নতুন দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আড়ম্বর সহকারে জাতীয় সন্ত্রাস প্রতিরোধ কেন্দ্র স্থাপনের কথা ঘোষণা করেছেন। রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে প্রাক্ আলোচনা হয়নি। তা নিয়ে বেশ কয়েকটি রাজ্য-মুখ্যমন্ত্রী আপাতত সোচ্চার। অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সংবিধানে রাজ্যগুলির উপর আরোপিত। তথাকথিত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস ছাপিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইতস্তত আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটছে। এখানে-ওখানে হিংসার অজগর ফুঁসছে, কোথাও-কোথাও গুপ্তহত্যার পালা চলছে। নিছক কোনও স্থানীয় সমস্যা এ ধরনের প্রবণতার উৎস নয়, কোনও-কোনও বিশেষ গোষ্ঠী জাতীয় সংহতি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার জন্য দেশ জুড়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, ওদের পর্যুদস্ত করতেই, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, কেন্দ্রকে বাধ্য হয়ে এগিয়ে আসতে হয়েছে। অন্য পক্ষে, ব্যাকরণ অবশ্যই বলবে, রাজ্যগুলির এক্তিয়ারে কেন্দ্রের নাক গলাবার অধিকার নেই।
এই বিশেষ সমস্যা নিয়ে মাথাব্যথা স্বাধীনতা-প্রাপ্তির বছর দশেকের মধ্যেই শুরু হয়েছিল নাগা-অধ্যুষিত অঞ্চলে বিদ্রোহের লক্ষণ দেখা দেওয়াতে। আরও কয়েক বছর গড়িয়ে গেলে ক্রমশ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও আইনশৃঙ্খলাহানি ঘটিত ব্যাপক অশান্তি দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ফৌজ ও পুলিশ বাহিনী ইত্যাকার হাঙ্গামার ইতি ঘটাতে কতটা নাক গলাবে, রাজ্যের অনুমতি ছাড়া নাক গলাতে পারে কি না, এক বার কেন্দ্রের নাক প্রলম্বিত ছায়া ফেলতে শুরু করলে তা কি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত হয়ে যাবে না, এই গোছের প্রসঙ্গ নিয়ে তর্ক এখনও অব্যাহত। শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলে কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী বা ফৌজ বিনা আহ্বানে, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত কলকারখানায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হতে পারে কি না, তা নিয়েও অতীতে, অন্তত পশ্চিম বাংলায়, অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে অবশ্য অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস বলতে সরকারি বয়ানে মাওপন্থীদের আচরণ-বিচরণের প্রতি প্রধানত ইঙ্গিত করা হয়ে থাকে। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে দুটি আলাদা সমস্যা পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠিত প্রায় সব রাজনৈতিক দলই মাওবাদী জুজুর ভয়ে সতত সন্ত্রস্ত, তাদের বিরুদ্ধে যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কারওই আপত্তি নেই, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত সহায়তা পেলেও খুশির হাওয়া বইবে। কিন্তু পাশাপাশি সমস্যা: ওরে বাবা! কেন্দ্র সন্ত্রাস দমনের ছুতোয় উড়ে এসে জুড়ে বসবে না তো! রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা কি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর খোদার বান্দা বনে যাবেন? বিতর্কের পালা জমে উঠেছে, বিতণ্ডাটি সহজে নিরসন হওয়ার নয়। কারণ সজ্ঞানে কেউই স্বাধিকার খোয়াতে চান না, বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র ক্ষমতা-মানসিকতা সর্বকালে সর্বব্যাপী! |
পরিণাম? উর্দি, হাতিয়ার, রাষ্ট্রশক্তি। |
অনেক উপন্যাস-প্রণেতা নায়কনায়িকাকে একটি সংস্থানে পৌঁছে দিয়ে তার পর কাহিনিটিকে কোন দিকে মোড় দেবেন মনস্থির করতে না-পেরে হাল ছেড়ে দিয়ে বলেন, ‘ওদের আমি এখানেই ছেড়ে দিলাম’, আপাতত কেন্দ্রীয় বাহিনী-কর্তৃক হস্তক্ষেপ জড়িত কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের সমস্যাটির নিরসন নিয়ে জল্পনা তেমনই অনিশ্চয়তার কুয়াশায় জড়ানো, কী ঘটতে পারে তা অনেকটাই নির্ভর করবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাজনৈতিক দলগুলির দ্বন্দ্ব-সমীকরণের বিন্যাস কোন রূপ নেয় তার উপর। ইতিমধ্যে সমান গুরুত্বপূর্ণ অন্য একটি প্রসঙ্গে যেতে চাই। কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশ থেকে লক্ষ্মীছাড়া মাওবাদী-সুদ্ধ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী নির্মূল করতে চাইছেন। রাজ্যের মন্ত্রীরাও অধিকাংশই মাওপন্থীদের সম্পর্কে সমপরিমাণ আতঙ্কে অস্থির। আমার-আপনার মতো সাধারণ গৃহস্থ ব্যক্তিও রক্তাক্ত হত্যা-মিছিলের মধ্যবর্তিতায় সমাজবিপ্লব সংসাধনের স্বপ্নে আনন্দে দিগ্বিদিগ্জ্ঞানশূন্য নই, একটি কঠিন বাস্তব তথাপি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের পশ্চিম বাংলার কথাই ধরা যাক। সরকারের তরফে থেকে-থেকে উল্লসিত ঘোষণা, কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ বাহিনী জঙ্গলমহলে ক্রমশ বিপুল সাফল্য পাচ্ছে, এক মাওবাদী নেতা মুখোমুখি সংগ্রামে জবাই হয়েছে, বাঁকুড়ার প্রত্যন্তে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মাওবাদী মহিলা স্কোয়াডের তিন জন অতি-বিপজ্জনক সদস্যকে গ্রেফতার করা গেছে, বীরভূম-ঝাড়খন্ডের সীমান্তে অস্ত্রশস্ত্র সমেতও দু’জন মাওবাদীকে পাকড়াও করা সম্ভব হয়েছে। অনুতপ্ত মাওবাদীরা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করছে এমন খবরও মাঝেমধ্যে প্রচারের আলো পাচ্ছে। মুশকিল হল, এই ভীষণ-ভীষণ বর্ণনার মাওবাদীদের মুখাবয়ব যখন সংবাদপত্রে ছাপা হয়, কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে ওঠে, কয়েকটি অতি নিরীহ দেখতে ভ্যাবাচাকা খাওয়া কিশোর-কিশোরীর মুখ দেখতে পাই, নয়তো এক ভগ্নস্বাস্থ্য লোলচর্ম ছিন্নকন্থা কোনও আদিবাসী পুরুষকে। আদালতে যখন ধরা-পড়া সন্ত্রাসবাদীদের পরিচয় পেশ করা হয়, নামগুলি হয় মাহাতো, নয় মুর্মু, নয় সোরেন, নয়তো হাঁসদা কিংবা টুডু বা ওরাঁও, আদিবাসী পদবির অন্তবিহীন মিছিল। আমাদের রাষ্ট্রশক্তি তো সন্ত্রাসকে অবলুপ্ত করতে কোমর বেঁধে নেমেছে। হিংস্র, ক্রূর, পিশাচতুল্য পথভ্রষ্ট মাওপন্থীদের সংহারই তো সরকারের একাগ্র লক্ষ্য। তবে সব কিছু এমন গুলিয়ে যাচ্ছে কেন?
আমরা, বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজ, এই মাহাতো-সোরেন-মুর্মু-টুডুদের আবহমানকাল থেকে চিনি। শীতের শৌখিন ঋতুতে মধুপুর বা শিমুলতলা অথবা রিখিয়ায় সস্তায় বাড়িভাড়া করে এদেরই তো অতি-নগণ্য ভৃত্য হিসেবে নিয়োগ করা হত। এরা স্বগৃহে যে মুরগি পুষত নামকাওয়াস্তে দাম ধরে দিয়ে অথবা কোনও পয়সাকড়ি না দিয়েই তাদেরই দিয়ে কেটেকুটে রসালো রান্না চড়িয়ে চড়ুইভাতি করা হত। তারাই সকালে এসে ঘর ঝাঁট দিত, বিছানা তুলত, কুয়োতলায় নিয়ে গিয়ে বাবুদের-গিন্নিদের কাপড়জামা কাচত। বাগানে খুরপি চালিয়ে গোলাপ ফোটাত, কচিকাঁচাদের কাঁধে চড়িয়ে বৈকালিক পরিভ্রমণে নিয়ে যেত। এরা সততা, বশ্যতা তথা ভীরুতার প্রতীক ছিল। এদের বিশ্বস্ততার প্রতিদান হিসেবেই হয়তো কলকাতার উঠতি যুবক সম্প্রদায় সাপ্তাহান্তিক প্রমোদবিহারে এসে অপাপবিদ্ধা সদ্য-কুঁড়ি-ফোটা কোনও আদিবাসী কিশোরীকে শাল-মহুয়ার জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে মহুয়ায় মাতাল করে ফুর্তি লুঠত। এরাই জঙ্গলমহল ও সংলগ্ন অঞ্চলে এখন মাওবাদী বিভীষিকা! এই মস্ত দৃশ্য-পরিবর্তন কী করে ঘটল?
আমরা বাঙালি মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় সামাজিক-সাংস্কৃতিক উজ্জীবনের কথা বলি। দেশের অন্যান্য অঞ্চলবাসীর তুলনায় আমরা কতটা প্রখরতর সমাজ-সচেতন তা নিয়ে গর্ব-অহঙ্কারের অন্ত নেই। কিন্তু এটা সম্ভবত কখনও ভেবে দেখিনি যে ন্যায়শাস্ত্রের একটি বিশেষ উপাদান কার্যকারণ সম্পর্ক। যারা একদা তৃণাদপি সুনীচেন হয়ে ছিল তারাই যদি আজ অতি ভয়ঙ্কর মাওবাদীতে রূপান্তরিত, তার জন্য আমাদের অন্তত কিছু দায়বদ্ধতা কি নেই? তাদের বেগার খাটিয়েছি, তাদের মুরগি লুঠ করে চড়ুইভাতি করেছি, তাদের নিষ্পাপ কন্যকাদের নিয়ে লাম্পট্যে মেতেছি, ইতিহাসধারা কি তাই চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করতে চাইছে না যে কার্যকারণ সম্পর্কের প্রক্রিয়া থেকে কারও পালাবার উপায় নেই?
তবে সমস্যাটি আরও অনেক জটিল। কেন, তা ব্যাখ্যার জন্য একটু স্মৃতিচারণে প্রবৃত্ত হতে হবে। আমার শৈশব কেটেছে বাংলার স্তিমিত মফস্সল শহরে, গত শতকের বিশের দশকের উপাম্তে তিরিশের দশকের উন্মেষে। পরে জেনেছি, বাংলার অগ্নিযুগ ছিল সেটা। তখন তো ও সব অলঙ্কার-সমৃদ্ধ নামটাম জানতাম না। কিন্তু হাওয়ায় কেমন যেন গা-ছমছম উত্তেজনা-উন্মাদনা ছিল। গুরুজনদের কথাবার্তা, ঈষৎ-বোঝা ঈষৎ-না-বোঝা, ঝিমিয়ে-থাকা শহরের রাস্তায় মাঝে-মধ্যে মিছিলের উত্তেজনা, লালপাগড়ি খাকি পোশাকের সমারোহ, তার পর ক্ষণিকের ফুল যায় ঝরিয়া, কিন্তু খানিক সময়ের ব্যবধানে ফের আলোড়ন। আমাদের বাচ্চাদের প্রিয় খেলা ছিল এক গুলিতে কে কত সাহেব মারতে পারে তা নিয়ে প্রতিযোগিতা। সাহেবরা বিদেশ থেকে এসে আমাদের টুঁটি টিপে ধরেছে, আমরা ওদের লাথি-ঝ্যাঁটা খাচ্ছি, আমাদের দাদা-কাকা-জ্যাঠাদের কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে গিয়ে কারাকক্ষে নিক্ষেপ করছে, হান্টারের চাবুক মেরে-মেরে নিস্তেজ করে দিচ্ছে, দ্বীপান্তরে পাঠাচ্ছে, ফাঁসিতে ঝোলাচ্ছে। আমরা উৎপীড়িত, অত্যাচারিত, বাড়িতে বড়রা রাগে-ক্ষোভে ফুঁসছেন, শোকে কাঁপছেন, অনেকটাই বুঝতে পারছি না, কিছু কিছু পারছি। মহাত্মা গাঁধীর নাম উচ্চারিত হতে শুনছি, কিন্তু আমাদের কাছে অনেক বেশি রোমাঞ্চকর ভগৎ সিংহ, জগৎগুরু শুকদেবদের নাম, আমাদের শহরের ত্রয়ী তরুণ বিনয় বসু-বাদল গুপ্ত-দীনেশ গুপ্তের নাম, সূর্য সেন-গণেশ ঘোষদের নাম। এঁরা মস্ত বীর। এঁরা সাহেবদের উৎখাত করার মহৎ ব্রতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমরা বাচ্চারাও সাহেব মারব, অন্তত সাহেব মারার মহৎ খেলায় মাতব। সাধারণ গৃহস্থ পরিবারে তখন প্রাচুর্য ছিল না, থাকলেও মিতব্যয়িতার অনুশাসন সহসা মান্যতা পেত, শিশুদের খেলার সরঞ্জামও প্রায় নেই বলা চলে। আমাদের অতএব শৌর্য-প্রদর্শনের নিত্য বৈকালিক অনুষ্ঠান। এক জন শুরু করল: এক গুলিতে তিন সাহেব মারব, সঙ্গে সঙ্গে অন্য এক জনের দম্ভোক্তি: এক গুলিতে সাত সাহেব মারব, পরক্ষণে অন্য আর এক জনের বিঘোষণা: এক গুলিতে বাইশ সাহেব খতম। এমনি করে অন্তহীন মুখব্যাদান। গোধূলি লগ্ন শেষ, অন্ধকার ক্রমশ প্রগাঢ়, খেলা ভাঙার মুহূর্তে কারও মুখ থেকে দশ হাজার সাহেব মারার প্রতিজ্ঞা উচ্চারণের মধ্য দিয়ে খেলার অবসান সে দিনের মতো। পর দিন বিকেলে একই খেলা। দিনের পর দিন। শিশুদের প্রতিজ্ঞার অক্ষৌহিণী বাহিনী।
অস্বীকার করে তো লাভ নেই আমরা শিশুকুল সাহেবদের ঘৃণা করতে শিখেছিলাম। অক্ষমের ঘৃণা হলেও ঘৃণা ঘৃণাই। অরুণকুমার সরকারের কবিতার পঙ্ক্তি, ‘শুধু প্রেম নয়, কিছু ঘৃণা রেখো মনে’, সেই ঘৃণাই তো আমাদের অস্ফুট মানসে জায়গা জুড়ে ছিল, এবং তা সহজে মিলিয়ে যায়নি।
আশি বছর আগে ভিনদেশি সাহেবদের প্রতি যে ঘৃণা পোষণ করতে শিখেছিলাম, সাহেব খতমের অসহায় মৌখিক বাগাড়ম্বরে যে ঘৃণা নির্বাপিত হত, বর্তমান সময়ে জঙ্গলমহলে বেড়ে ওঠা আদিবাসী ঘরের ছেলেমেয়েদের মনেও কি অনুরূপ ঘৃণা সঞ্চারিত হচ্ছে না? এবং তা কি সেই সরঞ্জামহীন সাহেব-মারার মতো নিরামিষ-গোত্রীয় হবে? এই ছেলেমেয়েরা চোখের সামনে দেখছে তাদের পিতা-খুড়ো-জ্যাঠাদের লাশ বস্তাবন্দি করে লাঠিতে ঝুলিয়ে শহরে চালান করা হচ্ছে, তাদের দাদাদের-দিদিদের হাত বেঁধে, কোমরে দড়ি পরিয়ে কোথায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন সরকারই তো জঙ্গলমহলে টেলিভিশন বিলোচ্ছে, সেই টেলিভিশন মারফতই তো তারা অবগত হতে পারছে, তাদের আত্মজনরা নাকি মাওবাদী, তাদের নিধনই জাতীয় নিরাপত্তার রক্ষাকবচ। এই আত্মজনরা যত জবাই হবে, জাতীয় স্বস্তি ও উল্লাস ততই গভীরতর হবে।
খবরের কাগজ, রেডিয়ো-টেলিভিশন যা-ই বলুক, এই শিশুসন্তানরা তো তাদের দাদা-দিদি-বাপ-খুড়া-জ্যাঠাদের ভালবাসে! এই আত্মজনদের উপর যারা অত্যাচার চালায়, তাদের তো তারা ঘৃণা করতে শিখবে, সেই ঘৃণা থেকে প্রতিশোধস্পৃহার স্ফুরণ হবে, সহিংস প্রতিশোধ। আর এই প্রজন্মের শিশুদের পক্ষে অস্ত্র-সংগ্রহ আদৌ ততটা দুরূহ নয়। কী-কী ঘটতে পারে তা হলে? তা ছাড়া, তাদের আত্মজনদের নিধন যে-জাতির প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, এই শিশুরা কি সেই জাতির সঙ্গে একাত্মবোধ থেকে নিজেদের ক্রমশ সরিয়ে নিয়ে যেতে শুরু করবে না?
আপাতত এ-সমস্ত ভাবনার জট থেকে আমার মুক্তি নেই। |