মুর্শিদাবাদ জেলার জন্য ২০১২ সালের রেল বাজেট থেকে প্রাপ্তির ঘর প্রায় শূন্য। ফলে জেলার তিন সাংসদ থেকে রেলযাত্রী সমিতির কর্তারা ক্ষুব্ধ।
মুর্শিদাবাদ জেলায় রয়েছে পূর্ব রেলের তিনটি বিভাগ। দুটি রেললাইন। ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ে রয়েছে রেলের হাওড়া বিভাগের কাটোয়া-আজিমগঞ্জ ও মালদহ বিভাগের আজিমগঞ্জ-ফরাক্কা শাখা। ভাগীরথীর পূর্বপাড়ে রয়েছে রেলের শিয়ালদহ বিভাগের লালগোলা-কৃষ্ণনগর শাখা। এ ছাড়াও লালগোলা-কৃষ্ণনগর শাখার নশিপুর স্টেশন এবং কাটোয়া-আজিমগঞ্জ শাখার আজিমগঞ্জ স্টেশনের মধ্যবর্তী এলাকায় ভাগীরথী নদীর উপর সেতু নির্মান করে রেলের ওই দুটি বিভাগের সংযুক্তি সাধনের কাজ চলছে। ২০০৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর নশিপুরের কাছে ভাগীরথী পাড়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৎকলীন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব প্রস্তাবিত ওই সেতুর শিলান্যাস করেন। নির্মাণ কাজ শেষ করে ওই সেতু দিয়ে ২০০৭ সালের মধ্যে ট্রেন চালাবেন বলে ওই শিলান্যাস অনুষ্ঠানে তৎকলীন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব ঘোষণা করেছিলেন। প্রতিশ্রুতির সময় সীমা পার হয়ে যাওয়ার পরও ৫ বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু ওই সেতু দিয়ে আজও ট্রেন চালানো যায়নি। |
স্থানীয় সাংসদ মান্নান হোসেন বলেন, “নির্মীয়মাণ ওই সেতুর সঙ্গে দু’ পাশের সংযোগকারী মাত্র দেড় কিলোমিটার রাস্তা আজও নির্মাণ হয়নি। এমনকী সদ্য পেশ করা রেল বাজেটেও ওই বিষয়ে কোনও রকম উচ্চবাচ্য করা হয়নি।” বহরমপুর শহরের বুক চিরে চলে দিয়েছে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে সংযোগকারী ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। বহরমপুর শহরের ঢোকার মুখে পঞ্চাননতলায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কটি চলে গিয়েছে লালগোলা-কৃষ্ণনগর শাখার রেললাইনের উপর দিয়ে। সেখানে রেলের ওভার ব্রিজ না থাকায় যানজটে সড়ক পথের দুরপ্লালা থেকে স্বল্পপাল্লার যাত্রীদের নাজেহালের অন্ত নেই। ফলে ওই রেলসেতু নির্মাণের জন্য কয়েক বছর ধরে সব দলের পক্ষ থেকেই দাবি তোলা হয়েছে। মান্নান হোসেন বলেন, “অতি জরুরি ওই ওভার ব্রিজের বিষয়েও বর্তমান রেল বাজেটে উচ্চবাচ্য করা হয়নি। অথচ রাজ্য সরকার, পূর্ত দফতর ও রেল দফতর বর্তমানে একই দলের। ফলে ওই রেলসেতু নির্মান করার এটিই ছিল আদর্শ সময়।”
২০০৯ সালের রেল বাজেটে প্রস্তাবিত কৃষ্ণনগর-চাপড়া-করিমপুর-জলঙ্গি-বহরমপুর রেলপথের অনুমোদন করেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই থেকে এ পর্যন্ত পেশ করা তিনটি রেল বাজেটের কোনওটিতেই প্রস্তাবিত ওই রেলপথের জন্য একটি পয়সাও বরাদ্দ করা হয়নি। কাটোয়া-ফরাক্কা শাখা, পলাশি-জিয়াগঞ্জ শাখাতেও ডবল লাইনের বিষয়ে এ বারের রেল বাজেটে উচ্চবাচ্য করা হয়নি। সাংসদ অধীর চৌধুরী ও রাজ্যসভার সাংসদ মইনুল হাসান বলেন, “মুর্শিদাবাদ জেলার জন্য এ বারের বাজেটে নতুন কিছু বরাদ্দ করা হয়নি। ফলে জেলার মানুষ হতাশ।” ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ের রেলপথের যাত্রী সমিতির কর্মকর্তা মিলন রায়ের আক্ষেপ, “ফরাক্কা-জঙ্গিপুর-আজিমগঞ্জ-কাটোয়া শাখায় দিনের বেলায় সকালের দিকে কলকাতায় পৌঁছনোর জন্য কোনও ট্রেন নেই। দীর্ঘ দিনের ওই দাবি পূরণ করতে এ বারের রেল বাজেটেও সকাল ১০টা নাগাদ কলকাতা পৌঁছনোর জন্য কোনও ট্রেন বরাদ্দ করা হয়নি। ওই শাখার রেললাইনের বৈদ্যুতিকীকরণ ও ডবল লাইন করা ব্যাপারেও কোনও প্রত্যাশা নেই এ বারের বাজেটে।” |