|
|
|
|
সঙ্কটে সারস্বত-কেন্দ্র ৪... |
জঙ্গলমহলে গ্রন্থাগার তৈরিতে নতুন প্রকল্প |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সব গ্রন্থাগারের উন্নয়নের দাবি যেমন রয়েছে, তেমনই জঙ্গলমহলের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণেরও দাবি উঠেছে। আর এই কারণেই একটি প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করেছে জেলা প্রশাসন। যার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। সেই প্রকল্প রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে।
কী রয়েছে সেই প্রকল্পে? জেলার মাওবাদী প্রভাবিত ১১টি ব্লকের প্রতিটিতে একটি করে লাইব্রেরি-কাম-স্টুডেন্ট ডে-হোম তৈরির প্রস্তাব তৈরি করেছে জেলা প্রশাসন। প্রতিটির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ লক্ষ টাকা। বর্তমানে জঙ্গলমহল এলাকায় রয়েছে ৫টি শহর গ্রন্থাগার ও ৪৮টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার। তাদের পরিকাঠামো উন্নয়নেও প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। ৫টি শহর গ্রন্থাগারের জন্য ২০ লক্ষ করে ১ কোটি টাকা ও ৪৮টি গ্রামীণ গ্রন্থাগারকে ১০ লক্ষ টাকা করে মোট ৪ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। তার বাইরে আরও ৫৭টি গ্রন্থাগার স্থাপনের কথাও বলা রয়েছে রিপোর্টে। যার জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে খরচ ধরা হয়েছে। অর্থাৎ ৫ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। শহর ও গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলির জন্য বিভিন্ন ক্লাসের পাঠ্যবই ও কেরিয়ার গাইডেন্স বিষয়ে বই কেনার জন্য অতিরিক্ত ১২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। এর বাইরে রয়েছে কয়েকটি বিশেষ গ্রন্থাগারে জেরক্স মেশিন দেওয়া, কম্পিউটর ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া, জেলা গ্রন্থাগারে ফের মোবাইল ভ্যানের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রন্থাগারে বই পৌঁছনোর ব্যবস্থা চালুর ভাবনাও। ঐতিহাশালী রাজনারায়ণ বসু স্মৃতি পাঠাগারের উন্নয়নেও বিশেষ প্রকল্পখাতে যাতে ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়, তারও আবেদন করা হয়েছে।
গ্রন্থাগার নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই রাজ্য সরকার উদাসীন ছিল বলে অভিযোগ। ফলে গ্রন্থাগার থাকলেও মানোন্নয়ন হয়নি। উল্টে হাল আরও খারাপ হয়েছে। ফলে গ্রন্থাগার-বিমুখ হচ্ছেন মানুষ। অথচ সংস্কৃতির আদান-প্রদান ও সুস্থ সংস্কৃতির প্রসারের লক্ষ্যেই গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠা। তা-ও অবহেলায় ধুঁকছে। এ বার সেই গ্রন্থাগাগুলিকেই ফের সজীব করায় উদ্যোগী হচ্ছে প্রশাসন। যদিও সবই নির্ভর করছে রাজ্য সরকারের উপরে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা গ্রন্থাগারিক ইন্দ্রজিৎ পান বলেন, “আমরা সব দিক দিয়েই উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারি সাহায্য পেলেই গ্রন্থাগারের হাল বদলে যাবে।” আবার মানুষ গ্রন্থাগারমুখী হবেন বলেও তাঁর অনুমান।
প্রায় নিয়মিত গ্রন্থাগারে যান সুদীপ্ত মাইতি। তাঁর কথায়, “সত্যি বলতে কী, গ্রন্থাগারে নতুন বই পাওয়াই যায় না। আমি নিয়মিত যাওয়ার চেষ্টা করি শুধু খবরের কাগজ পড়ার জন্য। বাড়িতে বড়জোর একটি সংবাদপত্র কিনতে পারি। কিন্তু লাইব্রেরিতে অনেকগুলি কাগজ পড়ার সুযোগ পাওয়া যায়।” কিন্তু গ্রন্থাগার কি কেবল খবরের কাগজ পড়ার জায়গা? শিক্ষক সান্তাশিস ভুঁইয়ার মতে, “গ্রন্থাগারকে সাধারণ মানুষ ও যুবসমাজের কাছে আকর্ষণীয় করার জন্য নতুন নতুন বই রাখতে হবে। যে বই সদ্য প্রকাশিত হয়েছে, তা-ও যদি গ্রন্থাগারে পাওয়া যায়, তা হলে মানুষের আকর্ষণ বাড়বে। কিন্তু সেই ধরনের উদ্যোগ কোথায়!”কলেজ পড়ুয়া মুনমুন ঘোষের মতে, “রেফারেন্স বই চাইতে গেলেই বলে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যাবে না। গ্রন্থাগারে বসে সব কাজ করা কি সম্ভব! দু’এক দিনের জন্যেও বাড়িতে বই নিয়ে যেতে দিলে ভাল হয়। না হলে গ্রন্থাগার থেকেই বা কী লাভ!”
গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের মতে, গ্রন্থাগারের কর্মী থাকলে, পরিকাঠামো উন্নত হলে পাঠকদের সব দাবিই পূরণ করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে কেউ বই ফেরৎ না দিলে সাইকেল পিওন পাঠিয়ে বই সংগ্রহ করেও নিয়ে আসা যায়। কিন্তু পরিকাঠামো না থাকলে কে সেই ঝুঁকি নেবে? তাই বর্তমান সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের আশায় দিন গুনছে গ্রন্থাগারগুলি। জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক ইন্দ্রজিৎ পানের কথায়, “আধুনিক যুগের উপযোগী করে গ্রন্থাগারের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। সেই ইচ্ছে নিয়েই সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। নতুবা গ্রন্থাগারকে মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করা সম্ভব নয়।” |
(শেষ) |
|
|
|
|
|