বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি বা বেসু-র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শীর্ষক দে র্যাগিংয়ের শিকার হননি বলে জানাল বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত তদন্ত কমিটি। পুরনো ঝগড়ার জেরেই চতুর্থ বর্ষের এক দল ছাত্র শীর্ষককে মারধর করে বলে কমিটি তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে। বেসু-কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-কে তা জানিয়ে দিয়েছেন।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি শীর্ষক অভিযোগ জানান, চতুর্থ বর্ষের এক দল ছাত্র তাঁকে মারধর করেছেন। অভিযোগকারী ও অভিযুক্তেরা সকলেই হস্টেলের আবাসিক। ঘটনার দিন টি আই (শনাক্তকরণ) প্যারেডে আট অভিযুক্তকে শনাক্ত করেন শীর্ষক। প্রাথমিক ভাবে মারধরের ঘটনা প্রমাণিত হয়। অভিযুক্তদের মাথাপিছু পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে বিশ্ববিদ্যালয়। পরে, ২৬ ফেব্রুয়ারি ইউজিসি-র র্যাগিং প্রতিরোধ হেল্পলাইনে অভিযোগ জানান শীর্ষক। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বেসু-ও একটি তদন্ত কমিটি গড়ে।
সেই কমিটির রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জমা পড়েছে গত সপ্তাহে। বেসু-র উপাচার্য অজয় রায় সোমবার বলেন, “অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেছে তদন্ত কমিটি। তাদের অভিভাবকদেরও ডেকে কথা বলা হয়েছে। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, এই ঘটনা র্যাগিং নয়।” তিনি জানান, টি-শার্টের নকশা, হস্টেলে খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি ‘শিশুসুলভ’ ব্যাপার নিয়ে শীর্ষক এবং তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে চতুর্থ বর্ষের ওই দলটির মতবিরোধ চলছিল। তার জেরেই মারামারির ঘটনা ঘটে।
তদন্ত কমিটি কোনও শাস্তির সুপারিশ করেনি বলে জানান অজয়বাবু। তিনি বলেন, “মারধরে জড়িত ছাত্রদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, সেই বিষয়ে সুপারিশ করতে বলা হয়েছে ওই কমিটিকে।” শীর্ষকের আনা র্যাগিংয়ের অভিযোগটি যে হেতু ‘ভিত্তিহীন’, তাই তদন্ত কমিটি চাইলে তাঁর বিরুদ্ধেও শাস্তির সুপারিশ করতে পারে বলে উপাচার্য জানান।
বেসু-কর্তৃপক্ষ বা ইউজিসি-র দ্বারস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গত ৫ মার্চ শিবপুর থানায় এফআইআর-ও করেছিলেন শীর্ষক। পুলিশি সূত্রের খবর, পরে তিনি নিজের অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য বারবার পুলিশের কাছে আবেদন জানান। তাঁর বক্তব্য ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ যে-ব্যবস্থা নেবেন, তিনি তা মেনে নেবেন। তাই পুলিশ শীর্ষকের অভিযোগকে আর আমল দেয়নি। তবে ছাত্রেরা যাতে পরস্পরের প্রতি তিক্ততা ভুলতে পারেন, সেই জন্য এ সপ্তাহেই তাঁদের মুখোমুখি বসাবেন উপাচার্য।
যাদবপুর, বেসু-র পরে এ বার র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত বৃহস্পতিবার, দোলের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের হস্টেলে স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রের উপরে ওই বর্ষেরই কয়েক জন পড়ুয়া ‘রং দেওয়ার নাম করে অত্যাচার’ করেন বলে অভিযোগ। ঘটনার পরের দিন, ৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানান ওই ছাত্র।
ছাত্রটির অভিযোগ, কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক এবং অন্য নেতারা এই ঘটনায় জড়িত। ওই কলেজের ছাত্র সংসদ এসএফআইয়ের দখলে। তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ওই হস্টেলের আবাসিক ছাত্রদের একাংশ জানিয়েছেন, দোলের দিন ছাত্রেরা নিজেদের মধ্যে রং খেলেছেন। সেই সময় কোনও ‘অত্যাচার’ হয়নি। রেজিস্ট্রার বাসব চৌধুরীকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় সোমবার বলেন, “ওই হস্টেলের প্রায় ৮০ জন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে জানিয়ে গিয়েছেন যে, অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। র্যাগিং বা অত্যাচারের কোনও ঘটনা ঘটেনি। ওই ছাত্রের অভিযোগ এবং এই ছাত্রদের দাবি সবই যাচাই করতে বলা বলা হয়েছে রেজিস্ট্রারকে।” |