‘নজরকাড়া’ গ্লকোমায়
সতর্কতা-সচেতনতাই দাওয়াই
হু বছর ধরে ‘পাওয়ার’ ছিল ঠিকই। তবে তার বাইরে চোখের তেমন কোনও সমস্যা টেরই পাননি বছর চল্লিশের স্কুল-শিক্ষিকা। হঠাৎ এক দিন চোখ লাল, সঙ্গে যন্ত্রণা। আলোর দিকে তাকালেই রামধনুর মতো নানা রং।
তা-ও তেমন গুরুত্ব দেননি। শেষে দৃষ্টিশক্তি যখন ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে, তখন গেলেন ডাক্তারের কাছে। তখনই ধরা পড়ল, দীর্ঘদিন ধরে তিনি গ্লকোমায় আক্রান্ত!
কেন্দ্রের অন্ধত্ব নিবারণ কর্মসূচিতে প্রতি রাজ্যে ফি বছর লাখ লাখ টাকা খরচ হয়। তবু গ্লকোমার জেরে দৃষ্টি হারানোর ঘটনা সর্বত্র বেড়ে চলেছে। এই মুহূর্তে বিশ্বে গ্লকোমা আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ছ’কোটি। তার ১ কোটি ২০ লক্ষই ভারতে! চিকিৎসকদের আক্ষেপ, আমজনতার মধ্যে রোগটি সম্পর্কে তেমন কোনও ধারণা তৈরি হয়নি। সরকারি স্তরেও সচেতনতা সৃষ্টির বিশেষ উদ্যোগ নেই। ফলে না জেনে-বুঝে বহু মানুষ তিল তিল করে অন্ধত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, সচেতনতায় ঘাটতির প্রেক্ষিতেই এখন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বাইরেও রাজ্যস্তরে নানা প্রকল্প শুরু হচ্ছে। জেলা, মহকুমা ও ব্লকস্তরে চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে গ্লকোমা সম্পর্কে জ্ঞান বাড়াতে চলতি মাসে পশ্চিমবঙ্গে একটি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।
গ্লকোমা রোগটা আসলে কী?
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এ এমনই অসুখ, যা দ্রুত বেড়ে চলে। তাই গোড়ায় চিকিৎসা শুরু না-হলে ক্ষতির মাত্রা বেড়ে যায়। গ্লকোমায় অপটিক নার্ভ ও রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে যথাযথ চিকিৎসা না-হলে দৃষ্টিশক্তিও চলে যেতে পারে। অর্থাৎ, আক্ষরিক অর্থেই এ রীতিমতো ‘নজরকাড়া’ রোগ।
সাবধান থাকুন
যদি পরিবারে কারও গ্লকোমা থাকে
দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস, মাইগ্রেন থাকে
চোখের চাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকে
পাশের দৃষ্টি কমতে থাকে
ঘন ঘন পাওয়ার পাল্টাতে হয়
টানা বহু দিন স্টেরয়েড খেতে হয়
অতীতে চোখের কোনও ক্ষত থাকে
অথচ পরিসংখ্যান বলছে, গ্লকোমায় আক্রান্তদের ৮০ শতাংশ জানেনই না যে, তাঁদের আদতে কী হয়েছে! গ্লকোমা সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া-র কো-অর্ডিনেটর চন্দ্রিমা পালের বক্তব্য, এর চিকিৎসা আসলে রোগী ও চিকিৎসকের ‘টিম-ওয়ার্ক।’ ডাক্তার ওষুধ বাতলে দিতে পারেন। কিন্তু দিনের পর দিন তা মেনে চলার দায়িত্বটা রোগীর। আর মেনে না-চললেই বিপদ। তাঁর কথায়, “পরিবারে কারও গ্লকোমা থাকলে অনেক বেশি সতর্ক থাকা উচিত। কুড়ি বছর বয়সের পর থেকে দু’বছরে এক বার চোখ পরীক্ষা জরুরি। তিরিশ পেরোলে বছরে এক বার। আর গ্লকোমা ধরা পড়লে প্রতি তিন বা চার মাসে এক বার পরীক্ষা করাতেই হবে।”
গ্লকোমার চিকিৎসা কী? কলকাতা অ্যাকাডেমি অফ অপথ্যালমোলজি-র সভাপতি সুমিত চৌধুরী জানাচ্ছেন, খাওয়ার ওষুধ, চোখের ড্রপ, প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার করাতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে লেসার সার্জারিও। সুমিতবাবুর কথায়, “ডাক্তারের পরামর্শ অক্ষরে অক্ষরে মানাটা খুব জরুরি। যে সমস্যাই হোক না কেন, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বা ড্রপ মাঝপথে বন্ধ করা বা বদলে ফেলা চলবে না।
ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।” সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ১১ থেকে ১৭ মার্চ, অর্থাৎ বিশ্ব গ্লকোমা সপ্তাহে গ্লকোমা সোসাইটি, অপথ্যালমোলজিক্যাল সোসাইটি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এবং অ্যাকাডেমির যৌথ উদ্যোগে নানা সভা, পদযাত্রা, ও নিখরচায় গ্লকোমা নির্ণয় ক্যাম্পের আয়োজন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গ্লকোমা সাধারণত দু’ধরনের। ওপেন অ্যাঙ্গল এবং ক্লোজড অ্যাঙ্গল। চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত বলেন, প্রথমটিতে উপসর্গ কিছু থাকে না। তাই ধরা পড়ে দেরিতে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আচমকা পরিস্থিতি খারাপ হয়। হঠাৎ চোখে অসহ্য ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, বমি ইত্যাদি নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটতে হয়। এবং তখন আক্ষরিক অর্থেই ‘ইমার্জেন্সি’ চিকিৎসা দরকার পড়ে। উপরন্তু জন্মগত গ্লকোমারও শিকার হন অনেকে। চোখে কোনও আঘাত লেগে থাকলে তার জেরেও গ্লকোমা হতে পারে বলে জানিয়েছেন জ্যোতির্ময়বাবু। আবার চিকিৎসক শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, বহু ক্ষেত্রে গ্লকোমা নির্ণয়েও ভুল হচ্ছে। তাঁর মন্তব্য, “গ্লকোমা নেই, তবু বছরের পর বছর চোখের ড্রপ নিয়ে যাচ্ছেন, এমনও দেখছি। তাই চিকিৎসকদের মধ্যেও সচেতনতা খুব জরুরি। মূলত তিনটে মাপকাঠি দেখে গ্লকোমা নির্ণয় করা হয়। কোনও একটায় ভুল হলেই বিপত্তি।” নিয়ম করে চোখের পরীক্ষায় জোর দিচ্ছেন তিনি। এবং বলছেন, “চশমার দোকানে নয়। চোখ দেখান হাসপাতালে বা ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে।”
একটা সময় পর্যন্ত সাধারণ ধারণা ছিল, চল্লিশের পরেই গ্লকোমা ধরা পড়ে। তবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এখন তিরিশ না-পেরোতেই অনেকে গ্লকোমার শিকার। যে কারণে চোখের ডাক্তারদের অনেক বেশি দায়িত্ব নেওয়া উচিত বলে তাঁরা মনে করেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তারা জানিয়েছেন, চোখের কোনও সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে তাঁরাই যাতে রোগীকে গ্লকোমা পরীক্ষার পরামর্শ ও রোগটি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য দেন, সে ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.