ক’দিন আগেই তাঁকে নিয়ে উন্মাদনার সাক্ষী থেকেছে উত্তরপ্রদেশ তথা গোটা দেশ। আর দেশের বৃহত্তম রাজ্যের কনিষ্ঠতম নেতাকে ঘিরে সেই উন্মাদনার সাক্ষী থাকল সংসদ।
অখিলেশ যাদব। উত্তরপ্রদেশের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী। নিজের রাজ্যে বিজয় কেতন উড়িয়ে যিনি আজ এসেছিলেন সংসদের বাজেট অধিবেশনের যোগ দিতে। পিতা মুলায়ম যথারীতি সংসদে উপস্থিত থাকলেও আজ দল নির্বিশেষে যাবতীয় আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিলেন দেশের সবথেকে তরুণ মুখ্যমন্ত্রীই। যে ভাবে তিনি কার্যত একক দক্ষতায় সমাজবাদী পার্টিকে লখনউয়ের তখ্তে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন, আজ সেই লড়াইকে কুর্নিশ জানায় কংগ্রেস-বিজেপি-বাম-তৃণমূল কংগ্রেস-সহ সব দলের নেতারাই। কে আগে আজ অখিলেশকে অভিনন্দন জানাবেন, তা নিয়ে কার্যত দড়ি টানাটানি শুরু হয়ে যায় দলগুলির মধ্যে। সব মিলিয়ে সমাজবাদী পার্টিকে কেন্দ্র করে তৃতীয় ফ্রন্টের জল্পনা ফের উঠে এল সংসদের অলিন্দে। |
হাত ধরে। সংসদে উত্তরপ্রদেশের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব ও সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত। ছবি: পিটিআই। |
এ দিন সংসদের সেন্ট্রাল হলে রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের বক্তৃতা শেষে লোকসভার অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন অখিলেশ। তখন তাঁর সঙ্গে দেখা হয় তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলের পক্ষ থেকে তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। এর আগে ভোটের ফল প্রকাশের পরে মমতা ফোন করে মুলায়মকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। সপা’র পক্ষ থেকেও মমতাকে ১৫ মার্চ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। যদিও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে মমতা লখনউতে যেতে পারছেন না। আজ অখিলেশ তাই সুদীপের কাছে জানতে চান, “দিদি কি আসছেন?” মমতা আসতে পারছেন না জানিয়ে সুদীপ তাঁকে বলেন, “দুঃখ করবেন না। রাজ্যে বিধানসভা অধিবেশন থাকায় তিনি না এসে প্রতিনিধিকে পাঠাবেন।” সব শুনে অখিলেশ সুদীপকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, “আমি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে কলকাতা গিয়ে দিদির সঙ্গে দেখা করে আসব।” মুলায়মের সঙ্গে মমতার যে দীর্ঘ দিনের সুসম্পর্ক রয়েছে, তা উল্লেখ করে অখিলেশ বলেন, “দিদিকে জানিয়ে দেবেন আমার সঙ্গে নেতাজি-ও (মুলায়ম) যাবেন।”
সরকারের শরিক না হলেও আজ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করে তাঁদের আশীর্বাদ চান অখিলেশ। অভিনন্দন-আশীর্বাদের পাশাপাশি আজ সারা দিনেই সংসদের অলিন্দে জল্পনা ছিল তৃতীয় ফ্রন্ট ও অন্তর্বর্তী নির্বাচনকে ঘিরে। রাজ্যে ক্ষমতা হারালেও বাম দলগুলি খুব ভাল করেই জানে কেন্দ্রে যদি ইউপি বা এনডিএ-র বাইরের বিকল্প জোট সরকার গড়ে, সে ক্ষেত্রে তাদের বাদ দিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। তাই সপা নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখেই চলার পক্ষপাতী বামেরা। যদিও তৃতীয় ফ্রন্টের ব্যাপারে সিপিএম-এর উদ্যোগকে ‘নেতিবাচক’ বলেই মনে করছেন প্রাক্তন লোকসভা স্পিকার তথা সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন সদস্য সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। আজ শিলচরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “কংগ্রেস-বিজেপিকে বাদ দিলে সিপিএমের সঙ্গে থাকবে কে?” সপা’কেও যে সিপিএম পাশে পাবে না, সে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন সপা কেন্দ্রে কংগ্রেসের বন্ধু। ইউপিএ সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করে চলেছে।
তবে অখিলেশ আবার বিকল্প সরকার গঠনের জল্পনাকে কিছুটা উস্কে দেন। তিনি বলেন, “তৃতীয় ফ্রন্ট ভাল ভাবনা।” পরে অখিলেশ জানান, তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের চেষ্টাই তিনি করছেন না। কিন্তু বাম নেতৃত্ব জানেন, সংসদে আগামী দিনে বিভিন্ন নীতিতে সপা কংগ্রেসকে সমর্থন করলেও তৃতীয় ফ্রন্ট গড়তে গেলে একে অন্যকে প্রয়োজন।
এ সব কথা মাথায় রেখেই আজ মুলায়ম-অখিলেশকে অভিনন্দন জানানোর লড়াইতে পিছিয়ে ছিলেন না বাম নেতারাও। ভোটের ফলের দিনই মুলায়মকে ফোন করেন বিমান বসু। আজ সীতারাম ইয়েচুরি, বাসুদেব আচারিয়া দেখা করে যান মুলায়ম ও তাঁর ছেলের সঙ্গে। সংসদে সপা’র ঘরে পিতা-পুত্রকে অভিনন্দন জানাতে যান সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত। মুলায়ম অখিলেশকে সিপিআইয়ের ওই বর্ষীয়ান নেতার আশীর্বাদ নিতে বলেন। গুরুদাসবাবুর কথায়, “অখিলেশ তখন আমাদের দলের সদর দফতরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।” জাতীয় রাজনীতিতে যে ভাবে আঞ্চলিক দলগুলির শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছে, তাতে মুলায়মের মতো নেতাকে অতিরিক্ত ভূমিকা নেওয়ার অনুরোধ করেন গুরুদাস।
এ দিন অখিলেশ সিপিআইয়ের সদর দফতর অজয় ভবনে গেলে গোলাপের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানান দলীয় কর্মীরা। গুরুদাসবাবু বলেন, “ক্ষমতায় বসলে কেউ প্রতিশ্রুতি রাখে না। তুমি রাখবে, আশা করছি। অখিলেশ আশ্বাস দিয়ে বলেন, তিনি নির্বাচনের আগে গোটা রাজ্য সাইকেলে ঘুরেছেন। জানেন, মানুষের কী সমস্যা। অখিলেশের কথায়, “আপনাদের মতো অভিজ্ঞ নেতার পরামর্শ নিয়ে সরকার চালাব।” |