|
|
|
|
সঙ্কটে সারস্বত-কেন্দ্র/২ |
প্রাচীনতম গ্রন্থাগারও ধুঁকছে আর্থিক সঙ্কটে |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
মেদিনীপুর শহরে জেলা গ্রন্থাগারের পাশাপাশি রয়েছে আরও একটি প্রাচীন গ্রন্থাগার। ঋষি রাজনারায়ণ বসুর নামেই নামকরণ করা হয়েছিল এই গ্রন্থাগারটির। এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠা সেই ১৮৫১ সালে। ২.৭৩ একর জমির উপরে গ্রন্থাগারটি তৈরি হয়। অবশ্য ওই জমির মধ্যে একটি পুকুরও রয়েছে। এক সময়ে এই গ্রন্থাগারের জৌলুস ছিল সব থেকে বেশি। আর এখন? পলেস্তারা খসে পড়ছে। ভেঙে পড়ছে ছাদ। সংস্কারই বা হবে কী করে! অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু বার বার সরকারের কাছে আবেদন করেও ফল মেলেনি।
গ্রন্থাগারটি তৈরির জন্য শহরের সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষই উদ্যোগী হয়েছিলেন। প্রথমে গ্রামীণ গ্রন্থাগার হিসাবেই গড়ে উঠেছিল। ১৯৮৭ সালে শহর গ্রন্থাগারের মর্যাদা দেয় সরকার। পুকুরের সামনে তৈরি করা হয় পার্ক। পুকুরে বোটিংয়েরও ব্যবস্থা করার উদ্যোগ হয়েছিল এক সময়ে। চারদিক আলোকিত করারও পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে কিছুই হয়নি। এখন চার দিকে জঙ্গল আর আবর্জনা। গ্রন্থাগারের ভিতরে কয়েকটি মাত্র চেয়ার-টেবিল। যেখানে গুটিকয় মানুষ গিয়ে পত্র-পত্রিকা পড়েন। দায়িত্বপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক পঙ্কজ রায় বলেন, “অর্থ না থাকায় গ্রন্থাগারের উন্নয়ন স্তব্ধ। প্রাচীন গ্রন্থাগারের উন্নয়নের জন্য সব স্তরেই বহু আবেদন-নিবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি।” |
|
প্রায় ফাঁকা রাজনারায়ণ স্মৃতি পাঠাগার। ছবি: কিংশুক আইচ। |
অথচ এই গ্রন্থাগারে রয়েছে বহু পুরনো বই, পুথি। যেগুলি অতি সাধারণ ভাবে লাল কাপড়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। সংরক্ষণের ন্যূনতম পরিকাঠামোও নেই। নেই কর্মী ও অর্থবল। চার জন কর্মী থাকার কথা। গ্রন্থাগারিক, সহ-গ্রন্থাগারিক, দফতরি-কাম-বুক বাইন্ডার এবং নাইটগার্ড। বর্তমানে রয়েছেন মাত্র দু’জন কর্মী। সহ-গ্রন্থাগারিক এবং দফতরি-কাম-বুক বাইন্ডার। দু’জনকেই সব কাজ করতে হয়। সর্বক্ষণের সঙ্গী আর্থিক সঙ্কট। ভূমি দফতরকে কর দেওয়া হয়নি অনেক বছর। প্রায় ৬০ হাজার টাকা বকেয়া। পুর-করও বাকি ৬০ হাজার টাকার বেশি। এর বাইরে বিদ্যুৎ বিল, বই বাঁধাই-সহ বিবিধ খরচ রয়েছে। বই কেনার জন্য বছরে মাত্র ১৯ হাজার ৫০০ টাকা পায় এই গ্রন্থাগার। ওই টাকায় কী ভাবেই বা কী হবে! প্রতিনিয়ত ভেঙে পড়ছে ছাদ। সংস্কার খুবই জরুরি। যে কোনও দিন বড় অঘটনের আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু টাকা নেই।
এক সময়ে এই গ্রন্থাগারে প্রতিদিনই বহু মানুষ আসতেন। গ্রন্থাগারে বসে বই পড়তেন। বাড়িতে বইও নিয়ে যেতেন। ১৬ হাজার ৪৭৮টি বই রয়েছে এখানে। সদস্যসংখ্যা ২৬১৯ জন। তবে নতুন বই তেমন একটা কেনা হয় না অনেক দিন। মানুষও ক্রমেই মুখ ফেরাচ্ছেন।
|
(চলবে) |
|
|
|
|
|