তারুণ্যের মিছিলের মধ্যে সচিন নামছেন অধরা সেঞ্চুরির লক্ষ্যে
প্রধান বিরোধী দল খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি)-র ডাকা মহামিছিলকে কেন্দ্র করে কার্যত বন্ধের চেহারা নিয়ে ফেলা ঢাকা। ভেতরে ভেতরে চাপা উদ্বেগ আর আশঙ্কা। যানবাহন ব্যবস্থা রুদ্ধ।
যার জেরে ভারত-শ্রীলঙ্কা দু’টো দলের প্রাক-ম্যাচ প্র্যাক্টিসই বাতিল করে দিতে হল। বিস্ফোরণ-বিধ্বস্ত পাকিস্তানে এর আগে এশিয়া কাপ হয়েছে। সেখানে ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ সবাই খেলেছে। কিন্তু করাচির মতো জায়গাতেও প্র্যাক্টিস বন্ধের উদাহরণ নেই।
এশিয়া কাপ খেলতে আসা চারটে টিমই রয়েছে ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে। খেলা হচ্ছে মিরপুরের স্টেডিয়ামে। টিম বাসে করে মোটামুটি মিনিট পঁয়তাল্লিশের পথ, যদি না ঢাকার ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে পড়তে হয়। গত কাল রাতেও ঠিক ছিল বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে দু’টো টিমকে নিয়ে যাওয়া হবে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। ঠিক ছিল সোমবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ একই সঙ্গে রওনা হবে দু’টো টিম। কিন্তু সকালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অফিসাররা দু’টো দলকে বলেন, এ রকম উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে প্র্যাক্টিসে না যাওয়াই ভাল। দু’টো দলের ম্যানেজাররা সেই বক্তব্য শোনার পর আর ঝুঁকি নিতে চাননি।
নতুন হেয়ারস্টাইল। নতুন টুর্নামেন্ট। সচিনের ভাগ্য কি বদলাবে?
কেউ আড্ডা দিলেন অন্য টিমের ক্রিকেটারদের সঙ্গে। মনোজ তিওয়ারি আর অশোক দিন্দা সারাক্ষণ বিবিএম-এ খোঁজ নিলেন বাংলা-মুম্বই ম্যাচের। সৌরভ-সহ দু’উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেও দু’জনে আত্মবিশ্বাসী। “২৪৮ তো! এই ম্যাচ আমরাই জিতব।” দিন্দা তখনই বলে চলেছেন, “ম্যাচটা জিতি। তার পরে রোহিত (শর্মা)-কে গিয়ে একটু আওয়াজ দিয়ে আসতে হবে।” জেতার পর দু’জনেই উচ্ছ্বসিত। মনোজের মঙ্গলবারের ম্যাচেও খেলার কোনও খবর নেই। শেষ ওয়ান ডে ম্যাচে সেঞ্চুরি করার পরেও টানা মাঠের বাইরে। অন্যরা ব্যর্থ হচ্ছে দেখেও তাঁকে নামানো হচ্ছে না। সেই দুঃখ যেন সাময়িক উড়ে যাচ্ছে বাংলার ট্রফি জয়ে। বললেন, “দুর্দান্ত সাফল্য। আমরা দু’বার ভারতসেরা হলাম সীমিত ওভারের টুর্নামেন্টে। সবথেকে উজ্জ্বল দিক হচ্ছে, এ ভাবে খেলতে থাকলে আমরা রঞ্জি ট্রফি জেতা থেকেও বেশি দূরে নয়।” লক্ষ্মীরতন শুক্লকে নিয়ে এর পর যোগ করলেন, “লক্ষ্মীভাই এই সিজনে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছে। অনেক খেটেছে। অসাধারণ ট্যালেন্ট। আমি সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি যে, ও এক জন ম্যাচউইনার।” মনোজের সুযোগ পাওয়ার আশা না থাকলেও দিন্দা একটু ভাল জায়গায় আছেন। যদি চোট সারিয়ে ফেরা বিনয়কুমারের জায়গায় প্রথম এগারোয় দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বাংলার পেসারের উপর ভরসা রাখে টিম ম্যানেজমেন্ট। সেক্ষেত্রে মঙ্গলবার সকালে দিন্দাকে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও হতে পারে।
রাজনৈতিক মহামিছিলে অবরুদ্ধ ঢাকা। এ দিকে তারুণ্যের মহামিছিলে থমকে দাঁড়ানো ভারতীয় ক্রিকেট। দু’টো আলাদা সরণিই যেন তৈরি হয়ে গিয়েছে ধোনির টিমে। একটা মত হচ্ছে, পরিবর্তনের এটাই সময়। তরুণ রক্ত এনে নতুন প্রজন্মের টিম গড়তে শুরু করো। ধোনি স্বয়ং এই মতের সবথেকে বড় সমর্থক। অন্য দলটা মনে করছে, তরুণ রক্ত-ফক্ত আবার কী! পেশাদার পৃথিবী। পারফরম্যান্স করে জায়গা নিয়ে যাও। দলের গরিষ্ঠ সংখ্যক সিনিয়র ক্রিকেটার এই দলে এবং কোনও রাখঢাকের আর জায়গা নেই। সচিন তেন্ডুলকরও এই মতের শরিক।
ইতিহাস হয়তো বলছে যে, ধোনির ভারত অধিনায়ক হওয়ার পিছনে কোনও এক সচিন তেন্ডুলকরের বিরাট ভূমিকা ছিল। বিশ্বকাপ জিতে উঠেও তো সচিন বলেছিলেন, ধোনিই তাঁর দেখা সেরা ভারত অধিনায়ক। ধোনি-সহ টিমের তরুণ ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলে এখনও মনে হবে না যে, সচিনকে নিয়ে শ্রদ্ধায় কোনও ঘাটতি হয়েছে বলে। কিন্তু মতের ঠোকাঠুকি নিয়ে সোমবারের ঢাকার রাস্তার মতোই চাপা উদ্বেগ আর আশঙ্কার মেঘও যেন থেকে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার মিরপুরের মাঠে মাহেলা জয়বর্ধনের শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে যিনি নামছেন ফের তাঁর অধরা শততম সেঞ্চুরির লক্ষ্য নিয়ে তিনি চারপাশের এই পাল্টে যাওয়া আবহ সম্পর্কে বিলক্ষণ ওয়াকিবহাল। দিন কয়েক আগে শততম সেঞ্চুরি নিয়ে লেখালেখি হচ্ছিল, ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা কোহিনূর। এখন লেখা হচ্ছে বর্ষপূর্তি নিয়ে! কীসের বর্ষপূতি? না, নিরানব্বই থেকে একশোতম সেঞ্চুরি না পাওয়ার এক বছর পূর্ণ হয়ে গেল সোমবার। যত এ সব তাঁর কানে পৌঁছচ্ছে, তত যেন নিজের পরিশ্রমের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ম্যাচের আগের দিন প্র্যাক্টিসটা করা গেল না বলে যিনি হোটেলে বসে সবথেকে ছটফট করলেন তাঁর নাম সচিন তেন্ডুলকর। বিকেলে নামলেন জিম করতে। ফেরার পথে বেরিয়ে এল ব্যাট-বল হাতে না নিতে পারার যন্ত্রণা। “ম্যাচের আগের দিন প্র্যাক্টিসটাই করতে পারলাম না!” বলে দ্রুত খোঁজ নিতে শুরু করলেন, “খুব কি টেনশন আছে নাকি এখানে? কালও কি সব বন্ধ থাকবে নাকি?” ম্যাচ নিয়ে কোনও সংশয়ের খবর নেই বলায় সেই শিশুর মতো হাসি। যা দেখে অবধারিত ভাবে মনে হবে, বয়স নিয়ে কথা উঠতে পারে যে, মন্থর হয়ে গিয়েছেন। রিফ্লেক্স কমে গিয়েছে। ক্রিকেট নিয়ে তাঁর অনুরাগ, আকুতিতে কোনও তফাত নেই। এখনও সেই ষোলো বছরের ঝাঁকরা চুলের সচিন তেন্ডুলকরের মতোই। তারুণ্যের মহামিছিলের সামনে রুখে দাঁড়ানোর জন্য এটাই তাঁর সেরা অস্ত্র।
হেয়ারস্টাইল পাল্টে ফেলেছেন। অতিরিক্ত রং সহকারে। হঠাৎ নতুন হেয়ারস্টাইল? জিজ্ঞেস করায় বললেন, “অনেক দিন এক রকম চলছিল। তাই ভাবলাম এ বার একটু অন্য রকম কিছু করি।” তার পরেই জিভ কেটে, “জানি না কেমন লাগছে। আমি করে তো ফেললাম।” এর মধ্যেই এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রধান আশরাফুল হক শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলেন তোমার হান্ড্রেড্থ হান্ড্রেডটা এখানেই হচ্ছে। সচিন আকাশের দিকে তাকালেন। “থ্যাঙ্কস। আপনাদের প্রার্থনা আর শুভেচ্ছা থাকলে আশা করি হবে। প্রার্থনা করুন যেন হয়।” শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, জীবনের মতো ক্রিকেটও কখনওসখনও কী রকম সব নিষ্ঠুর বাঁক নিয়ে উপস্থিত হতে পারে!
নিরানব্বই আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি থাকা একটা লোক। ক্রিকেট দুনিয়ায় যাঁর নামই হয়ে গিয়েছে, ‘হান্ড্রেড-ডুলকার।’ অথচ একটা সেঞ্চুরির জন্য তাঁকেই কি না কী দীর্ঘ প্রার্থনায় বসে থাকতে হচ্ছে!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.