আশুতোষ কলেজ ও বারাসত সরকারি কলেজের ছাত্র-সংসদ নির্বাচনের ‘বৈধতা’ নিয়ে আইনি বিতর্ক শুরু হল। মঙ্গলবার ওই দুই কলেজে নির্বাচন হয়। কিন্তু অভিযোগ, গত ৭ মার্চ কলকাতা হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তাকে উপেক্ষা করেই এ দিন দু’টি কলেজে ছাত্র-সংসদ নির্বাচন হয়েছে। হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল, যত দিন না রাজ্য সরকার লিংডো কমিশন অনুযায়ী বিধি তৈরি করছে, তত দিন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-সংসদ নির্বাচন মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের তত্ত্বাবধানে হবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে কোনও ভাবে প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত না-করেই এ দিন ওই দুই কলেজে নির্বাচন হয়েছে বলে অভিযোগ। এই নিয়ে হাইকোর্টে নতুন এক মামলা দায়ের হয়েছে।
আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিন বিচারপতি তপেন সেনকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ের প্রতিলিপি আশুতোষ কলেজ ও বারাসত সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে পাঠানো হয়েছিল। সঙ্গে একটি চিঠিতে ওই রায় অনুযায়ী মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন করার অনুরোধও জানানো হয়। কিন্তু তার পরেও ওই দুই কলেজে এ ভাবে নির্বাচন হয়েছে। সুব্রতবাবু বলেন, এই নির্বাচন করা আদালত অবমাননার সামিল।
আইনজীবীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিচারপতি তপেন সেন সংক্ষেপে বলেন, ‘ইন রেম’। এর ব্যাখ্যা করে সুব্রতবাবু পরে বলেন, এ ক্ষেত্রে ‘ইন রেম’-এর অর্থ হল, ওই রায় সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আজ, বুধবার মামলাটির শুনানি হতে পারে।
বিভিন্ন কলেজের ছাত্র-সংসদ নির্বাচন ঘিরে অধ্যক্ষ নিগ্রহ, ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা শুরু হয় গত নভেম্বরের শেষে। কলকাতা হাইকোর্টে ওই নির্বাচন নিয়ে ছাত্রদের তরফে বেশ কয়েকটি মামলাও দায়ের করা হয়। বিচারপতি তপেন সেন কলেজে কলেজে ছাত্র সংঘর্ষের কথা সংবাদপত্রে পড়ার পরে একটি রায়ে বলেন, গোটা রাজ্য জ্বলছে। শেষ পর্যন্ত তিনি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন করতে হবে বলে রায় দেন। |
কেন এই রায়ের পরেও নির্বাচন কমিশনকে সামিল না-করে ছাত্র-সংসদ নির্বাচন করলেন দুই কলেজের কর্তৃপক্ষ? আশুতোষ কলেজের শিক্ষক এবং নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার অপূর্ব রায় বলেন, “আদালতের রায়ের অনেক আগেই আমাদের মনোনয়নপত্র জমা, প্রত্যাহার, চূড়ান্ত প্রার্থী-তালিকা প্রকাশ ইত্যাদি হয়ে গিয়েছে। তবু ওই রায়ের পরে নির্বাচনের ব্যাপারে কী করণীয়, তা জানতে চেয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা সংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও জবাব আসেনি।” সেই কারণেই তাঁরা নির্বাচন করেছেন বলে জানিয়েছেন অপূর্ববাবু।
বারাসত সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ শুভাশিস দত্তও জানান, ফেব্রুয়ারিতে ওই কলেজের নির্বাচন ঘোষণা হয়েছে। এ দিন তিনি বলেন, “যারা পরবর্তী কালে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করবে, আদালতের নির্দেশ তাদের জন্য। আমাদের তো নির্বাচনের সব প্রস্তুতি হয়ে গিয়েছিল। তা ছাড়া, নির্বাচন বন্ধ করতে সরকারি ভাবে আমাদের বারণও করা হয়নি। বরং সরকারি আধিকারিকদের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনই হয়েছে।”
আশুতোষ কলেজ এবং বারাসত সরকারি কলেজে নির্বাচনকে ঘিরে এ দিন ছিল অভূতপূর্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থা। দু’টি ক্ষেত্রেই এসএফআই নির্বাচনে ছিল না। তা সত্ত্বেও কোনও ঝুঁকি না নিয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী এবং র্যাফ মোতায়েন করা হয়। এমনকী, আশুতোষ কলেজের কর্তৃপক্ষ নিজেদের ব্যবস্থাপনায় গোটা ভোটপর্ব ভিডিও রেকর্ডিংও করিয়েছেন।
আশুতোষ কলেজ এবং বারাসত সরকারি কলেজে জয়ী হয়েছে টিএমসিপি। যদিও এই নিয়ে ফের মামলা এবং বিচারপতির মন্তব্যের পরে বিষয়টি হাইকোর্টের বিবেচনাধীন হয়ে গেল বলেও অনেকে মনে করছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে খিদিরপুর কলেজের ছাত্র-সংসদ হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। সেখানে নির্বাচনে জয়ী হয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লকের ছাত্র সংগঠন ছাত্র ব্লক। মোট ১৮টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে জয়ী হয়েছে তারা। বাকি পাঁচটির মধ্যে তিনটি পেয়েছে ছাত্র পরিষদ, দু’টি তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। ছাত্র ব্লকের কলকাতা জেলার ভাইস চেয়ারম্যান মুস্তাক আলম জানান, তিনটি আসনে আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তাঁদের সংগঠন। নির্বাচনে আরও ১০টি আসনে তাঁরা জয় পেয়েছেন। |