কোষাগারে টান, তবু বাজেটে
রাজ্যের জন্য দরাজ হবে রেল
রেলের এখন নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা। তবু দলনেত্রীর নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গের প্রকল্পগুলির জন্য রেল বাজেটে দরাজহস্তই হতে চলেছেন দীনেশ ত্রিবেদী। বুধবার সংসদে রেল বাজেট পেশ হওয়ার আগে মন্ত্রক ও অন্যান্য সূত্রে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে আজ।
রাজ্যের রেল প্রকল্পগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য অনেক আগে থেকেই দীনেশকে বলে রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার ঠিক আগে গত শুক্রবার মমতা দলীয় সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, বৈঠকের পরে দীনেশের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী সেখানে রেলমন্ত্রীকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গের চলতি প্রকল্পগুলিতে বরাদ্দ যেন কোনও ভাবেই না কমানো হয়। রাজ্যের তৃণমূল সাংসদরা নিজ-নিজ এলাকার জন্য যে সব প্রকল্পের জন্য দরবার করেছেন, বাজেটে যাতে সেগুলি জায়গা করে নিতে পারে, তা-ও রেলমন্ত্রীকে খতিয়ে দেখতে বলেছেন মমতা।
প্রাক্তন রেলমন্ত্রী বিশেষ ভাবে জোর দিয়েছেন তাঁর সময়ে ঘোষিত মেট্রো সম্প্রসারণ প্রকল্পগুলির উপরেও। গত রেল বাজেটে মমতা রাজ্যের একাধিক মেট্রো প্রকল্পের জন্য প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করে গিয়েছিলেন। এ বারের বাজেটেও যাতে ওই প্রকল্পগুলিতে বড় মাপের অর্থ বরাদ্দ করা হয়, সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে দীনেশকে। মন্ত্রক সূত্রের খবর, মমতা গত বার যে ৭টি নতুন মেট্রো রুটে সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিলেন, এ বারের বাজেটে তার মধ্যে অন্তত দু’টো রুটে মেট্রো চালানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারেন দীনেশ। পাশাপাশি কাঁচরাপাড়া, ডানকুনি বা মাঝেরহাটের মতো রেল প্রকল্পগুলিতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হতে চলেছে বলে খবর। নিত্যযাত্রীদের যন্ত্রণা কমাতে হাওড়া ও শিয়ালদহ শাখায় আরও বেশি লোকাল ট্রেন ও মেট্রো রেলে যাত্রী-সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ‘ওয়ার্নিং সিস্টেম’ রাখার বিষয়ে স্পষ্ট কোনও ঘোষণা করতে পারেন দীনেশ। একটি হাওড়া-চেন্নাই দুরন্ত এবং একাধিক নতুন দূরপাল্লার ট্রেন ওই তালিকায় থাকতে চলেছে বলেও খবর। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা যে ‘ভিশন ২০২০’ সংসদে পেশ করেছিলেন, দীনেশ সেই দিশা মেনেই চলার চেষ্টা করেছেন বলেই মন্ত্রক সূত্রের খবর।
কিন্তু ঘুরে-ফিরে মূল যে প্রশ্নটা উঠে আসছে তা হল, টাকা আসবে কোথা থেকে?
বকেয়া প্রকল্প রূপায়ণ কিংবা যাত্রী সুরক্ষার জন্য গঠিত নিরাপত্তা কমিটি বা আধুনিকীকরণ কমিটি যে সব সুপারিশ করেছে, তার বাস্তবায়ন করতে হলে প্রয়োজন কয়েক লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু দশ বছর ধরে ভাড়া না বাড়িয়ে রেলের সঙ্কট এখন চরমে। মন্ত্রকের কর্তারাই জানাচ্ছেন, গত ডিসেম্বরে ১০০ টাকা আয় করতে রেলের ১০৫-১০৬ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছিল। মমতা গত রেল বাজেটে ব্যয় ও আয়ের অনুপাত (অপারেটিং রেশিও) ৯২.১ হওয়ার প্রতাশা জানিয়েছিলেন। ২০১০-১১-র শেষে অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়। অপারেটিং রেশিও দাঁড়ায় ৯১.১। কিন্তু চলতি ২০১১-১২-তে অনেকটা সময়েই অনুপাতটা বেড়ে ৯৫-৯৬-এ পৌঁছে গিয়েছিল বলে মন্ত্রকের কর্তাদের প্রাথমিক হিসেব। যদিও সারা বছরের নিরিখে সংখ্যাটা শেষ পর্যন্ত ৯২-এর কাছাকাছি দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন রেল-কর্তারা।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় রেল মন্ত্রককে কী পরিমাণ বাজেট সাহায্য দেন তা দেখতে মুখিয়ে রয়েছে সব মহল। গত বছর অর্থ মন্ত্রক কুড়ি হাজার কোটি টাকা সাহায্য দিয়েছিল রেলকে। এ বছর রেলের বিভিন্ন কমিটি অর্থ মন্ত্রকের কাছ থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য দরবার করায় প্রায় পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা অর্থ সাহায্য চাওয়া হয়েছে। রেল মন্ত্রকের আশা, অন্তত তার অর্ধেক পাওয়া যেতে পারে।
জল্পনা রয়েছে ভাড়া বৃদ্ধি নিয়েও। দীনেশ ব্যক্তিগত ভাবে ভাড়া বাড়ানোর পক্ষে হলেও ঘোর আপত্তি রয়েছে মমতার। দীনেশের পক্ষে সেই আপত্তি অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়। মাসুল বাড়ানোর মতো সিদ্ধান্ত নিলেও যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধির সম্ভাবনাও আসন্ন বাজেটে কম বলেই মনে করছে দীনেশ-ঘনিষ্ঠ মহল। তবে রেল মন্ত্রক সূত্র বলছে, এখনও যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধির তিনটি মডেল তৈরি করে রাখা হয়েছে।
• সব শ্রেণিতে ভাড়া বৃদ্ধি অথবা শুধু বাতানুকূল শ্রেণিতে,
• ডিজেলের দাম যখন-যেমন বাড়ে-কমে ভাড়া সেই অনুযায়ী বাড়ানো-কমানো এবং
• যাত্রী ভাড়া দশের গুণিতকে (রাউন্ড অফ) করা। যদি শেষ মুহূর্তে মমতা ভাড়া বৃদ্ধিতে মত দেন সে ক্ষেত্রে বাজেটে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
তবে মন্ত্রক স্বীকার করে নিয়েছে, আয় যে ভাবে নেমে গিয়েছে, তাতে রেল চালানোই কঠিন। সেই সঙ্কট আংশিক মেটাতে রেল বাজেটের সাত দিন আগেই পণ্য পরিবহণে বিশেষ করে কয়লা খাদ্য শস্য, সারের ক্ষেত্রে চার থেকে প্রায় কুড়ি শতাংশ মাসুল বাড়ানো হয়েছে। রেল-কর্তাদের দাবী, এর ফলে বছরে পনেরো থেকে কুড়ি হাজার কোটি টাকা রেলের ঘরে অতিরিক্ত আসবে। তাতে কিছুটা বলেও ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে। যাত্রী ভাড়া থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭০০ কোটি টাকা কম আয় হয়েছে এ বছর। পণ্য পরিবহণেও ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধরা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ২৯৪ কোটি টাকা কম আয় হয়েছে। তহবিলের টান মেটাতে ইতিমধ্যেই ট্রেনে আসন সংরক্ষণের সীমা তিন মাস থেকে বাড়িয়ে চার মাস করা হয়েছে। পরে বাড়ানো হল মাসুলও।
রেলের কর্তারাই মানছেন কয়লা-সহ বিভিন্ন পণ্যে মাসুল বাড়ানোয় বাজারে সব কিছুরই দাম বেড়ে যাচ্ছে। এমনিতেই কয়লার দাম চড়ছে। মাসুল বাড়ানোয় দিনে ১২ রেক কয়লার চাহিদা মেটাতে দিনে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা বেশি গুনতে হবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে। ফলে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিও দাম বাড়ানোর কথা ভাবতে শুরু করে দিয়েছে। যদিও রেলের প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুর বলেন, “গত বছর বাজেটে যত সংখ্যক যাত্রী পরিবহণ করার কথা বলা হয়েছিল, নতুন ট্রেন দিয়েও তত যাত্রী হয়নি। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি পণ্য পরিবহণেও। উল্টে রেল চালানোর খরচ বেড়েছে। তাই মাসুল না বাড়িয়ে রেলের আর কোনও উপায় ছিল না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.