এক দিকে উত্তরাখণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে দলে তুমুল বিদ্রোহ। অন্য দিকে সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিন থেকেই বিরোধী বিজেপির আক্রমণ। ঘরে-বাইরে এই জোড়া সঙ্কটের মধ্যে কংগ্রেসের পক্ষে আরও অস্বস্তি হয়ে দেখা দিয়েছে, রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার উপরে সংশোধনী চেয়ে দুই শরিক তৃণমূল এবং ডিএমকে-র আনা প্রস্তাব। আজ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৈশভোজের আসরে যা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য দুই শরিক দলের নেতাদের অনুরোধ জানালেন লোকসভার নেতা তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়।
কেন্দ্রীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র (এনসিটিসি) সংক্রান্ত যে পরিচ্ছেদটি রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় রয়েছে, তা বাদ দিতে চেয়ে সংশোধনী এনেছেন তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য দিকে, ডিএমকে-র সংশোধনীতে শ্রীলঙ্কায় তামিলদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানানো হয়েছে। প্রণববাবু আজ শরিকদের বলেন, এ ভাবে সংশোধনী আনলে এবং তা নিয়ে ভোটাভুটি হলে সরকার হেরেও যেতে পারে। তাতে সরকার পড়ে যাবে না ঠিকই, কিন্তু তাদের ‘নৈতিক পরাজয়’ হবে। অতএব শরিকরা যেন এমন পরিস্থিতি তৈরি না করেন। নৈশভোজে শরিকদের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ-ও। সংশোধনী প্রত্যাহারের জন্য তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও পাঠাচ্ছেন সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী পবন বনশল। নৈশভোজের পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, সব শরিককেই বলা হয়েছে, তাঁদের সব সাংসদ যেন সংসদে উপস্থিত থাকেন। কারণ যে কোনও বিষয়ে সংসদে এখন ভোটাভুটি হতে পারে।
তবে শরিকদের নিয়ে এমন অস্বস্তির মধ্যেও কংগ্রেসের পক্ষে আপাতত স্বস্তি, আজ সংসদে ইউপিএ-র সমর্থক দল সমাজবাদী পার্টির ভূমিকা। লোকসভায় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার উপর ধন্যবাদ-প্রস্তাব নিয়ে বিতর্কে সপা নেতা শৈলেন্দ্র কুমার জানান, ইউপিএ সরকারের পতন হতে দেবে না সপা। সংসদের বাইরে একই কথা জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের হবু মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিংহ যাদব। |
ইউপিএ সমন্বয় কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, কংগ্রেস সভানেত্রী
সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে অন্যান্য শরিক দলের নেতারা। নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই। |
শুধু সংশোধনী চেয়ে সরকারকে বিপাকে ফেলাই নয়, আজ প্রধানমন্ত্রীর নৈশভোজে আসেননি তৃণমূলের কোনও মন্ত্রী। দলের তরফে নিমন্ত্রণ রক্ষা করেন শুধু সাংসদ রত্না দে নাগ। প্রণববাবুর অনুরোধ প্রসঙ্গে রত্নাদেবী জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাবেন। এ দিন প্রধানমন্ত্রীর নৈশভোজে মন্ত্রীদের না যাওয়া প্রসঙ্গে তৃণমূলের একটি সূত্রে বলা হয়, রাজ্যের অধিকারের দাবিতে দল যখন সংসদে ধর্নায় বসতে চলেছে, তখন মন্ত্রীদের নৈশভোজে পাঠিয়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা দেখালে আন্দোলনের গুরুত্ব লঘু হয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া, দলের তরফে রত্না দে নাগকে তো পাঠানোই হয়েছে। রাতে দলের সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন ট্যুইট করে জানান, লোকসভায় দলের উপনেতা তথা মহিলা নেত্রী হিসেবে রত্নাদেবীর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
আজ মমতার সঙ্গে তৃণমূলের সংসদীয় দলনেতাদের বৈঠকের পরে ঠিক হয়েছে, রেল বাজেট পেশ হওয়ার পরের দিন অর্থাৎ ১৫ মার্চ সংসদ চত্বরেই ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনার’ বিরুদ্ধে ধর্নায় বসবেন দলের লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদরা। সে দিন সকাল সাড়ে দশটায় সংসদ চত্বরে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ধর্নায় বসবেন তাঁরা। সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার আধ ঘণ্টা পরেও চলবে এই বিক্ষোভ-সমাবেশ। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, ১৬ তারিখ বাজেট পেশের দিনও প্রতিবাদ জানানো হতে পারে।
এ হেন পরিস্থিতিতে আজ মনমোহন সরকারের বুকে খানিকটা হলেও বল জুগিয়েছে সমাজবাদী পার্টি। লোকসভায় সপা নেতা শৈলেন্দ্র কুমার বক্তৃতা শুরু করতেই বিজেপি সাংসদরা তাঁকে উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিজেপি-র আশা ছিল, সপা-ও কেন্দ্রের সমালোচনা করবে। কিন্তু শৈলেন্দ্র বিজেপি নেতৃত্বের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা ধৈর্য ধরুন। এখনও অনেক পরিশ্রম করতে হবে আপনাদের।” তার পরেই এই সপা নেতার বক্তব্য, “কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারকে সমর্থন দিয়েছে সপা। এই সমর্থন অটুট থাকবে। সরকারের অকাল পতন আমরা হতে দেব না। সুতরাং অন্তর্বর্তী নির্বাচনেরও কোনও সম্ভাবনা নেই।” উত্তরপ্রদেশের দুই আঞ্চলিক দল সপা এবং বিএসপি-র সঙ্গে কংগ্রেস নেতারা গত কয়েক দিন ধরেই ধারাবাহিক দৌত্য চালিয়ে যাচ্ছেন। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, আশা করা হচ্ছে সংসদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে এই দুই আঞ্চলিক দলেরই সমর্থন সরকার পাবে। |