ কোটি। অথচ এই প্রকল্প শেষ করতে এখনও ৯৯৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। একই ভাবে বরিয়ারপুর-খড়গপুর, রামপুরহাট-মন্দারহিল, তারকেশ্বর-মগড়া, হাসনাবাদ-হিঙ্গলগঞ্জের মতো নতুন রেল লাইন পাতার প্রকল্পগুলিতে গত বারের তুলনায় নগন্য বরাদ্দ হয়েছে। বরাদ্দ কমেছে রেলের ‘ডাবলিং’ প্রকল্পগুলিতেও।
অন্য দিকে রেল মন্ত্রকের এক কর্তা জানালেন, এটা ঠিকই যে গত বারের তুলনায় বাংলা হয়-তো এ বার কিছুটা কম পেল। তবু রাজ্যওয়াড়ি প্রাপ্তি বিচার করলে দেখা যাবে এই নিয়ে টানা তিন বছর প্রাপ্তি-তালিকার শীর্ষেই রইল পশ্চিমবঙ্গ। |
|
|
 |
|
|