|
|
|
|
নবদ্বীপের দোলে রমরমা ব্যবসায়ীদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নবদ্বীপ |
উৎসব ক্লান্ত নবদ্বীপে মঠ-মন্দিরের অতিথি আবাসগুলি ক্রমশ ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। খোলা হয়ে গিয়েছে অতিথিদের থাকার জন্য অস্থায়ী কাঠামোগুলি। ট্রেন, নৌকা, বাসেও ভিড় কমছে। শহর ফিরছে চেনা ছন্দে। কিন্তু সেই ফেরাটা আনন্দেরই। পুণ্য ক্ষেত্র নবদ্বীপে পর্যটন একটা বড় ব্যবসা। এ বারের দোল উৎসবের পরে শহরের ব্যবসায়ীদের মত হল, যত পুণ্যার্থী এসেছিলেন, তাতে শহরের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এমনিতেই নবদ্বীপে বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাস, দোল ছাড়াও ঝুলন, জন্মাষ্টমীর মতো উৎসবেও শহরে বেশ ভিড় হয়। তা ছাড়া চৈতন্যদেবের জন্মস্থান বলে সারা বছরই এই শহরে ভক্তদের যাতায়াত থাকে। শহরে রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বড় মঠ-মন্দির। তাদের ভক্তেরাও আসা যাওয়া করেন। সেই সুবাদেই শহরের অর্থনীতির একটা বড় অংশ নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে পর্যটন ব্যবসার উপরেই।
দেখা যাচ্ছে, দোলে সেই পর্যটন ব্যবসারই বেশ উন্নতি ঘটেছে। অনেক পর্যটকের জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা ছাড়াও তাঁদের কয়েকদিন নবদ্বীপবাস কালে প্রয়োজনীয় সব উপকরণ জোগান দেওয়াতে স্থানীয় ছোট ব্যবসায়ীদের উপকার হয়েছে। এমনই এক ছোট মুদির দোকানের মালিক শ্যামকান্ত পাল বলেন, “মাজন থেকে বিস্কুট সব কিছুরই চাহিদা বেড়ে যায়। শহরের লোকের সংখ্যা এই দোলের সময়ে কয়েকটা দিনে দ্বিগুণ হয়ে যায়। ফলে আমরা এখন আগে থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুত করে রাখি।” নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, “এ বার আমরা দেখছি, দোল উৎসব অন্য সব উৎসবকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। রাসের থেকেও দোলের উপরে ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি নির্ভর করছেন এখন।” তার প্রধান কারণ, অন্য কোনও উৎসব এত দিন ধরে চলে না। রাসে প্রধানত দেড় দিন ধরে উৎসব চলে। অন্য উৎসবগুলি এক দিনের। দুর্গাপুজো এই শহরে তেমন বিখ্যাত নয়। সেখানে দোল উৎসব চলে বেশ কয়েকদিন ধরে। নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, “দোল অন্য সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। দেড়শো মঠ-মন্দিরের ভক্তেরা এই উৎসবে আসেন। তাঁদের সংখ্যা অনেক। শুধু তাই নয়, লক্ষাধিক মানুষ দোলের আগে পনেরো দিন ধরে পরিক্রমা করেন। তাঁদের তাই শহরে থাকতে হয়।” উত্তমবাবু বলেন, “নবদ্বীপের একটি মঠে মুগ ডালই লেগেছে ৮০ কুইন্টাল, চিনি ৩০ কুইন্টাল। তেল ৩০ টিন। অন্তত ২৫০ কুইন্টাল চাল। তার সঙ্গে আনুষাঙ্গিক শাক সব্জি। একটা মঠেই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে সব ক’টি মঠ ধরে দেখলে বোঝা যায়, শুধু আনাজপত্রই কত লেগেছে। এরপরে রয়েছে অন্য কিছু।” হোটেল ব্যবসায়ীদের রাজ্য সংগঠনের সম্পাদক প্রসেনজিৎ সরকারেরও মত, “দোল আর ক’টা অন্য উৎসবের মতো নয়। পর্যটনের দিক থেকে দারুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।” সেই সম্ভাবনাকে আকার দিতে তাঁরা উদ্যোগীও হয়েছেন। প্রসেনজিৎবাবু বলেন, “গঙ্গা বক্ষে বড় উৎসবের আয়োজন করা হবে।” পুরসভাও সেই উদ্যোগ নিয়েছে। বিমানকৃষ্ণবাবু বলেন, “প্রাচীন মায়াপুরকে ঘিরে আমরা ইতিমধ্যেই সাজানোর কাজ শুরু করেছি।” |
|
|
|
|
|