বাস থেকে যাত্রী পড়ে গিয়ে মারা যাওয়ায় এক চালকের বিরুদ্ধে পুলিশ ৩০৪ ধারায় খুনের মামলা দায়ের করে। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ইউটিইউসি ও আইএনটিইউসি শ্রমিক সংগঠন এবং বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন মঙ্গলবার মালদহ জেলায় বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। আগাম না জানিয়ে জেলা জুড়ে বেসরকারি বাস ধর্মঘটের জেরে দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। বেসরকারি বাস ধমর্ঘটের জেরে এদিন বহু শিক্ষক শিক্ষিকা, অফিস যাত্রী গন্তব্যস্থলে যেতে পারেননি বলে অভিযোগ। তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন বাস ধমর্ঘটের বিরোধিতা করলেও বেসরকারি বাস রাস্তায় নামাতে পারেনি। আন্দোলনকারী শ্রমিক সংগঠন ইউটিইউসি হুমকি দিয়েছে, পুলিশ চালকের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৩০৪ ধারা প্রত্যাহার না করলে তাঁরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে নামবেন। মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “আইন অনুযায়ী চালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।” জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২২ ফেব্রুয়ারি মালদহের মির্জাদিঘি এলাকায় একটি বেসরকারি বাস থেকে এক যাত্রী পড়ে গিয়ে জখম হন। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ ওই চালকের বিরুদ্ধে ৩০৪ ধারায় মামলা করে। সোমবার বিষয়টি জানাজানি হতেই ইউটিইউসি সংগঠনের শ্রমিকরা ও বাস মালিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। রাতেই শ্রমিক সংগঠনের নেতা ও বাস মালিকরা ৩০৪ ধারা প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার জেলা জুড়ে বেসরকারি বাস ও মিনিবাস ধর্মঘটের ডাক দেন। ইউটিইউসির জেলা সম্পাদক দুন্দুভি সাহা বলেন, “কোনও চালক ইচ্ছা করে কাউকে মারেন না। দুঘর্টনায় কেউ মারা গেলে চালকের বিরুদ্ধে সরাসরি খুনের মামলা দেওয়া যায় না। আমাদের দাবি, বাস দুঘর্টনায় যাত্রী কিংবা পথচারী মারা গেলে চালকের বিরুদ্ধে ৩০৪-এর পরিবর্তে ৩০৪ (এ) ধারায় মামলা করতে হবে।” তাঁর দাবি, ওই দিন বাস থেকে নামার সময়ে পড়ে গিয়ে যাত্রী মারা যান। বাসের চালকের দোষ ছিল না। তিনি বলেন, “এর পরেও পুলিশ যদি ওই বাস চালকের উপর থেকে ৩০৪ ধারা তুলে না নয় তবে লাগাতার ধর্মঘটে নামব।” |
হেনস্থা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “এমন চলতে থাকলে কোনও চালক বাস নিয়ে রাস্তায় নামবেন না। তখন হেনস্থায় কাকে দায়ী করা হবে?” আইএনটিইউসি জেলা সভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, “দুর্ঘটনার পরে চালকদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা মেনে নেওয়া যায় না। চালকদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।” মালদহ বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন জেলা সম্পাদক কাজল রায়ও দাবি করেন, বাস দুর্ঘটনায় চালকদের বিরুদ্ধে ৩০৪ ধারা না দেওয়ার ব্যাপারে সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ডেপুটেশন দিয়েছিলাম। মন্ত্রী আশ্বাস দেওয়ার পরেও পুলিশ খুনের মামলা দায়ের করেছে। এভাবে চলতে থাকলে কোনও চালক আর বাস চালাবেন না।” এ দিকে আগাম না জানিয়ে সকাল থেকে বেসরকারি বাস ধর্মঘটের জেরে এদিন নাকাল হতে হয় বহু নিত্যযাত্রীকে। রানিগঞ্জ হাই স্কুলের শিক্ষক স্বপন ঝা বলেন, “স্কুলে যাওয়ার জন্য বাস ধরতে রথবাড়ি মোড়ে গিয়ে দেখি একটিও বাস নেই। স্কুলে পরীক্ষা ছিল। বাস ধমর্ঘটের জন্য যেতে পারলাম না।” কালিয়াচক মুজমপুর হাই স্কুলের শিক্ষিকা রমেশা খাতুন, জবা চৌধুরীর মতো অনেকেই দুর্ভোগে পড়েন। তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি মানব বন্দ্যেপাধ্যায় বলেন, “আমরা এই ধর্মঘটের বিরোধিতা করেছি। বেপরোয়া বাস চলাচল রুখতে আইন প্রয়োগ করা উচিত। আমাদের যেখানে সংগঠন রয়েছে সেখানে ছোট গাড়ি চালিয়েছি।” |