পানীয় জলের পাইপ লাইনের উপর দিয়ে জাতীয় সড়ক তৈরির কাজ না করার আর্জি জানিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন বোলপুরের বাসিন্দারা। বর্ধমান জেলার গুসকরা স্কুল মোড় থেকে বীরভূমের শ্রীনিকেতন মোড় পর্যন্ত জাতীয় সড়ক (২বি) তৈরির কাজ চলছে। বোলপুর এলাকায় জল সরবরাহের ৭০০ মিটার পাইপ লাইনের উপর দিয়ে ওই সড়ক তৈরি হওয়ার কথা। এর ফলে পাইপলাইনের জল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা।
সম্প্রতি বর্ধমান জেলার গুসকরা স্কুল মোড় থেকে বীরভূমের শ্রীনিকেতন মোড় পর্যন্ত জাতীয় সড়কের কাজ চলছে। এ জন্য বোলপুরের রাইপুর-সুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সুপুর গ্রামের কাছে জলের পাইপ লাইনের একটা অংশ জাতীয় সড়কের নীচে চলে যাচ্ছে। ফলে কোনও সময়ে জলের পাইপ লাইনে ত্রুটি দেখা গেলে তা প্রথমত চিহ্নিত করা ও পরে মেরামত করা সমস্যা হয়ে পড়বে। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকায় জল সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। শুধু তাই নয়, তাঁদের আরও আশঙ্কা জলের পাইপ ‘লিক’ হলে জাতীয় সড়কের ওই বড় অংশে চলাচলও ব্যাহত হবে।
বোলপুর ব্লকের মির্জাপুরের জার্মান প্রকল্প থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বোলপুর শহর, বিশ্বভারতী এবং শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের আওতাভুক্ত রাইপুর-সুপুর, রূপপুর ও বাহিরী-পাঁচশোয়া পঞ্চায়েত এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। সেই পাইপ লাইনের একাংশের পাশ দিয়েই ছিল সাবেক গুসকরা স্কুল মোড়-শ্রীনিকেতন মোড় রাস্তা। ওই রাস্তা জাতীয় সড়ক ঘোষণা করার পরে তা সম্প্রসারণ করার কাজ শুরু হয়। |
ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। |
জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতর জানিয়েছে, রাস্তাটি সম্প্রসারণ করতে গিয়ে পাইপ লাইনের প্রায় ৭০০ মিটার অংশ রাস্তার নীচে চলে যাচ্ছে। সুপুর-নুরপুর এলাকার বাসিন্দা সুজিত গড়াই, অরূপ দাশগুপ্ত, ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাসরা বলেন, “এলাকার হাজার হাজার মানুষ ওই জলের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে ওই জলের পাইপ লাইন রাস্তার ধারে রয়েছে। কিন্তু জাতীয় সড়ক তৈরি সম্পূর্ণ হলে, পাইপ ওই পাকা রাস্তার নীচে থাকবে। ফলে পাইপ লাইনে সমস্যা দেখা দিলে তখন জাতীয় সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করতে হবে। ফলে জলের জোগানে যেমন অসুবিধা হবে, তেমনি ওই সড়কও বিপর্যস্ত হবে।” তাঁদের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ কয়েক সপ্তাহ আগে রাস্তার কাজে খোঁড়াখুঁড়ি করতে গিয়ে পাইপ লাইনের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বোলপুর পুরএলাকার একাংশে কয়েক দিন জল সরবরাহ বন্ধ ছিল। আশঙ্কার কথা জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ২৭ জানুয়ারি ও ৬ ফেব্রুয়ারি দু’বার প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে গণস্বাক্ষরিত আবেদন জমা দেন। তাঁদের দাবি, হয় পাইপ লাইনের ওই অংশ সরানো হোক, তা নাহলে পাইপ লাইন ছেড়ে রাস্তা তৈরি করা হোক।
বোলপুরের পুরপ্রধান তৃণমূলের সুশান্ত ভকত বলেন, “জলের পাইপ লাইন না সরিয়ে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ কী ভাবে করা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। পাইপ লাইনের কোনও সমস্যা হলে তা চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।” রাইপুর-সুপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের মিনা বিশ্বাস বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।” বোলপুর-শ্রীনিকেতন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের আনন্দ কোঁড়া বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় তুলবো। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” অন্য দিকে, জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের বীরভূমের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অসিত সরকার বলেন, “সমস্যার বিষয়টি জাতীয় সড়ক ১২ কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।” জাতীয় সড়ক ১২-র এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বি. সরকার বলেন, “বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বোলপুরের বিডিও অমল সাহা বলেন, “সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” বাসিন্দাদের অভিযোগ, জন প্রতিনিধি ও প্রশাসনের আধিকারিকরা তাঁদের সমস্যার কথা জেনেও ‘দেখছি, দেখব’ করে যাচ্ছেন। কিন্তু পাইপ লাইনের পাশে মাটি খুঁড়ে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ বন্ধ নেই। |