সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে নির্বাচন চলাকালীনই এসএফআই যখন ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখনই জানা হয়ে যায়, দীর্ঘ আঠাশ বছর পরে বনগাঁর দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের দখল হারাতে চলেছে বামপন্থীরা। মঙ্গলবার সরকারি ভাবে ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরে দেখা যায়, অধিকাংশ আসনেই জয়ী হয়েছে টিএমসিপি। কয়েকটি আসন পেয়েছে ছাত্র পরিষদ। কলেজ সূত্রের খবর, ২৬২টি আসনের মধ্যে টিএমসিপি জয়ী হয়েছে প্রায় আড়াইশোটি আসনে। নির্বাচন চলাকালীন ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত জানালেও এসএফআই কয়েকটি আসন পেয়েছে।
গত ৫ মার্চ এই কলেজের ছাত্র সংসদের ভোট হয়। টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে দুুপুর দেড়টা নাগাদ এসএফআই ভোট প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ায়। তাদের অভিযোগ ছিল, সমর্থক-প্রার্থীদের কাছ থেকে জোর করে পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে। হুমকি দেওয়া হয়েছে। কয়েক জন এসএফআই প্রার্থীকে মারধরও করা হয়। ভোট দিতে দেওয়া হয়নি অনেককে। ছাত্র সংঘর্ষে ওই দিন ৬ জন জখম হন। যাঁদের ৫ জনই এসএফআইয়ের। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য দুলাল মণ্ডল বলেন, “নির্বাচনের দিন তৃণমূলের সন্ত্রাসের জন্য এসএফআই প্রার্থীরা চলে এসেছিল।” ‘সুষ্ঠু-স্বাভাবিক’ পরিবেশে ভোট হলে এসএফআই জয়লাভ করত বলে দাবি করেছেন তিনি। |
এ দিন এসএফআইয়ের লোকজনকে কলেজের সামনে দেখা যায়নি। যদিও সকাল থেকেই তৃণমূল শিবির ভিড় জমায় কলেজ গেটের বাইরে। ভোটের ফল ঘোষণার পরেই শুরু হয়ে যায় আবির খেলা। তাসা-ব্যান্ড বাজিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়। বামপন্থীদের দাবি উড়িয়ে দিয়ে ওই কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দায়িত্বে থাকা চন্দন ঘোষ বলেন, “কলেজ এ বার রাহু-মুক্ত হল।” এসএফআই ভোট বয়কট না করলেও তাঁরা বিপুল ভোটে জয়ী হতেন বলে দাবি করেছেন চন্দনবাবু। তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম, এই কলেজে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসুক। এ বার তা সম্ভব হবে।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে জোট না হলেও কয়েকটি আসন পেয়ে ‘সন্তুষ্ট’ থাকতে হয়েছে ছাত্র পরিষদকে। বনগাঁ শহর কংগ্রেসের সভাপতি কৃষ্ণপদ চন্দ বলেন, “আমাদের দলের নেতারা উদাসীন না থাকলে ফল আরও ভাল হত।”
বনগাঁয় লোকসভা, বিধানসভা, পুরসভা, পঞ্চায়েত ভোটে লাগাতার সাফল্য পেয়ে এসেছে তৃণমূল। মহকুমার স্কুল-কলেজের ভোটেও তাদের সাফল্য প্রশ্নাতীত। দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের লড়াই ছিল কার্যত ‘সম্মানের’। ভোটের প্রস্তুতিতেও যথেষ্ট গা ঘামিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ভোটের দিন দলের বিধায়ক থেকে শুরু করে পুরপ্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি-সহ এলাকার তাবড় তৃণমূল নেতৃত্ব হাজির ছিলেন কলেজের অনতিদূরে। |