দীর্ঘ ৪৮ বছর ভারতবাসের পরও ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের রায়ে জুটেছিল ‘বাংলাদেশি’ তকমা। তারপর ‘বিদেশি’ হয়ে প্রায় এক বছর কাটাতে হয়েছে শিলচর সেন্ট্রাল জেলে। গুয়াহাটি হাইকোর্টের রায়ে অবশেষে কাল জুটেছে জামিনে মুক্তি। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়েও চোখে জল মধ্য পঞ্চাশের রবীন্দ্র দাসের। মায়ের সঙ্গে আর দেখা হল না তাঁর। ৫ জানুয়ারি মারা গিয়েছেন তাঁর মা। প্যারোলে মুক্তির আর্জি জানানো হলেও আইনি জটিলতায় তা হয়ে ওঠেনি। আশা করেছিলেন, শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সে সুযোগও পাননি।
গত বছরের ২৯ এপ্রিল ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল কাছাড় জেলার কাটিগড়া থানার চণ্ডীনগরের রবীন্দ্র দাসকে ‘বাংলাদেশি’ বলে রায় দেয়। জামিনে মুক্তি পেয়ে কাগজপত্র দেখিয়ে রবীন্দ্রবাবু জানান, ১৯৬৪ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান থেকে শরণার্থী হয়ে তাঁরা এ দেশে এসেছিলেন। তখন তাঁর বয়স বড় জোর পাঁচ-ছয় বছর। বাবার নামে ‘রিফিউজি কার্ড’ রয়েছে। কিন্তু সেই কার্ডে আলাদা করে তাঁর কথা উল্লেখ না থাকাতেই কপালে জোটে দুর্ভোগ। তাই বাবা-মা, ভাইবোনদের ভারতীয় বলে মেনে নিলেও রবীন্দ্রকে পুলিশ ‘বাংলাদেশি’ বানিয়ে দেয়। পরে আদালতও তাঁকে ‘বিদেশি’ বলে রায় দেয়।
নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতি পাশে দাঁড়ানোয় বহু লড়াইয়ের পর অবশেষে জেল থেকে মুক্তি পেলেন রবীন্দ্রবাব। জামিনে মুক্তির আবেদন মঞ্জুর করেন গৌহাটি হাইকোর্টের বিচারক উজ্জ্বল ভুঁইয়া। তবে দু’টি শর্ত জুড়ে দেন। প্রথমত, দশ হাজার টাকার দু’জন জামিনদার লাগবে। দ্বিতীয়ত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া তিনি জেলার বাইরে যেতে পারবেন না। সব শর্ত মেনেই কাল জেল থেকে বেরিয়েছেন পাঁচ সন্তানের পিতা রবীন্দ্র দাস। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়ে বারবার শুধু বলছেন, ‘কাছাকাছি থেকেও শেষ বারের মতো মায়ের মুখটা দেখা হল না।’
নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থ জানিয়েছেন, জেলে নিয়ে যাওয়ার পর রবীন্দ্রর পরিবার তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আইনি দিকটা এখন তাঁরাই দেখভাল করছেন। প্যারোলে মুক্তির আর্জি খারিজের পর জামিন মঞ্জুরির ব্যাপারে দৌড়ঝাঁপ করেছেন। ট্রাইবুনালের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন হাইকোর্টে গৃহীত হয়েছে। তাঁদের যুক্তি, রবীন্দ্রর ছোট ভাই ধীরেন্দ্রর নামেও ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আদালত তাঁকে ভারতীয় ঘোষণা করে মামলা থেকে রেহাই দেয়। কিন্তু যত আপত্তি রবীন্দ্রর বেলায়। সাধনবাবুর প্রশ্ন, “বাবা-মা, ভাইবোন সবাই ভারতীয় হলে ছয় বছরের ছেলেটিকে কি তখন ছেড়ে এসেছিল সবাই।”
রবীন্দ্রবাবু জানান, গজালঘাটের কালারাম বর্মন এম ই স্কুলে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করেছেন, রয়েছে সেই প্রমাণপত্রও। ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিটি ভোটার তালিকায় তার নাম নথিভুক্ত রয়েছে। |