নিজস্ব সংবাদদাতা • পীযূষ নন্দী |
লাগাতার প্রচারে সামান্য হলেও কাজের গতি বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী টাকার জোগান নেই। ফলে, মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্ম সুনিশ্চিত প্রকল্প বা একশো দিনের কাজে শ্রমিকদের মজুরি মেটাতে সমস্যায় পড়ছে হুগলির বেশ কিছু পঞ্চায়েত। জেলার চারটি মহকুমার মধ্যে মূলত আরামবাগে এই নিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বাকি তিনটি মহকুমা চুঁচুড়া, চন্দননগর এবং শ্রীরামপুরের কয়েকটি জায়গাতেও টাকার জোগান দ্রুত স্বাভাবিক না হলে বিক্ষোভের আশঙ্কা করছেন পঞ্চায়েত প্রধানেরা।
আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “কয়েকটি পঞ্চায়েতে ঘেরাওয়ের খবর পেয়েছি। জেলা-স্তরে কথা বলেছি। সেখান থেকে চলতি সপ্তাহেই টাকা পাওয়ার আশ্বাস মিলেছে।” তবে, টাকা পেতে খুব বেশি দেরি হলে বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা। তহবিলের সমস্যা আছে বলে মেনে নিয়েছেন সদর মহকুমাশাসক জলি চৌধুরীও। তিনি বলেন, “কাজের গতি অনুযায়ী টাকা আসছে না।” চন্দননগরের মহকুমাশাসক ভি ললিতালক্ষ্মীর বক্তব্য, “বিষয়টি জেলা প্রশাসন দেখছে।” প্রকল্পের নোডাল অফিসার পুলক সরকার বলেন, “গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আমরা প্রকল্পের টাকা সদ্ব্যবহারের তথ্য (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) দিয়েছি রাজ্যে। তখনই অন লাইনে (ওয়েবসাইটে) দেখা যাচ্ছে, ৮৩ শতাংশ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। এবং অফ লাইনে (গ্রাম পঞ্চায়েতে এন্ট্রি করানো আছে কিন্তু ওয়েবসাইটে ঢোকানো হয়নি) ১০০ শতাংশ খরচ হয়ে গিয়েছে।” জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই দিনের পরেও প্রকল্পের কাজ হয়েছে এবং মজুরি বাবদ বকেয়া হয়ে গিয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু নতুন করে কোনও টাকা আসেনি।
হুগলির চারটি মহকুমায় ১৮টি ব্লকে ২০৭টি পঞ্চায়েত রয়েছে। অনেক পঞ্চায়েতেই ২০ লক্ষ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা মজুরি বাকি। মজুরি মেটানোর দাবিতে সোমবার আরামবাগ ব্লকের হরিনখোলা ১, গৌরহাটি ১, গোঘাট ১ ব্লকের কুমুড়শা ও ভাদুর পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ হয়েছে। একই চিত্র দেখা গিয়েছে খানাকুল ১ ও ২, পুড়শুড়া, গোঘাট ২ এবং তারকেশ্বর ব্লকের কয়েকটি পঞ্চায়েতে। ব্যাঙ্কের গাফিলতিতে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না মনে করে সোমবার সকালে হরিনখোলায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে তালা ঝুলিয়ে দেন গ্রামবাসীরা। পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ঘণ্টা দেড়েক পরে তালা খোলা হয়। গৌরহাটি ১ পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের পদ্মাবতী পাল আবার শ্রমিকদের মজুরি সংক্রান্ত সমস্যার জন্য নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কার কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন ব্লক প্রশাসনের কাছে। গোঘাট, খানাকুল, তারকেশ্বর, ধনেখালি-সহ বিভিন্ন জায়গার গ্রামবাসীদের দাবি ঢাকঢোল পিটিয়ে তিন মাস ধরে প্রচার চলছে, কাজের পরে ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে মজুরি মিলবে শ্রমিকদের। অথচ, এখন বলা হচ্ছে টাকা নেই।
বিধানসভা ভোট এবং তার পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতায় হুগলিতে ১০০ দিনের কাজ প্রায় থমকে গিয়েছিল। এই মুহূর্তে অবশ্য সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ব্যাপক প্রচারে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কাজের গতিও বাড়ছে। এখন মজুরির সমস্যা মিটলেই সেই গতি আরও বাড়বে বলে প্রশাসনের কর্তারা মনে করছেন। জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন বলেন, “শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে যে সমস্যা হচ্ছে, তা দু’-চার দিনের মধ্যেই কেটে যাবে।” |