শয্যাসংখ্যা অনুযায়ী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী অপ্রতুল। তার উপরে মহকুমার ৬টি ব্লক এলাকায় প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ শিবির করতে হচ্ছে সপ্তাহে ২-৩টি করে। সেখানে চলে যেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এ ছাড়া, হাসপাতালে যে ক’জন চিকিৎসক আছেন, তাঁদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব প্রকট হয়ে উঠছে ক্রমেই। সব মিলিয়ে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে সমস্যা হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালের সুপার নির্মাল্য রায় মেনে নিয়েছেন এই সব সমস্যার কথা। রোগী ও রোগীর আত্মীয়-স্বজনের ক্ষোভ-বিক্ষোভের আঁচ প্রতি দিন পড়ছে হাসপাতালে। সুপার জানান, অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু দিয়ে কোনও মতে ‘পিঠ বাঁচানো’ হচ্ছে। হাসপাতালের ‘অব্যবস্থা’র কথা জেলায় জানিয়েও এখনও কোনও সুরাহা মেলেনি বলে তাঁর অভিযোগ।
এই মহকুমা হাসপাতালটিতে শয্যা ২৫০টি। কিন্তু বাস্তবে প্রায় সাড়ে চারশো রোগী ভর্তি থাকেন। চিকিৎসক থাকার কথা ৩৭ জন। আছেন মাত্র ২২ জন। স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যাও কম। হুগলি ছাড়াও বর্ধমান, বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া থেকে রোগী আসেন এখানে। বহির্বিভাগে প্রায় আড়াই হাজার রোগী আসেন প্রতি দিন।
এ ব্যাপারে হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক উন্মেষ বসু বলেন, “ওই হাসপাতালের হাল ফেরানোর চেষ্টা চলছে। অসুবিধাগুলি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নজরে আনা হয়েছে। প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ শিবিরের মতো জাতীয় কর্মসূচির রূপায়ণে একটি বিশেষ উদ্যোগ করা হয়েছিল রাজ্য-স্তরে। সেটি আরামবাগ মহকুমায় শেষ হতে চলল। এর পর রুটিন মাফিকই হাসপাতালের কাজকর্ম চলবে।” চিকিৎসকদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সে প্রসঙ্গে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্য, “হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলব। কোনও চিকিৎসক হঠাৎ অনুপস্থিত থাকলে তাঁর অধীনে থাকা রোগীকে ওই বিভাগের অন্য চিকিৎসকের উপরে দায়িত্ব দেওয়ার পরেও যদি অবহেলার অভিযোগ পাওয়া যায়, তবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে রোগী ও তাঁদের আত্মীয় তো বটেই হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মীদের একাংশের মধ্যেও ক্ষোভ আছে। অস্ত্রোপচার বিভাগে দু’জন চিকিৎসকের মধ্যে এক জন স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন মাস দেড়েক আগে। বাকি এক জনের পক্ষে গোটা দায়িত্ব পালন কঠিন হয়ে পড়েছে। দেড় মাসে তিনি আবার বার দু’য়েক অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত শুক্রবার থেকে তিনি ফের ‘অসুস্থতার’ কারণে অনির্দিষ্টকাল ছুটিতে চলে গিয়েছেন। ওই বিভাগে রোগী ভর্তিও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সে ব্যাপারে নোটিসও টাঙিয়ে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতেও রোগী ভর্তি বন্ধ করা যায়নি। হাসপাতালের সুপার জানান, পথ দুর্ঘটনা বা অন্য কারণে জখম হয়ে হাসপাতালের অস্ত্রোপচার বিভাগে অনেকে আসেন। নোটিস টাঙানো সত্ত্বেও রোগী ভর্তির চাপ আসছে। বাধ্য হয়ে তাঁদের ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে রোগীদের। ওই বিভাগে যাঁরা ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের চিকিৎসা করছেন প্রসূতি বিশেষজ্ঞ, শল্য চিকিৎসক, এমনকী দন্ত বিশেষজ্ঞও। সুপার নিজে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তাঁকেও নিজেও অন্তর্বিভাগ কিংবা বহির্বিভাগে রোগী সামলাতে হচ্ছে। সুপার বলেন, “রোগীরা যাতে অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু পান, তাই এই ব্যবস্থা।”
চিকিৎসকদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব যে কতটা প্রকট, তা বোঝা যায় মাঝে মধ্যেই। কোনও চিকিৎসক ছুটি নিলে ওই বিভাগের অন্য চিকিৎসককে সংশ্লিষ্ট রোগীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বহু রোগীর পরিবারের অভিযোগ, দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই চিকিৎসকেরা রোগীর ধারে-কাছেও ঘেঁষেন না। চিকিৎসকদের ডাকাডাকি করলে নার্স, চিকিৎসকেরা উল্টে ধমক দেন বলে অভিযোগ।
নির্মাল্যবাবু বলেন, “বেশ কিছু চিকিৎসক এমন অমানবিক আচরণ করেন বলে শুনেছি। তাঁদের আচরণ বদলাতে বলা হয়েছে।” |