ঢাকার টিম হোটেলের লবিতে দৃশ্যটা তো চোখের সামনেই ঘটছে। কিন্তু তখনও যেন অনেকের বিশ্বাস হচ্ছে না। ম্যাচ জেতার পর দিন এমনিতে অঘোষিত ছুটির মেজাজ ভারতীয় শিবিরে। প্র্যাক্টিসে যেতে পারো, নাও যেতে পারো। তোমাদের ইচ্ছা। তা লবিতে নামতে দেখা গেল মাত্র দু’জন ক্রিকেটারকে। ইউসুফ পাঠান এবং রাহুল শর্মা। এর একটু পরে কোচ ডানকান ফ্লেচার এবং অন্যান্য সাপোর্ট স্টাফ। নতুন বোলিং কোচ জো ডস যোগ দিয়েছেন সোমবার গভীর রাতে। তিনি এলেন। বেশ শক্তপোক্ত চেহারার লোক। সাড়ে একচল্লিশ বছর বয়স। কুইন্সল্যান্ডের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেছেন মিডিয়াম পেসার হিসেবে। কিন্তু তার চেয়েও যেটা আকর্ষণীয়, সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মী হিসেবে নানা রকম রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সাক্ষী।
কিন্তু বুধবার দুপুরে নয়া বোলিং কোচ কোনও চমকই নয়। চমক হলেন তাঁর পিছু পিছু প্র্যাক্টিসে যাবেন বলে নেমে আসা তৃতীয় ভারতীয় ক্রিকেটার। সচিন রমেশ তেন্ডুলকর। দুপুরে তখন নিরাপত্তা কর্মীরা পর্যন্ত বলছেন, আজও রাজনৈতিক মিছিল আছে। রাস্তাঘাট না ফের আটকে যায়। সচিন তেন্ডুলকরের এ সবে কোনও আগ্রহ নেই। তিনি ক্রিকেট খেলতে এসেছেন পৃথিবীতে। ব্যাগপত্তর নিয়ে হাঁটা দিলেন গাড়ির দিকে। মিরপুরের মাঠে গিয়ে এর পর যে দৃশ্য দেখা গেল, অভিনব। সচিন ক্রিজে দাঁড়িয়ে পড়েছেন ব্যাট হাতে। বোলার বলতে কারা? |
না, দুই স্পিনার ইউসুফ পাঠান এবং রাহুল শর্মা। ভিডিও অ্যানালিস্ট হাত ঘোরাতে এলেন। ফিল্ডিং কোচ ট্রেভর পেনি বল ছুড়ে ছুড়ে ‘থ্রো ডাউন’ প্র্যাক্টিস দিলেন। আর কুইন্সল্যান্ডের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা থাকা জো ডস। বহু কাল পরে ভারতীয় দলে এক জন সক্রিয় বোলিং কোচ এলেন। যিনি দূরে দাঁড়িয়ে শুধু থিওরি দিয়ে চলে যাবেন না, নিজে নেটে বোলিং করতেও নেমে পড়বেন।
কিন্তু ওই যে বললাম, ডস আজ পার্শ্ব চরিত্রই। মুখ্য চরিত্র তিনি সচিন তেন্ডুলকর। রাহুল শর্মাকে একটা তুলে মারলেন। তরুণ স্পিনার দাবি করতে থাকলেন, এটা ক্যাচ হয়ে যাবে। আউটের কথা শুনলে সচিন তেন্ডুলকর কী রকম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারেন আবার বোঝা গেল। “বলিস কী রে! তোর কী মাথা-টাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি?” রাহুল শর্মা তবু গাঁইগুই করতে থাকলেন। কোথায় কোথায় ফিল্ডিং থাকতে পারে সেটা বোঝাতে গেলেন সচিনকে। বোঝাতে গেলেন আর কাল করলেন। সচিন এর পর রাহুলের প্রায় প্রত্যেকটা বলই স্টেপ আউট করে মাঠের বাইরে ফেলতে থাকলেন। প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে ব্যাটিং করার পর ফ্লেচারকে ডেকে চলল আলোচনা। দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, রানের খরা চলতে পারে। সেঞ্চুরির খরা চলতে পারে। কিন্তু ক্রিকেট-খিদে আর পরিশ্রমের কোনও খরা আজও তাঁর মধ্যে নেই। কোনও সুরেশ রায়না বা রোহিত শর্মাকে কখনও দেখা যায় না, রান না পেলে আরও নিবিড় প্র্যাক্টিসে ডুবে যেতে।
কাহিনি তখনও শেষ হয়নি। এর পর রাহুল শর্মা ব্যাটিং করতে এলেন। সচিন প্যাড ছেড়ে বল হাতে নিয়ে নিলেন। শেষ কবে তাঁকে লেগস্পিন করতে দেখা গিয়েছে মনে করাই কঠিন। এমনকী প্র্যাক্টিসেও করেন না আজকাল। এখানে সেটাই করলেন।
রাহুল শর্মা যেন কী বোলিং করেন? লেগস্পিন! |