বছর কয়েক ধরে প্রত্যাশাটা জিইয়ে রেখেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ক্রমান্বয়ে ধাক্কা খেতে খেতে তাঁর এখন বুঝে গিয়েছেন সীমান্তের এই শহরে আর যাই হোক। রেলের চাকা ঘোরার সম্ভাবনা নেই।
বুধবার তাই আর পাঁচটা দিনের মতোই পাড়ার মোড়, বটতলার ছায়া কিংবা চায়ের দোকানের আড্ডায় মানুষজন সযত্নেই এড়িয়ে গিয়েছেন রেল সংক্রান্ত কোনও আলোচনা। স্থানীয় এক যুবকের কথাতেই তা স্পষ্ট ধরে পড়েছে, “রেল বাজেট নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ কী বলুন, করিমপুরে তো আর ট্রেন চলবে না!” তাই টিভি কিংবা রেডিও-য় কান পেতে বাজেট নিয়ে উৎসাহ চোখে পড়েনি কোথও-ই।
করিমপুর উদ্যান ও কৃষি কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বিশ্বনাথ বিশ্বাস গত কয়েকবছর থেকে রেল বাজেটের দিন বাড়িতে টিভির সামনে পেন নোট বই নিয়ে বসেন। করিমপুরের কপালে কিছু জুটল কিনা শুধু এইটুকু শোনার জন্য তিনি একমূহূর্তের জন্য অন্যমনস্ক হতেন না বিশ্বনাথবাবু। এ বার আর সে পথ মাড়াননি তিনি। গলায় রীতিমত আক্ষেপের সুরে তিনি বলছেন,‘‘কী হবে কান পেতে? কোন লাইনে ক’টা ট্রেন বাড়ানো হল, কিংবা ডবল লাইনের জন্য কত টাকা বরাদ্দ হল শুনে কী করব বলুন তো! যাদের এলাকায় অন্তত রেললাইন আছে তারা শুনুক বাজেট। এখানে লাইনই নেই তো ট্রেন!” গত কয়েক বছর ধরেই কানাঘুষো চলছিল কৃষ্ণনগর-বহরমপুর্ ভায়া চাপড়া করিমপুর পৌঁছবে রেল। শহরে সে কথা ছনিয়ে পড়েছিল কয়েক বছর ধরেই। স্বপ্ন দেখার শুরু সেখান থেকেই। কিন্তু সে সমীক্ষাও হয়নি, মাপজোকও থেকে গিয়েছে কল্পনা। ধীরে ধীরে অভিমানে মানুষ তাই ভুলতেই চেয়েছেন রেলপথের স্বপ্ন।
সীমান্তবর্তী এলাকার পান চাষিদের স্বার্থে ১৯৮৪ সাল থেকে করিমপুরে রেল পথের দাবি উঠেছিল প্রথম। দাবি ছিল, করিমপুরে রেলপথ হলে স্থানীয় পান খুব সহজেই রফতানি করা যেত। যা পাল্টে দেবে এলাকার অর্থনৈতিক পরিকাঠামোও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয়বার রেলমন্ত্রী হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের আশা আরও বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সে আশায় প্রতিবারই ‘ছাই’ পড়তে থাকায় এ বার আর আসা নয় বরং রেলের স্বপ্ন ভুলে যেতেই চেয়েছেন বিশ্বনাথবাবুরা। করিমপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিধান দত্ত-ও বিরক্ত। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বারের মতো এ বারের বাজেটেও করিমপুরে ট্রেন চলা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি রেলমন্ত্রী। ও নিয়ে আর বাবছি না।”
তবে কাজ যে কিছুই হয়নি এমন কথা অবশ্য মানতে নারাজ করিমপুর ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি চিররঞ্জন মণ্ডল। তিনি আশ্বস্ত করছেন, “এ বারের রেল বাজেটে করিমপুর নিয়ে নতুন করে বলার তো কিছু নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময়েই কৃষ্ণনগর-বহরমপুর ভায়া চাপড়া-করিমপুর রেলপথের কথা ঘোষণা করেছিলেন। ওই প্রকল্পের জন্য টাকাও বরাদ্দ হয়েছিল। প্রস্তাবিত সেই রেলপথের সমীক্ষাও হয়েছে। কাজও চলছে পুরোদমে। ফলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।’’
কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে ওই রেল পথের জন্য? কবেই বা সমীক্ষা হল? ‘পুরোদমে’ সে কাজ হচ্ছে কোথায়? করিমপুর অবশ্য তা জানে না। |