ধর্মঘটের দিন কাজে ‘অনুপস্থিত’ সরকারি কর্মীদের ‘শো-কজ’ বা কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠাতে শুরু করেছে রাজ্য সরকার। মহাকরণের খবর, কাল, বুধবারের মধ্যে শো-কজের চিঠি পৌঁছে যাবে ২৮ ফেব্রুয়ারির ধর্মঘটে কর্মস্থলে গরহাজির কর্মীদের কাছে। চিঠিতে সাত দিনের মধ্যে তাঁদের উত্তর দিতে বলা হচ্ছে। সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে, উত্তরে সন্তুষ্ট না-হলে অনুপস্থিত কর্মীদের এক দিনের বেতন কেটে নেওয়া হবে। চাকরিজীবনের মেয়াদও কমে যাবে এক দিন। মহাকরণের খবর, মার্চের বেতন থেকেই এক দিনের বেতন কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
কোপের মুখে ঠিক কত জন?
এক সরকারি মুখপাত্র জানান, ইতিমধ্যেই সরকারের কাছে যে-তথ্য এসেছে, তাতে পরিষ্কার, ৫৫ থেকে ৬০ হাজার কর্মীর উপরে শাস্তির খাঁড়া নামতে চলেছে। এবং শাস্তি মানে এক দিনের বেতন কাটা এবং চাকরির মেয়াদ এক দিন কমে যাওয়া।
এ বার ধর্মঘটের দিন কত সরকারি কর্মী গরহাজির ছিলেন?
সরকারের প্রাথমিক হিসেব, ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুপস্থিত সরকারি কর্মীর সংখ্যা কমবেশি ৮০ হাজার। এর মধ্যে আগে থেকেই ছুটি মঞ্জুর হওয়া কিংবা কোনও জরুরি কারণে অফিসে আসতে না-পারা কর্মীর সংখ্যা ১৬ হাজারের মতো হবে। বাকি প্রায় ৬৪ হাজার কর্মীর সে-দিন কাজে না-আসার কারণ সরকারের কাছে প্রাথমিক ভাবে সন্তোষজনক নয়। রাজ্যে মোট সরকারি কর্মীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লক্ষ। তবে এই হিসেবের মধ্যে শিক্ষকদের রাখা হয়নি।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ধর্মঘটের পরেই অনুপস্থিত কর্মীদের নাম এবং কাজে না-আসার কারণ জানতে চেয়ে মহাকরণ থেকে প্রতিটি দফতর, পঞ্চায়েত, পর্ষদ ও পুরসভার কাছে নির্দেশ যায়। সেই হিসেব একত্র করেছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। তাতেই গরহাজিরার প্রাথমিক ছবিটা উঠে এসেছে। সরকার অনড় থাকায় বিপুল সংখ্যক কর্মীকে শাস্তি পেতে হবে বলে মহাকরণের খবর। এবং শুধু বেতন কাটা যাওয়াটাই সব নয়। চাকরিজীবনের একটি দিন কমে গেলে অনেক কর্মীর পেনশন, গ্র্যাচুইটির পরিমাণও কমবে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সরকারের এক মুখপাত্র জানান, এখন কোনও কর্মী টানা ২০ বছর চাকরি করলে অবসরের সময় ‘ফুল পেনশন’ বা পুরো পেনশনের সুযোগ পান। আগে এই সময়সীমা ছিল ৩৩ বছর। কিন্তু চাকরিজীবন থেকে একটি দিন বাদ চলে গেলে যাঁরা ওই নিয়ম পূরণ করতে পারবেন না, তাঁদের পেনশনের পরিমাণ কমে যাবে। সেই অনুপাতে কমবে গ্র্যাচুইটিও।
গরহাজির কর্মীরা কী ভাবছেন?
ধর্মঘটে সামিল হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজে যোগ দেননি মূলত কো-অর্ডিনেশন কমিটি এবং নবপর্যায়ের কর্মী-সমর্থকেরা। কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ধর্মঘটে সাড়া দিয়ে সে-দিন লক্ষাধিক কর্মী কাজে যাননি। ওই দুই সংগঠনের নেতাদের দাবি, তাঁরা যে ধর্মঘট ও তার দাবিগুলি সমর্থন করেই কাজে যোগ দেননি, শো-কজের জবাবে সেটাই লিখবেন তাঁদের সমর্থক কর্মীরা। মহাকরণ সূত্রের খবর, সরকারি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মামলা করার কথাও ভাবছেন কেউ কেউ। কারণ, ধর্মঘটে অংশগ্রহণ কর্মীদের ‘সার্ভিস রুল’-এ স্বীকৃত অধিকার বলে তাঁদের দাবি। শো-কজের জবাব দেওয়ার জন্যও কয়েক জন আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েছেন কর্মী সংগঠনের কর্তারা।
ধর্মঘটের দিন আইএনটিইউসি অনুমোদিত ফেডারেশনের সমর্থকেরা কাজে যোগ দেন। তবে কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত সমর্থন করছে না ফেডারেশন। অনুপস্থিত কর্মীদের ব্যাপারে ‘রণং দেহি’ মনোভাব নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তাদের এই মনোভাব সমর্থন করছে তৃণমূল অনুমোদিত সব সরকারি কর্মী সংগঠন এবং বহু সাধারণ কর্মী। তাঁদের কথায়, কোনও ছুটি মঞ্জুর করা হবে না বলে সরকার নির্দেশ দেওয়ায় অনেকে অসুবিধা সত্ত্বেও কাজে এসেছিলেন। তাই যাঁরা আসেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নিলে সরকারের ঘোষণাকে ‘ফাঁকা আওয়াজ’ বলে মনে হবে। তাই অনুপস্থিত কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। |