একদিনের জন্য হলেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে কোঝিকোড়ের পার্টি কংগ্রেসে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গেলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। বুধবার সকালে আচমকাই কারাট কলকাতায় আসেন। আলিমুদ্দিনে তাঁর সঙ্গে দলের পলিটব্যুরোর সদস্য বুদ্ধবাবুর দীর্ঘক্ষণ একান্ত আলোচনা হয়।
দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পার্টি কংগ্রেসে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করবেন কারাট। তার আগে সেই রিপোর্ট চূড়ান্ত করার জন্য আগামী ১৭-১৯ মার্চ দিল্লিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক বসছে। সেই বৈঠকেও না-থাকার কথা বুদ্ধবাবুর। দলীয় সূত্রের খবর, সাংগঠনিক রিপোর্ট নিয়ে বুদ্ধবাবুর সঙ্গে একান্তে কথা বলতেই প্রকাশ কলকাতায় এসেছিলেন। পাশাপাশিই তিনি পার্টি কংগ্রেসে অন্তত একদিনের জন্য হলেও বুদ্ধবাবুকে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তাঁর মতে, বুদ্ধবাবু গেলে পার্টি কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা উৎসাহ বোধ করবেন।
বৈঠকের পর কারাট বা বুদ্ধবাবু কেউই মুখ খোলেননি। ফলে কারাটের অনুরোধ মেনে বুদ্ধবাবু কেরলের কোঝিকোড়ে যাবেন কিনা, তা-ও স্পষ্ট নয়। তবে দলের একাংশের বক্তব্য, কারাটকে বুদ্ধবাবু তাঁর ‘অপারগতা’র কথাই জানিয়েছেন। আগামী ৪ এপ্রিল পার্টি কংগ্রেস শুরু। চলবে ৬ তারিখ পর্যন্ত। নিয়মানুযায়ী পার্টি কংগ্রেসের পর সিপিএমের নতুন পলিটব্যুরো তৈরি হবে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণ কমিটিতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে নতুন সদস্য নিয়েও বুদ্ধবাবুর মতামত নেন কারাট। রাজ্য থেকে এবার পলিটব্যুরোয় যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এবং রাজ্যসভার প্রার্থী তপন সেনের। তবে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পার্টি কংগ্রেসেই হবে।
নতুন কে বা কারা এ রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হতে পারেন, তা নিয়েও দুই নেতার মধ্যে কথা হয়। জ্যোতি বসু প্রয়াত। বিনয় কোঙার ও মহম্মদ আমিন সম্ভবত কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অবসর নেবেন। তাঁদের জায়গায় কোন নেতা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হতে পারেন, তা নিয়ে দলের জল্পনা চলছে।
কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ রাজ্যের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করবেন রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। শুদ্ধকরণের ব্যাপারে রাজ্য সিপিএম কতটা ‘সফল’ হয়েছে, তা নিয়েও কারাটের সঙ্গে আলোচনা হয় বুদ্ধবাবুর। সেই সূত্রে ধরে লক্ষ্মণ শেঠ, রাজদেও গোয়ালা, অনিল বসু ও অমিতাভ নন্দীদের মত নেতাদের রাজ্য কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয়। কথা হয় শিল্পায়নের নীতি নিয়েও। দলীয় সূত্রের খবর, বুদ্ধবাবু কারাটকে জানিয়েছেন, রাজ্যে ক্ষমতা ফিরে পেতে হলে আগামী দিনেও শিল্পায়নের নীতি নিয়েই সিপিএমকে এগোতে হবে।
বিশেষত, বুদ্ধবাবুর সঙ্গে আলোচনার জন্যই এদিন সকালে দিল্লি থেকে কলকাতায় আসেন কারাট। বুদ্ধবাবু সাধারণত আলিমুদ্দিনে যান রোজ সকালের দিকে। তখনই তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসেন কারাট। সিপিএম সূত্রের খবর, পার্টি অফিসে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর ঘরে দুই নেতার মধ্যে প্রায় দু’ঘন্টা একান্তে আলোচনা হয়। বৈঠকে কয়েকবার পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপম সেন এবং বিমানবাবু ঢুকলেও মূলত বৈঠক হয় বুদ্ধ-কারাটের মধ্যেই।
শারীরিক কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যাচ্ছেন না বুদ্ধবাবু। নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি পলিটব্যুরো থেকেও ‘অব্যাহতি’ চেয়েছিলেন। পার্টি কংগ্রেসের পর তিনি পলিটব্যুরোয় থাকেন কিনা, তা নিয়েও দলের অন্দরে কৌতূহল রয়েছে। তবে দলে তাঁর ‘প্রাসঙ্গিকতা’ যে কমেনি, কারাটের আলিমুদ্দিনে এসে বুদ্ধবাবুর সঙ্গে আলোচনা করা থেকেই স্পষ্ট।
সিপিএম নেতাদের একাংশ জানাচ্ছেন, দলের ভিতরের পাশাপাশিই দলের বাইরেও তাঁর ‘প্রাসঙ্গিকতা’ এখনও অটুট। নচেৎ, মুলায়ম সিংহ যাদব নিজে বুদ্ধবাবুকে ফোন করে তাঁর পুত্র, উত্তরপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের শপথ অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাতেন না। বুদ্ধবাবু অবশ্য শারীরিক কারণে সেই আমন্ত্রণও ফিরিয়েই দিয়েছেন। |