পড়ুয়াদের উপর থেকে মানসিক চাপ কমাতে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে মাঝেমধ্যেই আচমকা পরীক্ষা (সারপ্রাইজ টেস্ট) নিয়ে পড়ুয়াদের প্রস্তুতি যাচাই করতে চায় রাজ্য সরকার (১৯-১)। বলা হচ্ছে, “আগাম জানিয়ে পরীক্ষা নিলে ছাত্রছাত্রীদের উপর চাপ তৈরি হয়।” |
কিন্তু এ ভাবে আগাম না-জানিয়ে পরীক্ষা নিতে গেলে সেই চাপ তো দ্বিগুণ ভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের উপরে। আগাম না-জানিয়ে কোনও রূপ পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া শ্রেণিতে পরীক্ষার্থীদের যদি পরীক্ষায় বসতে হয় তবে স্কুলগুলি শিক্ষার্থীদের কাছে আরও ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কোনও শিক্ষার্থী যদি আচমকা পরীক্ষার দিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে তবে সে ক্ষেত্রেই বা কী হবে?
রতন চক্রবর্তী। শিক্ষক, উত্তর হাবড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা
|
ধর্ষণে অভিযুক্ত হাউসস্টাফ’ (২৯-২) খবরে ‘স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার মতে.... তাঁর অ্যাংজাইটি নিউরোসিস বা স্কিৎজোফ্রেনিয়া আছে’ উক্তি পড়ে মানসিক স্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে আমার কয়েকটি প্রশ্ন আছে। অপরাধের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক ঠিক কোথায়? ‘মহামান্য আদালত, আমার মক্কেল মানসিক ভাবে অসুস্থ, তাই তাকে চিকিৎসার জন্যে পাঠানো হোক’ হলি-বলি-টলির দৌলতে এটাই আমরা দেখতে অভ্যস্ত। যা এত দিন দেখিনি, তা-ও এ বার দেখলাম অপরাধের শিকার মেয়েটির মানসিক স্বাস্থ্য নির্ণয় হচ্ছে, সম্ভবত অপরাধীকে বাঁচানোর তাগিদে। মানসিক অসুস্থতার অজুহাতে অপরাধী বেঁচে যাচ্ছে, হয় ধর্ষক পাগল, নয় ধর্ষিত পাগল!
আমার প্রশ্ন, ওই মেয়েটির রোগ নির্ণয় করল কে? কখন? কী পদ্ধতিতে? যে মেয়েটি হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে এসেছিল হাসপাতালে, তার মানসিক অসুখ আছে কি না, কেনই বা তা নির্ণয়ের প্রয়োজন হল? মেয়েটি যে মূক ও বধির, সেটাই কি তার মানসিক সুস্থতা নিয়ে সন্দেহের কারণ? যে আমার মতো নয়, সে-ই পাগল, এই রকম একটা ধারণাই কি এর পিছনে কাজ করছে না?
আজ সর্দি-কাশি বা কোমরে ব্যথা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেও তাঁরা পাঁচটা পরীক্ষা না করিয়ে বলতে চান না, অসুখটা কী হয়েছে। অথচ মানসিক রোগের ক্ষেত্রে স্কিৎজোফ্রেনিয়ার মতো জটিল অসুখও লহমায় চিহ্নিত হয়ে যায়। মনোরোগবিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয় না। মেয়েটির দু-দুটো রোগ ধরে ফেললেন এক স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ, আর সেই ‘ডায়াগনসিস’কে মান্যতা দিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা। আমরা যারা মানসিক রোগীদের অধিকার নিয়ে কাজ করি, তারা অবশ্য জানি যে মনের রোগ ধরতে ডাক্তারেরও দরকার হয় না, পুলিশ, আইনজীবী, আদালত, যে কেউ একটা রোগের নাম বসিয়ে দেন। মনেও রাখেন না, এক বার যে রোগীর ‘স্কিৎজোফ্রেনিয়া’ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হল, তাকে আর ‘কমপিটেন্সি সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয় না। রোগীর প্রতি, মানবাধিকারের প্রতি এতটা তাচ্ছিল্য বোধহয় এ দেশেই সম্ভব।
মাননীয় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার কাছে প্রশ্ন, তিনি বিজ্ঞানের ছাত্র, চিকিৎসা বিজ্ঞানের পঠন-পাঠনের মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাঁর উপর। তিনি নিজে অবৈজ্ঞানিক কথা বলতে পারেন না। কোন পদ্ধতিতে মেয়েটির মানসিক রোগ নির্ণয় করা হয়েছিল, কে করেছিল, তার উত্তর তিনি দিন। ধর্ষণের মতোই, মানসিক রোগও এ দেশে অসহায় মানুষের (বিশেষত মহিলাদের) অবমাননার জন্য ব্যবহার করা হয়। এক জন চিকিৎসক এবং সরকারি পদাধিকারী হয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা একটি মূক ও বধির ধর্ষিত মেয়েকে আরও অপদস্থ করতে তাকে ‘মানসিক রোগী’ বলে চিহ্নিত করবেন, এটা কেবল অন্যায় নয়, অপরাধ। রত্নাবলী রায়। কলকাতা-২৯ |