মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন পুরো সময়টাই হাসপাতালে শুয়ে কেটেছে দীপঙ্করের। বাড়ি ফিরেও দিন কাটছে না স্বস্তিতে।
ওই ছাত্রের উপরে হামলায় জড়িত অভিযোগে রবিবার রাতেও গ্রেফতার হয়েছে এক জন। কিন্তু আতঙ্ক কাটেনি দীপঙ্করের। বাড়ির বাইরে বেরোলে দীপঙ্করের উপরে ফের হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তার পরিবারও।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি হাবরা স্টেশনে দীপঙ্কর মিস্ত্রিকে মারধর করে কয়েকজন তোলাবাজ। পরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে রেলকলোনির একটি ক্লাবে আটকে রেখে ফের মারধর করা হয় ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে। পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তার। সপ্তাহ দু’য়েক হাসপাতালে কাটিয়ে গত বুধবার বাড়ি ফিরেছে দীপঙ্কর। এখনও প্রায় সর্বক্ষণই শুয়ে বিছানায়। মাথায় যন্ত্রণা কমেনি। পায়ের ব্যথাও সারেনি। দীপঙ্করের মাসি পুতুল মালঙ্গী বললেন, “ঘুমের মধ্যে মাঝে মাঝেই আতঙ্কে চিৎকার করে উঠে বসছে বিছানায়। ভাল ছেলেটার কী যে হয়ে গেল! পরীক্ষাটাও দিতে পারল না।” দীপঙ্কর সোমবার বলে, “অনেক কষ্ট করে পড়ছিলাম। গৃহশিক্ষক রাখতে পারিনি। কিন্তু কোথা থেকে কী হয়ে গেল! মাধ্যমিকটাই দিতে পারলাম না। একটা বছর আর ফিরে পাব না। যাদের জন্য এমনটা হল তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।”
ওই ছাত্রের উপরে হামলার ঘটনায় অমিত রায় নামে এক অভিযুক্তকে হাবরার আশুতোষ কলোনি থেকে রবিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। ওই মামলায় এ নিয়ে ধরা পড়ল ৬ জন। তবে আতঙ্ক কাটেনি মিস্ত্রি পরিবারের। স্থানীয় ‘প্রভাবশালী’ এক তৃণমূল নেতা তোলবাবাজদের পক্ষ নিয়ে ঘটনার দিন হাবরা থানায় গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তৃণমূল নেতারা দীপঙ্করকে ‘দেখতে’ হাজির হয়েছিলেন হাসপাতালেও। সেখানে তাকে দিয়ে ‘বয়ান’ লিখিয়ে নেওয়া হয় বলে দাবি করেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ‘তোলাবাজেরা’ তার উপরে আক্রমণ করেনি বলে দীপঙ্কর তৃণমূলেরই এক নেতাকে ‘লিখে দিয়েছে’ বলে দাবি ছিল তাঁর। যদিও লিখিত বয়ানের কথা ওই নেতা পরে অস্বীকার করেন। পুতুলদেবীর কথায়, “দীপঙ্কর হাসপাতালে থাকাকালীন হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। এখন ছেলেটা বাড়ির বাইরে বেরোলে আবার হামলা না হয়!” বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচই শুরু হওয়ার পরে দীপঙ্করের বাড়িতে যে পুলিশ-পাহারা বসেছিল, তা এখন নেই। দীপঙ্কর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার দিন কয়েক আগেই পুলিশ তুলে নেওয়া হয়েছে। হাবরা থানার বক্তব্য, দীপঙ্করের পরিবার জানিয়েছে, তাঁদের আর হুমকি দেওয়া হচ্ছে না। পুতুলদেবী বলেন, “দিন কয়েক কিছু হয়নি। ফের যে কিছু হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়!” |