উত্তরপ্রদেশের ভোটের পর দুর্বল কংগ্রেসের বিরোধিতার রাশ ফের নিজেদের হাতে তুলে নিতে সক্রিয় হল বিজেপি। আজ সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিন থেকেই অ-কংগ্রেসি দলগুলিকে নিয়ে সেই কৌশল রচনার কাজ শুরু করে দিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির এই প্রচেষ্টাকে ভেস্তে দিতে ও সংসদ সচল রাখতে লোকসভার নেতা তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এ দিন লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু বিজেপির পক্ষ থেকে কোনও প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি।
বিরোধীরা তো বটেই, সংসদের গত অধিবেশনে সরকারের শরিক ও সমর্থক দলগুলিরও আপত্তির মুখে লোকপাল বিল রাজ্যসভায় পাশ না করিয়েই মধ্যরাতে সংসদ মুলতুবি করে দেওয়া হয়েছিল। বিজেপি নেতৃত্ব চান, আগামিকাল রাজ্যসভার কাজ শুরু হতেই সেই ঘটনার জন্য জবাবদিহি করুক সরকার। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি এ দিন বলেন, “প্রথা অনুযায়ী গত অধিবেশন ঠিক যেখানে শেষ হয়েছিল, এ বারের অধিবেশন সেখান থেকেই শুরু হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি থেকে অন্য দলের নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। গত অধিবেশনে তৈরি হওয়া আমাদের ঐক্য এখনও অটুট।” রাজ্যসভায় জেটলি যখন অ-কংগ্রেসি দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে কংগ্রেস-বিরোধিতায় নামছেন, তখন লোকসভায় বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে কুঠারাঘাতের’ অভিযোগ তুলে মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণের কৌশল নিচ্ছেন।
সুষমা এ দিন বলেন, “আজ রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্রের উল্লেখ থাকলেও সেটি যে যুক্তরাষ্ট্রীয় ধর্ম মানছে না, সে বিষয়ে সরকার নীরব থেকেছে। এ জন্য আমি আগামী কাল সংশোধনী প্রস্তাব আনছি। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাতের বিষয়ে পৃথক আলোচনার নোটিসও পাঠানো হচ্ছে।”
বিজেপির পাল্টা কৌশল নিচ্ছে সরকারও। আজ সংসদের কক্ষে আডবাণী, জেটলি ও সুষমা স্বরাজের সঙ্গে প্রণববাবুর যে বৈঠক হয়, সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয় অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান যশবন্ত সিন্হাকেও। সংসদ সচল রাখার ব্যাপারে বিজেপি নেতৃত্বের কাছে আবেদন জানান তিনি। আর্থিক সংস্কার সংক্রান্ত কয়েকটি বিল পাশের ব্যাপারেও বিজেপির সাহায্য চান প্রণববাবু। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব সরকারকে কোনও প্রতিশ্রুতিই দেননি। বৈঠকে উপস্থিত সংসদীয় মন্ত্রী পবন বনশলের যুক্তি, সংসদের গত অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যাওয়ায় সেই সময় লোকপাল বিলে দেওয়া সংশোধনীগুলিও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। জেটলির পাল্টা বক্তব্য, সরকার সেই তত্ত্বে বিশ্বাসী হলে নতুন করে সংশোধনী দেওয়া হবে।
বাজেট পেশ ও সেটিকে এ মাসের মধ্যে পাশ করতেই যে হেতু চলতি অধিবেশনের প্রথম অর্ধের সিংহভাগ সময় চলে যাবে, তাই সরকারকে কোণঠাসা করার সুযোগ খুব বেশি নেই বিজেপির হাতে। কিন্তু যে ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীতীশ কুমার, জয়ললিতারা একটি কংগ্রেস-বিরোধী অক্ষ তৈরি করছেন, তাতে কিছুটা শঙ্কিত বিজেপি। তাই সংসদে কংগ্রেস-বিরোধিতার রাশ নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার কোনও সুযোগই হাতছাড়া করতে চাইছে না তারা। বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদল যে ভাবে এনডিএ-র বাইরে থাকা অ-কংগ্রেসি দলগুলির দ্বারা শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তার পিছনেও একটা কৌশল রয়েছে। তা হল, কংগ্রেস-বিরোধী অন্য অক্ষটিকে ভেঙে দেওয়া। কংগ্রেসের চাপে মমতা বাদলের শপথে না গেলেও সরকারের আর এক শরিক শরদ পওয়ার যদি যান, তা হলেও খুশি হবেন বিজেপি নেতৃত্ব।
বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, আজ রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার সময় সরকারের শরিকরাই হাঙ্গামা করেছে। শ্রীলঙ্কা প্রসঙ্গে এডিএমকে তো বটেই, সরকারের শরিক ডিএমকে-ও বক্তৃতার মাঝে উঠে দাঁড়িয়ে সরব হয়েছে।
তেলেঙ্গানার বিষয়েও কংগ্রেসের সাংসদরা এ দিন বিরোধিতা করেন। আডবাণীর মতে, উত্তরপ্রদেশের ভোটের পর কংগ্রেসের নেতৃত্ব দুর্বল হয়েছে। রাষ্ট্রপতির বক্তৃতাতেও এ দিন স্পষ্ট হয়েছে, দুর্নীতি ও আর্থিক বেহাল দশা সরকারকে কতটা অস্বস্তিতে রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসকে আরও বিপাকে ফেলাই দলের কৌশল হওয়া উচিত। |