বিতর্ক-বিভ্রান্তি তাড়া করেই চলেছে ভারতীয় ফুটবলকে
মিনিট দশেকের মধ্যে প্রায় একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আলাদা আলাদা কথা বললেন তিনজন।
জাতীয় কোচ, অধিনায়ক এবং টেকনিক্যাল ডিরেক্টর।
শুনে মনে হল, ভারতীয় ফুটবল বিভ্রান্তির পানাপুকুরে মাথা চুবিয়ে রয়েছে। হাউটনের ভূত ঘাড় থেকে নামেনি এখনও। সব মিলিয়ে দু’মাস আগের সাফ কাপের জয়টিকা মুছে আবার পুনর্মুষিক ভবঃ।
গাদা গাদা প্রশ্ন আছে। উত্তর নেই। বিতর্ক আছে। সমাধান নেই। নানা কথা আছে। একমুখিতা নেই।
চ্যালেঞ্জ কাপ খেলতে আসা অধিকাংশ বিদেশি কোচ ভারতের ‘বেঁটে ফুটবলার’দের লং বল ফুটবল দেখে বিস্মিত। হাউটন যে স্টাইলে খেলাতেন এবং যা এখন আন্তর্জাতিক ফুটবলে অচল। স্যাভিও মিদেইরা সেই কথা শুনে ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, “আমাদের সেই কোয়ালিটি ফুটবলার নেই, যে জমিতে পাসিং ফুটবল খেলবে। হাউটন তো এ জন্যই লম্বা ফুটবলার চাইতেন। তখন সবাই বলতেন, মেসি কি লম্বা ফুটবলার? বুঝতে হবে, আই লিগ আর এখানে খেলা অনেক ফারাক।”
‘কোয়ালিটি ফুটবলার’ নেই, শুনে আবার বিরক্ত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। তাঁর মুখে প্রশ্ন, “এর মানে কী? লং বল খেলতে কোয়ালিটির দরকার হয় না?”
এ বার ডাচ টিডি রব বান। কাঠমান্ডুতে ভারতীয় দলকে কেমন দেখলেন? প্রথমে ‘বলব না’ ‘বলব না’ করেও বলে ফেললেন, “লং বলের সঙ্গে ভারতীয় স্টাইলও মেশানো উচিত। কোনও দেশ এক স্টাইলে খেলে না।” স্যাভিও যে ভাবে হাউটন-যুগে পড়ে আছেন, তা ক্রুয়েফ-মিশেলসের দেশের কোচ চাইবেন কেন? সাফ কথা, তাঁর হাউটনের স্টাইল পছন্দ নয়।
ফিলিপিন্স ম্যাচ হেরে জাতীয় কোচ বলেছিলেন, আই লিগে এক বিদেশি স্ট্রাইকারের বেশি খেলতে দেওয়া উচিত নয়। সাত বিশ্বকাপারের দল উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে মঙ্গলবার খেলতে নামার আগে সেই তত্ত্বকে আরও এগিয়ে দিলেন স্যাভিও। তাঁর এ দিনের মন্তব্য আরও সোরগোল ফেলার মতো। “দুটোর বেশি বিদেশিই খেলতে দেওয়া উচিত নয় ক্লাবে। আর রাজ্য লিগে তো একেবারে বন্ধই করে দেওয়া উচিত।” রব বানের গলায়েও সমর্থনের সুর। তিনিও বিদেশির সংখ্যা কমানোর পক্ষপাতী। বিদেশি স্ট্রাইকারেরও।
বিদেশি বিতর্কে কী বলছেন ভারত অধিনায়ক? আই লিগে বিদেশির সংখ্যা নিয়ে কিছু না বললেও, রাজ্য লিগের ক্ষেত্রে কোচ-টিডিকে সমর্থন করলেন সুনীল। “রাজ্য লিগে বিদেশি বন্ধ করে দিলে ভারতেরই লাভ।”
বিভ্রান্তি ও বিতর্কের চোরাবালিতে তলিয়ে যাওয়া ভারতীয় ফুটবলে আরও একটা প্রশ্ন উঠে আসছে। সিনিয়রদের সবাইকে বাতিল করে চ্যালেঞ্জ কাপ খেলতে আসার সিদ্ধান্ত কি শুধু স্যাভিওর একার ছিল? না, ফেডারেশন কর্তারা তাঁকে চাপ দিয়েছিলেন? এআইএফএফের খবর হল, কর্তারাই চাপ দিয়েছিলেন নতুন ফুটবলার বাছার জন্য। বোঝেননি, জাতীয় দল এত কম ম্যাচ খেলায় সিনিয়র দলে পরীক্ষার জায়গা নেই। নিশ্চিত ভাবে এঁরাই এখন স্যাভিওর পিছনে লাগবেন।
নেপালের ব্রিটিশ কোচ রবার্টস তিনটি ম্যাচ হেরেই পদত্যাগপত্র দিয়ে স্যাভিও-র উপর চাপ তৈরি করে দিলেন। স্যাভিও-র পরিকল্পনা কী? “আমার চুক্তি মে পর্যন্ত। তার আগে তো কিছু খেলা নেই।” বলে বিরক্তির সঙ্গে স্যাভিওর পাল্টা প্রশ্ন, “কী করব বলুন তো? সাফ কাপে শুনতাম, কেন সিনিয়ররা খেলে যাচ্ছে? কেন বিকল্প বাছা হচ্ছে না? আর এখানে শুনছি উল্টো। সিনিয়রদের কেন নেওয়া হল না? কোথায় যাব বলতে পারেন?”
রব বান আবার স্পষ্টই দলটার ফিটনেস নিয়ে হতাশ। “অনেকে দম নিয়ে সমস্যায় পড়েছিল। প্লেয়ারদের ফিটনেস নিয়ে কোনও ডাটা-ই নেই।” সিনিয়র দলের প্র্যাক্টিস নিয়মিত দেখলেও তাঁর দায় সিনিয়র জাতীয় দল নিয়ে নেই। মূল লক্ষ্য, ২০১৭ যুব বিশ্বকাপের ফুটবলার খোঁজা। একবার শুধু বলতে শোনা গেল, “জেজে এই দলে থাকলে ভাল হত। সুনীলের পাশে একটা লম্বা স্ট্রাইকার দরকার।”
বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় যে দলটার সঙ্গে কাল অর্থহীন ম্যাচে নামছেন সুনীলরা, সেই উত্তর কোরিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে কাঁদিয়ে দিয়েছিল। ১-২ হেরে তার পরে পর্তুগিজদের কাছে ৭ গোল খায়। বিশ্বকাপের পরে প্রকাশ্য তদন্তের সামনে দাঁড়াতে হয়েছিল কোচ কিম জং হুন-কে। এমনও গুজব রটেছিল, কোরিয়ান কোচকে বাড়ি তৈরির মজুরের কাজে নামানো হয়। প্রকাশ্য রাস্তায় ফুটবলারদের দিয়েই কড়া সমালোচনা করা হয় কোচকে। ফিফা তদন্তে নেমে দেখে, ওটা গুজবই।
বিশ্বকাপের সময় গুজব ছিল, উত্তর কোরিয়ান কোচকে নাকি ‘অদৃশ্য মোবাইলে’ ট্যাকটিকাল পরামর্শ দিতেন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট কিম জং ইল। আমাদের ফুটবল এত তলানিতে, নেতাদের কারও অত মাথাব্যথা নেই। তবে স্যাভিওর প্রতি পদক্ষেপ নজর রাখছেন ক্লাব কোচেরা। ওটাই তাঁর টেনশন। স্যাভিওর মন আরও তিতকুটে তাঁর দুই ফুটবলার জোয়াকিম আর আদিল খান চোট পেয়ে বসায়। একেই ভরসা করার ফুটবলার নেই, তার পরে চোট! হতাশা থেকেই হয়তো স্যাভিও নতুন বিতর্ক তুলে দিলেন পৈলান অ্যারোজ নিয়ে। কেন সেখানকার ভাল ফুটবলারদের তুলে নিল ক্লাবগুলো? কেন ভাল কোচিং হয় না? সুখবিন্দর সিংহের মতো কোচকে তাড়িয়ে ছেড়েছেন অ্যারোজের নন টেকনিক্যাল কর্তারা। প্রশ্ন তো উঠবেই। বিতর্ক কোথাও ভারতীয় ফুটবলকে ছাড়ছে না। রব বানের নতুন বিতর্কিত মন্তব্য, “আমাদের সড়গড় হতে কাঠমান্ডুতে আরও আগে আসা উচিত ছিল।” যা আবার কর্তা ও কোচেরা মানছেন না। দশরথ রঙ্গশালার এই মাঠেই ঠিক ২৫ বছর আগের ১২ মার্চ বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টির মধ্যে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান ৯৩ জন সমর্থক। ভারতীয় ফুটবল এমনিতেই নেপালে পদপিষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিশ্বকাপারদের রহস্যময় দল মঙ্গলবার কত শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাতের সামনে দাঁড় করাবে ভারতকে?




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.