গ্রামের মধ্যেই মন্দির। ভক্তদের বিশ্বাস, আড়াইশো বছরেরও বেশি পুরনো এই মন্দিরে দোলযাত্রার প্রচলন করেছিলেন গ্রামের কূলদেবতা শ্যামচাঁদ দেব। আর সেই থেকে হিলোড়ার সেই মন্দির চত্বরেই দোলযাত্রার পাঁচ দিন পরে পঞ্চম দোল উৎসবে মাতেন গ্রামবাসীরা।
এ বছরও সেই নিয়ম মেনেই সোমবার রঙের উৎসবে মাতলেন গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতা। দোলের উৎসবে সামিল হলেন গ্রামের মহিলারাও। যোগ দিলেন মন্দিরের পুরোহিত থেকে প্রবীণেরাও। সকাল থেকেই সাজো সাজো রব মন্দির চত্বরে। দু’শো বছরেরও পুরনো এই উৎসবে হাজার খানেক ভক্তের সমাগম হয়েছে গ্রামে। আর এই উপলক্ষেই শ্যামচাঁদদেবের বিগ্রহকে হিলোড়ার এই মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়েছে শনিবার।
মন্দিরের পুরোহিত অমরেন্দ্রনাথ চৌধুরী বলেন, “সারা বাংলায় দোল খেলা হয়েছে বৃহস্পতিবার। কিন্তু আমাদের গ্রামে দোলের আয়োজন হয়েছে আজ। দেবতার পায়ে আবীর ছুঁইয়ে সকালে শুরু হয়েছে রঙের খেলা। গ্রামের আট থেকে আশি, কে নেই তাতে!” শ্যামচাঁদদেবের এই মন্দির প্রসঙ্গে অমরেন্দ্রবাবু আরও বললেন, “কয়েকশো বছর আগে পর্যন্ত সুতির বাজিতপুরের একটি মন্দিরে অধিষ্ঠান করতেন শ্যামচাঁদদেব। ওই মন্দিরেই ছিল তাঁর অন্য তিন ভাইয়ের বিগ্রহও। লোকমুখে শোনা যায়, একই মন্দিরে সর্বেশ্বর, বলরাম ও মদনমোহনের সঙ্গে থাকতে চাননি শ্যামচাঁদদেব। স্বপ্নে আদেশ দিয়েছিলেন হিলোড়ায় এই মন্দির নির্মাণের। ১১৬৮ বঙ্গাব্দে এই মন্দির গড়ে ওঠে। তখন থেকে এই মন্দিরেই অধিষ্ঠান করতেন দেবতা। তবে বছর ভর দেশের বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন মন্দিরে ঘুরে বেড়ান দেবতার বিগ্রহ। দোলের এই উৎসবেই দু’দিনের জন্য হিলোড়ার এই মন্দিরে ফেরেন।” শ্যামচাঁদ ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক প্রবীণ জগন্নাথ সাহা বলেন, “এই তল্লাটে এই দোল উৎসবের প্রবল নাম-ডাক। ছোটবেলায় দেখতাম, আশপাশের গোটা কুড়ি গ্রামের বাসিন্দারা এই দোল উৎসবে সামিল হতেন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত চলত রঙের খেলা। রাতভর চলত আবীর দেওয়া। এখন অবশ্য লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয় এই উৎসবে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে দোল উৎসব। এই উৎসব ঘিরে গ্রামে বসেছে মেলাও।” তিনি আরও জানালেন, “মন্দির প্রতিষ্ঠার পরে ১১৬৮ বঙ্গাব্দ থেকেই চলে আসছে পঞ্চম দোলে রঙ খেলা। রাতভর চলে জলসা। সেখানে যোগ দিতে চলে আসেন আশপাশের গ্রামের লোকশিল্পীরা। ১৪ জন সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ড গড়ে চলে এই উৎসবের আয়োজন।” গ্রামের বাসিন্দা পরিমল খামারু বললেন, “ট্রাস্টি বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে চললেও এই উৎসব এখন গ্রামের সাধারণ মানুষের। এই উৎসবে বন্ধ থাকে স্কুল ও অন্যান্য পরিষেবা। আগে দোলের রাতে আতসবাজির রোশনাই ছিল। বাজিও ফাটানো হত। তবে এখন সে সব বন্ধ। তবে দোলের আমেজটা এত বছর ধরে একই রকম রয়ে গিয়েছে।” |