খাতায়-কলমে মুলায়ম সিংহের সমাজবাদী পার্টি কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের সমর্থক দল। কিন্তু অস্থিরতার বাতাবরণে কেন্দ্রে স্থিতিশীলতা বাড়াতে তাদেরই এখন শরিকে রূপান্তরিত করার কাজ পুরোমাত্রায় শুরু করে দিল কংগ্রেস। মুলায়মকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সামিল হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে। তবে সপা শিবিরের বক্তব্য, কংগ্রেস প্রস্তাব দিলেও মুলায়ম সব দিক ভেবেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তা ছাড়া, উত্তরপ্রদেশে বিপুল সাফল্যের পরে মুলায়মের এখন যা রাজনৈতিক ওজন, তাতে কেন্দ্রে রেল, প্রতিরক্ষা বা সমমানের কোনও মন্ত্রক ছাড়া কংগ্রেসের প্রস্তাবে তাঁর রাজি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
সূত্রের খবর, কংগ্রেস-সপা এই আলোচনা শুরু হয়েছে ভোটের ফল ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টা পর থেকেই। কলকাতার ব্যবসায়ী অমিতাভ ঝুনঝুনওয়ালার ছেলের বিয়ে উপলক্ষে গত কাল দিল্লির এক অভিজাত হোটেলে যে অনুষ্ঠান হয়, সেখানে দু’তরফের কথাবার্তা আরও গতি পেয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে মুলায়ম-পুত্র তথা উত্তরপ্রদেশের হবু মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিংহ যাদবের পাশাপাশি হাজির ছিলেন কংগ্রেসের কিছু শীর্ষ নেতাও। অখিলেশ সেখানে আসেন একটু দেরিতে। তার পর কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব শুক্ল হোটেলের একটি পৃথক কক্ষে অখিলেশের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। ইউপিএতে আনুষ্ঠানিক ভাবে সামিল হওয়ার জন্য অখিলেশকে প্রস্তাবও দেন রাজীব। কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাজীব শুক্ল একা নন, দলের শীর্ষ রাজনৈতিক ম্যানেজারদের অনেকেই মুলায়মের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদও কংগ্রেস-মুলায়ম আলোচনায় মধ্যস্থতার জন্য নেমে পড়েছেন। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, এই মুহূর্তে দলের অগ্রাধিকার কেন্দ্রে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। আর তা করতে পারলে তবেই সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। তাই মুলায়মকে টানার চেষ্টা হচ্ছে।
তবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনেকের মতে, মুলায়মের এখনই মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং এমন হতেই পারে যে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় মুলায়মের যোগদান প্রসঙ্গটি তুলে তৃণমূল ও শরদ পওয়ারের মতো শরিকদের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। এই পরিস্থিতির মধ্যে কিছুটা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই অখিলেশ কৌশলে তৃতীয় ফ্রন্টের সম্ভাবনা নিয়েও এ দিন সওয়াল করেন। তাঁর কথায়, “তৃতীয় ফ্রন্ট হলে তো ভালই!” পরে অবশ্য নিজের মন্তব্য থেকে কিছুটা সরে আসেন তিনি। অনেকেই মনে করছেন, উত্তরপ্রদেশের ফল ঘিরে পরিস্থিতির আঁচ পাওয়ার চেষ্টা করছেন অখিলেশ-মুলায়ম। সব বিকল্পই খুলে রাখছেন। তা ছাড়া এই মুহূর্তে রেল মন্ত্রক রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক কংগ্রেস মুলায়মকে ছাড়তে বিশেষ রাজি নয়। এই অবস্থায় মুলায়ম কী করবেন, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থাকছে।
মুলায়ম-কংগ্রেস এই দৌত্যের মাঝেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আজ বলেন, “সরকারের কাছে সংখ্যা রয়েছে।” অর্থাৎ সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কোনও আশঙ্কা নেই। ইউপিএ-র ঐক্যের ছবি তুলে ধরতে আগামিকাল সব শরিক দলগুলির নেতাদের নৈশভোজেও নিমন্ত্রণ করেছেন তিনি। সেই অনুষ্ঠানে মুলায়ম সিংহ সামিল হন কি না, এখন সেটাও দেখার। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, নৈশভোজে বসপা নেতাদেরও নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। কারণ, সংসদে বিভিন্ন বিল পাশ করাতে শরিক ও সমর্থক সবার সঙ্গেই সদ্ভাব ও সমন্বয় বাড়াতে চাইছে কংগ্রেস। এত দৌত্য সত্ত্বেও সংসদ সুষ্ঠু ভাবে চালানো সম্ভব হয় কি না এবং সরকারের স্থিতিশীলতা থাকে কি না, সেটাই দেখার। |