পশ্চিমবঙ্গের নানা জেলা-সহ বিভিন্ন রাজ্যে নিজেদের বীজ আলু পাঠাতে উদ্যোগী হয়েছে কালনার একটি সমবায়। বৈদ্যপুর এলাকার সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের (সিএডিপি) ‘ফারমারস্ সার্ভিস কোঅপারেটিভ সোসাইটি’ (এফএসসিএস) নামে এই সমিতির দাবি, চলতি বছরে তাদের উৎপাদিত আলুবীজের পরিমাণ ১৭ হাজার বস্তারও বেশি। এ রাজ্যের নানা জায়গায় তাদের তৈরি বীজের কদর বাড়ায় এ বার তাদের লক্ষ ভিন্ রাজ্যের বাজার।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উন্নতমানের বীজ যথেষ্ট পরিমাণে না পাওয়ায় অনেক সময়েই সমস্যায় পড়েন রাজ্যের আলুচাষিরা। চড়া দামে বীজ কিনতে হয় চাষিদের। বস্তাপিছু বীজের ভাড়া লাগে দু’শো-আড়াইশো টাকা। অনেক সময়ে খোলা বাজার থেকে বীজ কিনে প্রতারিতও হতে হয় তাঁদের। |
কালনার এই সমবায়ের তরফে জানানো হয়েছে, সাধারণ চাষে যেখানে ৯০ দিনে জমি থেকে আলু তোলা হয়, তাদের বীজের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে তা পাওয়া যায় ৭০ দিনেই। ২০১১ সালে এলাকায় তাদের প্রায় সাড়ে চার হাজার বস্তা বীজ আলুর চাষ হয়েছিল। বর্ধমান, হুগলি, বীরভূম, মেদিনীপুর-সহ কয়েকটি জেলায় সেই বীজ বিক্রিও হয়েছিল। ভাল ফলন ও ন্যায্য দাম পাওয়ায় উৎসাহ পেয়েছিলেন চাষিরাও। চাহিদা বাড়ায় চাষের এলাকাও বাড়িয়েছিলেন তাঁরা। চন্দ্রমুখী, জ্যোতি, সূর্য এবং অশোকা, এই চার ধরনের আলু বীজ চাষের জন্য জমি বরাদ্দ করা হয় ৮৭.৫৫ একর। তার মধ্যে বালিন্দর এলাকায় ৩৯.৮৫ একর, বিরূহাতে ২৫.৫ একর, অকালপৌষে ২২.২৫ একর এলাকা ধার্য করা হয়।
কী ভাবে তৈরি হয় এই বীজ?
সমবায় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিমলা, গ্বালিয়র, জলন্ধর, পটনায় কেন্দ্রীয় আলু গবেষণাগার রয়েছে। চাষে ইচ্ছুক নানা সংস্থার আবেদনের ভিত্তিতে সেখান থেকে মেলে ‘ব্রিডার সিড’ বা মা বীজ। চাষের কিছু দিন আগে থেকেই ওই বীজগুলিকে হিমঘরে রাখা হয়। হিমঘর থেকে অক্টোবর-নভেম্বরে বার করা হয় ওই বীজ। যে সব এলাকায় ওই আলু চাষ করা হয়, সেখানে প্রথমে চাষিদের নিয়ে শিবির করা হয়। বীজ আলু জমি থেকে তোলার সময়ে ফের চাষিদের নিয়ে শিবির হয়। রাজ্য ‘সিড আর্টিফিকেশনে’র কর্মীরা এই শিবিরে এসে খতিয়ে দেখেন, ঠিক ভাবে বীজ তৈরি হয়েছে কি না। কৃষি দফতর নির্ধারিত পদ্ধতিতেই পুরো প্রক্রিয়াটি চলে বলে সমবায়ের তরফে জানানো হয়েছে।
সমিতির তরফেই বীজ, সার-সহ যাবতীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয় চাষিদের। তাঁদের আগাম কোনও লগ্নি করতে হয় না। সিএডিপি-র উপদেষ্টা মৃণালকান্তি সাহা বলেন, “ন্যূনতম সুদে ৪ মাসের জন্য চাষের যাবতীয় সরঞ্জাম দেওয়া হয় চাষিদের। বীজ আলু বিক্রির পরে তাদের কাছ থেকে সেই টাকা কেটে নেওয়া হয়। সাধারণ আলু চাষে যখন চরম অনিশ্চয়তা, তখন বীজ আলু চাষে গোড়াতেই চাষিদের লাভের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। আলু জমি থেকে ওঠার পরে বাজার দর ভাল থাকলে লভ্যাংশের পাশাপাশি অতিরিক্ত বোনাসও দেওয়া হয় তাঁদের। ”
সংস্থার ডিরেক্টর তথা বালিন্দর এলাকার বীজ আলু চাষের ইনচার্জ তুষারকান্তি রায়ের কথায়, ‘‘গোড়া থেকেই লাভের নিশ্চয়তা থাকায় চাষিদের বীজ আলু চাষে উৎসাহ রয়েছে। আশা করি, সামনের বার চাষের এলাকা আরও বাড়ানো যাবে।” ওই এলাকার চাষি দীনবন্ধু রাহা বলেন, “এ বার আড়াই বিঘা জমিতে বীজ আলু চাষ করেছি। এই চাষে ঝুঁকি নেই বললেই চলে।”
বীজ আলু চাষের এলাকাগুলি ঘুরে দেখা যায়, চাষিদের জমি থেকে আলু তোলার পরই তা প্রথমে রাখা হচ্ছে ‘গ্রেডিং মেশিনে’। তাতে বাছাই করা হচ্ছে আলাদা বাজারদরের চার ধরনের আলু বীজ। যদিও সব আলুর জন্য চাষিদের একই দাম দেওয়া হয়। সংস্থার দাবি, ছোট আকারের আলুর বীজের বাজারদর সব চেয়ে বেশি। মৃণালবাবু বলেন, “রাজ্যের বাইরে অসম, ওডিশা, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, ঝাড়খণ্ডে ওই ধরনের আলু বীজের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এ রাজ্যের পাশাপাশি বাইরের বাজারেও দিকে লক্ষ রেখেই এগোতে চাইছি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংস্থা থেকে ইতিবাচক সাড়াও মিলেছে।” |