ছোট খাল এঁকে বেঁকে গিয়েছে। একটু দূরে ওই খালের উপরে অনেক খানি সমতল জায়গায় কয়েকটা শাল গাছ দাঁড়িয়ে। তার তলায় কয়েকশো মানুষ বাহা নাচে সামিল হয়েছেন।
প্রচীন রীতি মেনে দোলের দু’দিন পর থেকে বরাবাজারের ফুলঝোরে গ্রামে বাহা উৎসবে মেতে ওঠেন আশপাশ এলাকার মানুষ জন। শনিবার থেকে শুরু হওয়া শতাব্দী প্রাচীন এই উৎসব সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলেছে। বিশিষ্ট সাঁওতালি সাহিত্যিক মহাদেব হাঁসদার কথায়, “মূলত গ্রাম প্রতিষ্ঠার সময় থেকে এই রীতি চলে আসছে। বাহা শব্দের অর্থ ‘ফুলের উৎসব’। এই সময় শাল গাছে ফুল ফোটে, ফুলে ভরা শাল গাছের তলায় মারাং বুরু ও জাহির পুজো হয়। গ্রামের ষোল আনা কমিটির পক্ষ থেকে সাদা অথবা লাল মোরগ বলি দেওয়া হয়। ওই মোরগ পুড়িয়ে খিচুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে প্রসাদ হিসেবে সবাই খান। তিন দিনের এই উৎসব দোলের দু’দিন পর থেকে শুরু হয়।” তিনি জানান, বাহা উৎসবের পুজারীকে ‘নাইকে’ বলা হয়। প্রথম দিনের অনুষ্ঠানকে উম, দ্বিতীয় দিনে সারদি ও শেষ দিনের অনুষ্ঠানকে জালে বলা হয়। |
রবিবার সন্ধ্যায় ফুলঝোর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, গ্রামের প্রান্তে বেঁকে যাওয়া খাল অরণ্য ও হুটুবুরু পাহাড়ে ঘেরা। মাঝখানে শাল গাছের তলায় শুরু হয়েছে বাহা উৎসব। সব বয়সের বাসিন্দা হাজির ফুলঝোরে। স্থানীয় বাসিন্দা চিকিৎসক শ্যামাপদ হেমব্রম, গোপীবল্লভপুর হাইস্কুলের শিক্ষক জগদীশ মুর্মু বলেন, “বাহা উৎসবের আগে নতুন পাতা নতুন ফলে কেউ হাত দেয় না। এমন কী এই সময় জঙ্গলে কাঠ বা পাতা কুড়নোও নিষিদ্ধ।” নাচে যোগ দেওয়ার আগে নাইকে ক্ষীরোদচন্দ্র সরেন উপস্থিত সবাইকে শালফুল দিলেন। ছেলেরা কানে ও মেয়েরা খোঁপাতে শাল ফুল গুঁজে নাচের আসরে নামলেন। বাসিন্দাদের মতে, ফুল উৎসবের কথা স্মরণে রেখে এই গ্রামের নামকরণ হয়েছিল ফুলঝোর। শ্যামাপদবাবু বলেন, “পাশাপাশি ১৫-২০টি গ্রাম তো বটেই, লাগোয়া ঝাড়খণ্ড থেকেও বহু মানুষ এই উৎসবে যোগ দিতে আসেন।” |