দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের অদূরে হোসেনপুরের কাছে চকবাখর গ্রাম। প্রতি বছর এখানে দোলপূর্ণিমার দিন গভীর রাতে চঞ্চলা কালীর পুজো হয়। মূলত জনজাতি ও রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষরাই এই পুজোর আয়োজন করেন। পুজো উপলক্ষে তিনশো জন ভক্ত হন। প্রত্যেকে উত্তরীয় (পৈতা) ধারণ করেন। এক জন সন্ন্যাসী সমস্ত নিয়মকানুন ও রীতি পালন করেন। চঞ্চলাদেবীর মন্দিরের এক দিকে রয়েছে কৃষ্ণকালীর মন্দির। অন্য দিকে মাশান ঠাকুরের মন্দির। দোলপূর্ণিমায় মা চঞ্চলার সঙ্গে এঁরাও পূজিত হন। মূল মন্দিরটি এক সময় মাটির ছিল। মন্দিরের সামনে রয়েছে নাটমন্দির ও একটি পুকুর। এক জন ব্রাহ্মণ পুরোহিত পুজো করেন। চঞ্চলার নিত্য পূজা তিনিই করেন। |
চঞ্চলাদেবীর সাজের অলঙ্কার দেখার মতো। দেবীর আটটি হাত, লোল জিহ্বা। তিনি নরমুণ্ডের মালা পরিহিতা। বাতাসা, কদমা, সাচ ও নকুলদানা প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয়। পুজোতে বলি দেওয়া হয়। পায়রা উৎসর্গ করা হয়। শোলার ফুল বেঁধে দেওয়া হয়। পুজো উপলক্ষে তিন দিনের ছোট মেলা বসে। মেলাটি শতাব্দী প্রাচীন। এই পুজোর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ভক্তদের লোকক্রীড়া। একটি বড় কাঠের পাটাতনে সারি সারি পেরেক পুঁতে তার উপর ভক্তরা শিব কালী সেজে নাচ করেন। বিভিন্ন লোকবাদ্য যেমন ঢাক, ঢোল, কাঁসর এবং বিভিন্ন লোকনৃত্য যেমন মুখোশ পরে নাচ, অস্ত্র নিয়ে খেলা দেখানো এই পুজোর লোকসংস্কৃতির একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক।
|
পটদ্বীপ চৌধুরী। নিবাস বালুরঘাট। সম্প্রতি তাঁর তৈরি চোদ্দ মিনিট সাতান্ন সেকেন্ডের তথ্যচিত্র ‘ফার ফ্রম দ্য মেন স্ট্রিম’ শিলিগুড়ি সিনে সোসাইটি আয়োজিত উত্তরবঙ্গ ও উত্তরপূর্ব ভারত তথ্যচিত্র প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় পুরস্কার পেল। আর জলপাইগুড়িতে উত্তরবঙ্গ চলচ্চিত্র উৎসবে পেল প্রথম পুরস্কার। এখানেই শেষ নয়। জয়পুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আঠারোটি তথ্যচিত্রের মধ্যে তাঁর তথ্যচিত্রটি মনোনীত হয়। মাদুরাই চলচ্চিত্র উৎসবে ১২টি সেরা তথ্যচিত্রের মধ্যে তাঁর ছবিটির মনোনয়ন ছিল। ভিবজিওর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (ত্রিচূড়, কেরল) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগে মনোনীত হয় পটদ্বীপের তথ্যচিত্র। ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ, ইন্ডিয়া আয়োজিত সিগনাস ২০১২ (তিরুবনন্তপুরম) চলচ্চিত্র উৎসবে তথ্যচিত্র বিভাগে প্রশংসিত হয় তাঁর সৃষ্টিকর্ম, নির্মাণকৌশল।মহারাষ্ট্র, গান্দিয়া, নাগপুর থেকে এক দল রিফিউজি বালুরঘাটের সোনার দোকানে ফেলে দেওয়া সোনা থেকে কী করে আবার নতুন ‘সোনা’ তৈরি করেন, তথ্যচিত্রটিতে সেটাই দেখানো হয়েছে। সামান্য টিউশনির টাকায় নির্মিত তথ্যচিত্রটির মাধ্যমে অসামান্য উচ্চতায় উঠতে পারার সম্ভাবনা-ও পটদ্বীপের উত্তরণের গল্প। পটদ্বীপ তথ্যচিত্র নির্মাণের কোনও প্রথাগত পাঠ নেননি। দু’টো অতি স্বল্প সময়ের ওয়ার্কশপ ও মূলত ইন্টারনেটে তথ্যচিত্র দেখার অভিজ্ঞতাই তাঁর প্রধান সম্বল। এমন স্বীকৃতিতে যে নতুন আলোর দিশা পাওয়া যায় তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
|
দোকানের সামনে টিনের চালার বারান্দা। বারান্দায় কোনও বেড়া নেই। খড়ের ঝাঁপ উঠিয়ে দোকান খুলতে হয়। টিনের ঝাঁপ বারান্দার কাঠের সঙ্গে লোহার আংটা দিয়ে আটকানো থাকে। ঝাঁপ তোলার পর ঝাঁপ ও টিনের চালার মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গাটি তিন ইঞ্চির মতো। সেই জায়গায় খড়কুটো দিয়ে কয়েক বছর ধরে বাসা বানাচ্ছে এক শালিখ দম্পতি। প্রতি দিন পাখি দুটো খড়কুটো এনে যত্ন সহকারে বাসা তৈরি করে। কিন্তু দিনের শেষে দোকানদার যখন ঝাঁপ নামান, তখন পিছলে বাসাটি মাটিতে পড়ে যায়। পরের দিন দোকান খুললে আবার তারা বাসা তৈরি করে। এই ভাবে বহু দিন ধরে চলছে তাদের বাসা তৈরির প্রক্রিয়া। প্রতি দিন তারা বাসা বানায়, আর দিনের শেষে বাসা ভেঙে যায়। তবুও তাদের বাসা তৈরির অদ্ভুত নেশাটি বদলে যায়নি। সকালে দোকান খোলার আগে সামনের একটি গাছের ডালে তারা বসে থাকে। খাবার জোগাড় করে। দোকান খোলা মাত্র তাদের বাসা তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। দোকান বন্ধ থাকলে পাখি দু’টোরও ছুটি। ওরা সে দিন বিশ্রাম নেয়। অদ্ভুত ব্যাপার, আশেপাশে উপযুক্ত জায়গা থাকলেও পাখিদুটো সেখানে যায় না। দোকানদার শালিখ দম্পতিকে বেশ কয়েক বার তাড়িয়ে দিয়েছেন। তবু তারা সেখানেই বাসা বানাবে। দোকান বন্ধ করার পর বাসা নষ্ট হতে দেখে দোকানদারও দুঃখ পান। কিন্তু কিছুই করার থাকে না। বাধ্য হয়েই তিনি ঝাঁপ বদলাবার কথা ভাবছেন।
|
সম্প্রতি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পতিরাম কদমতলি মোড়ে অনুষ্ঠিত হল পাঁচ দিন ব্যাপী বাউল উৎসব। পরিচালনায় কদমতলি বাউল উৎসব কমিটি। এ বছর ছিল উৎসবের দ্বিতীয় বর্ষ। উৎসবে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ছাড়াও মালদা ও নদিয়া জেলার বাউল শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ছিলেন দৃষ্টি সংক্রান্ত প্রতিবন্ধী শিল্পী শ্যাম কানাই। তাঁর গান ছিল উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ। প্রতি দিন বেলা একটা থেকে শুরু করে রাত এগারোটা পর্যন্ত অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়েছে। ছিল বাউল তত্ত্ব, বাউল সঙ্গীত, লালনগীতি, ভাওয়াইয়া, পল্লিগীতি, মাইজভাণ্ডারি, ভাটিয়ালি, দেহতত্ত্ব ইত্যাদি গান।
|
প্রতি বছরই গতে বাঁধা অনুষ্ঠানের বাইরে অন্য রকম ভাবে নিজেদের বর্ষপূতির অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘মহিলা ক্রেডিট কোঅপারেটিভ সোসাইটি’। স্থানীয় সকলের কাছে এটি মহিলা ব্যাঙ্ক নামে পরিচিত। প্রতিষ্ঠা দিবসে এরা যৌনকর্মীদের পরিবারের শিশুদের নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। এ বছর ইসলামপুরের চম্পাবাগে বসেছিল বসে আঁকো প্রতিযোগিতার আসর। প্রায় পঞ্চাশ জন শিশু অংশ নেয়। সফল প্রতিযোগীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সেরার শিরোপা। মহিলা ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সুদীপ্তা ভৌমিকের কথায়, ‘আর পাঁচটা শিশুর মতো ওদের মধ্যেও প্রতিভা আছে। একটু সুযোগ পেলেই ওরাও এগিয়ে যেতে পারে সমাজের মূলস্রোতে’।
|
উত্তরের কড়চা বিভাগে ছবি ও লেখা দিলে
পুরো নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করবেন।
উত্তরের কড়চা
এ বি পি প্রাঃ লিমিটেড
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১ |
|