|
|
|
|
জঙ্গলে রাতে পাতা পোড়ানোর ধোঁয়ায় উদ্বেগ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
জঙ্গলে পাতা পোড়ানোর ধোঁয়া জমে থাকায় রবিবার রাতে আচমকাই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে শিলিগুড়ির হিল কার্ট রোড, সেবক রোড লাগোয়া এলাকায়। শহরের হায়দরপাড়া, সুভাষপল্লি, ইস্টার্ন বাইপাস এলাকার বহু মানুষ রাস্তায় বার হয়ে পড়েন। ওই এলাকায় চলে যান শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, পুরসভার চেয়ারম্যান নান্টু পাল। পুলিশ ও দমকলের আধিকারিকেরাও পৌঁছে যান। ভোরের দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
রুদ্রনাথবাবু বলেন, “জঙ্গলে শুকনো ঘাস-পাতা জ্বালানোর জন্যই ওই ধোঁয়া শহরের আকাশে জমে গিয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। ধোঁয়ার সঙ্গে যে কালো রঙের গুঁড়ো পদার্থ মিলেছে, সেগুলি পোড়া পাতার গুঁড়ো হওয়া অসম্ভব নয়।” শহরে অবশ্য সেই রাতে রটে যায়, কোনও বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছে। বিধায়ক বলেন, “বিষাক্ত গ্যাস ছড়ালে চোখ জ্বালা করা, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ হত। তেমন কিছুই হয়নি। তা ছাড়া বিষাক্ত গ্যাস ছড়ানোর মতো কোনও কারখানাও শহরের কাছাকাছি নেই।”
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছরই এই সময়ে রাখালেরা নতুন ঘাসের আশায় বনের শুকনো ঘাস-পাতা জ্বালিয়ে দেয়। এ ছাড়া, রাখালদের মধ্যে এই সংস্কারও রয়েছে যে, শুকনো পাতা পোড়ালে বৃষ্টি হবে। ধিকি ধিকি করে সেই আগুন জ্বলতে থাকে অনেকটা এলাকা জুড়ে। প্রায় সপ্তাহ দু’য়েক ধরেই শিলিগুড়ি লাগোয়া বৈকুণ্ঠপুর, মহানন্দা, কার্শিয়াং বন বিভাগের বিস্তীর্ণ এলাকায় সন্ধ্যার পরে সেই আগুন জ্বলতে দেখেছেন অনেকেই। ওই দিন সন্ধ্যায় শহরের কাছাকাছি সালুগাড়া, সাত মাইল এবং দশ মাইলের জঙ্গলেও আগুন জ্বলতে দেখা গিয়েছে। হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের অনিমেষ বসু বলেন, “সন্ধ্যার দিকে শিলিগুড়িতে এই সময় একটা উত্তুরে হাওয়া বইছে। তাতেই ধোঁয়াটা শহরে ঢুকে যাচ্ছে।” শহরে আলো জ্বলে উঠলে সেই ধোঁয়ায় আকাশ কালো হয়ে থাকছে। পাতা পোড়ার কটূ গন্ধে ভরে যাচ্ছে বাতাস।
এই বেআইনি অগ্নিকাণ্ড রোধে বন দফতর থেকে বছরের এই সময়ে নজরদারির জন্য কর্মীও নিয়োগ করা হয়। তার পরেও আগুন যাতে ছড়াতে না-পারে, সেই জন্য জঙ্গলের ভিতরে নালা তৈরি করে দেওয়া হয়। চলতি বছরে এই সমস্ত কাজ আদৌ হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেছেন, “নজরদার কর্মী নিয়োগ থেকে নালা কাটার জন্য অর্থের কোনও সমস্যা নেই। তার পরেও কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।” শিলিগুড়ি শহরের একেবারে লাগোয়া বৈকুণ্ঠপুর বনাঞ্চলের ডিএফও ধর্মদেব রাই অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁর এলাকায় নজরদারির কাজে নিযুক্ত কর্মীরা কাজ করছেন। বৈকুণ্ঠপুর বনাঞ্চলে আগুন লাগানোর কোনও খবরও তাঁর কাছে নেই। যদিও রুদ্রনাথবাবুর বক্তব্য, “কয়েকদিন আগেই আমি সন্ধ্যায় কার্শিয়াং থেকে ফেরার সময়ে জঙ্গলে আগুন জ্বলতে দেখেছি।” রুদ্রনাথবাবুর বক্তব্য, “বন দফতর এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলব।”
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ভাবে আগুন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। বড় গাছ পুড়ে যাওয়া ছাড়াও বহু কীটপতঙ্গ মারা গিয়ে জঙ্গলের সংশ্লিষ্ট এলাকার জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে। শুকনো পাতা বৃষ্টির জলে পচে সার তৈরি করে। প্রাকৃতিক এই সার জঙ্গলের গাছপালার পুষ্টি জোগায়। নষ্ট হচ্ছে সেটাও। |
|
|
|
|
|