রাজ্যের দাবি আদায়ে চলতি বাজেট অধিবেশনে ইউপিএ শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণ তীব্র করবে তৃণমূল। কেন্দ্রকে বিপন্ন করতে না চাইলেও মূলত পশ্চিমবঙ্গের প্রতি ‘বিমাতৃসুলভ আচরণের’ অভিযোগকে কেন্দ্র করে সরব হবেন দলীয় সাংসদরা। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, রেল বাজেট পেশ না হওয়া পর্যন্ত বড় সংঘাতের পথে যাবেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু রেল বাজেট পেশ হয়ে যাওয়ার পর, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাজেট পেশের দিন রাজ্যকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার দাবিতে সংসদের ভিতরে এবং বাইরে সরব হবে তৃণমূল।
দলীয় সূত্রের বক্তব্য, ইউপিএ সরকারকে বিপন্ন করা এই প্রতিবাদের উদ্দেশ্য নয়। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই সাংসদদের নির্দেশ দিয়েছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছিন্ন করা হবে, এমন কোনও বার্তা যেন না যায়। আগামী কাল শরিকদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নৈশভোজেও হাজির থাকবেন তৃণমূলের সাংসদ রত্না দে নাগ। কিন্তু এরই পাশাপাশি নেত্রীর নির্দেশ, রাজ্যের দাবি আদায় করতে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের উপর নিরবচ্ছিন্ন চাপও বজায় রাখতে হবে। লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বলেন, “এক অসম্ভব আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এগোতে হচ্ছে। সিপিএমের রেখে যাওয়া ঋণের পাহাড়ের উপর আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি। দেখা যাচ্ছে, এক বছরে রাজ্যের আয় ২১ হাজার কোটি টাকা হলে, ২২ হাজার কোটি টাকা শুধু দিতে হচ্ছে সুদ-সহ ঋণশোধ করার জন্য। পশ্চিমবঙ্গের কথা আলাদা করে ভাবতেই হবে কেন্দ্রকে।” এই পরিস্থিতিতে মূলত যে দাবিটি নিয়ে তৃণমূল সরব হবে, তা হল, আগামী ৩ বছরের জন্য রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ঋণের সুদ যেন কেন্দ্র না নেয়। তা হলে পশ্চিমবঙ্গ কিছুটা হাঁফ ছাড়তে পারবে।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই আর্থিক সাহায্য চেয়ে দিল্লিতে দরবার করে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি দিল্লিতে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করে গিয়েছেন। তাঁর সেই বৈঠকের আগের দিন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র চিঠি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সুদ মকুব করার আর্জি জানিয়েছিলেন। আজ সেই সূত্র ধরেই সুদীপবাবু বলেছেন, অধিবেশন চলাকালীন রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা এবং বাজেট নিয়ে আলোচনার সময় রাজ্যের দাবি প্রসঙ্গে সরব হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ পাওয়া যাবে। দলীয় সূত্রের খবর, রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে লোকসভা এবং রাজ্যসভার ভিতরে তো বটেই প্রয়োজনে বাইরে, গাঁধীমূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসার রাস্তাও খোলা রাখতে সাংসদদের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এত দিন বামেরাই রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের রাজ্যকে কতটা সাহায্য করা যায়। উদ্দেশ্য, তৃণমূলের ক্ষোভকে প্রশমিত করা এবং খুচরো শিল্পে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের মতো বিষয়গুলি নিয়ে মমতাকে কিছুটা নরম করা। মমতার প্রতি সদর্থক বার্তা দিতে দিন কয়েক আগে গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন গঠন সংক্রান্ত জিটিএ বিলে সই করেন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল। বক্তৃতায় জিটিএ বিলের উল্লেখও করেছেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু কংগ্রেসেরই একাংশের আশঙ্কা, আর্থিক সহায়তা পাওয়ার পরেও তৃণমূল নেত্রী তাঁর অবস্থানে অনড় থাকতে পারেন। তিনি যে তখন সব বিষয়ে কেন্দ্রের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন এমন নিশ্চয়তা এখনও পাচ্ছেন না তাঁরা। |