সিপিএম নেতা প্রদীপ তা ও কমল গায়েন হত্যা মামলায় সিআইডি দুই ধৃতকে আদালতে তোলার সময়ে কেন সরকারি কৌঁসুলি উপস্থিত ছিলেন না, তার রিপোর্ট চাইলেন জেলাশাসক। কোনও সরকারি আইনজীবী এজলাসে হাজির না থাকায় সোমবার সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বর্ধমান সিজেএম আদালতে দাঁড়িয়ে ধৃতদের হেফাজতে চাইতে হয়। মঙ্গলবার জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “আদালতের ডেপুটি ডিরেক্টর (প্রসিকিউশন)-এর কাছে ঘটনা সম্পর্কে রিপোর্ট চেয়েছি। তা হাতে পাওয়ার পরে অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ডেপুটি ডিরেক্টর (প্রসিকিউশন) নূপুর অগ্রবালের সরকারি কৌঁসুলির দায়িত্ব পালনের কথা। তিনি অন্য এক জনকে দায়িত্ব দিয়ে ছুটি নিয়েছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, “ঘটনাটি সম্পূর্ণই অনভিপ্রেত। বাচ্চার হাম হওয়ায় ছুটি নিয়েছিলাম। তবে আমাদের যে সরকারি কৌঁসুলিরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের কারও শুনানির সময়ে থাকা উচিত ছিল। কেন তাঁরা ছিলেন না, খোঁজ নিচ্ছি।”
নিয়ম অনুযায়ী, আদালতে উপস্থিত হওয়ার আগে অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শরদ দ্বিবেদীর ঘরে গিয়ে হাজিরা খাতায় সই করতে হয় সরকারি কৌঁসুলিদের। ওই দফতর সূত্রে জানা যায়, সোমবার আদালতের তিন কৌঁসুলি গরহাজির ছিলেন। হাজিরা খাতায় সই করেন শুধু শম্পা বেজ মিত্র নামে এক কৌঁসুলি। নূপুরদেবী বলেন, “ওঁরই তো থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনিও শুনানির আগে আদালত ছেড়ে চলে যান বলে শুনেছি।” শম্পাদেবীর পাল্টা প্রশ্ন, “কী করে জানলেন যে আমারই শুনানিতে থাকার কথা ছিল? যেখান থেকে এটা জেনেছেন, সেখানেই জিজ্ঞাসা করুন, কেন কেউ উপস্থিত ছিলেন না।”
বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাসের মতে, “সরকারি কৌঁসুলি আদালতে উপস্থিত থেকে সত্য তুলে ধরবেন, এটাই অভিপ্রেত। অন্যথায় অভিযুক্তদের আইনগত সুবিধা পেতে সমস্যা হয়।” সিপিএমের দাবি, ধৃতেরা তৃণমূলের লোক হওয়াতেই এই ঘটনা। দলের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের দাবি, “সরকার কতটা নির্লজ্জ, তা এই ঘটনায় প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনার প্রশাসনিক তদন্ত হওয়া উচিত।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ পাল্টা বলেন, “আদালতে কে দাঁড়াবেন, সে ব্যাপারে আমরা প্রভাব খাটাতে যাব কেন?” পেশায় আইনজীবী স্বপনবাবুর মতে, ‘‘সমস্ত পুলিশ ফাইলেই সরকারি কৌঁসুলির উপস্থিত থাকাটা স্বাভাবিক। তবে হতে পারে, অন্য কোনও মামলায় তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল। অথবা হয়তো তিনি ভেবেছিলেন, এই শুনানিতে থাকার দরকার নেই। কী কারণে তিনি ছিলেন না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।” |