নিহত তৃণমূল নেতা কৃপাসিন্ধু সাহা খুনের ঘটনায় জড়িতদের এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। তাই ওই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব সিআইডি-র হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানালেন কেতুগ্রামের কান্দরার কিছু বাসিন্দা। এই দাবিতে কেতুগ্রাম ১ ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা। গ্রামবাসীর সঙ্গে সোমবার উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল ব্লক সভাপতি রত্নাকর দে-ও।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত কৃপাসিন্ধু সাহা রত্নাকরবাবুর ‘অনুগামী’ ছিলেন। অন্য দিকে, ওই খুনের মামলায় অভিযুক্ত হারা শেখ এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলেই পরিচিত। তাই বিডিও-র সঙ্গে এ দিনের বৈঠকে রত্নাকরবাবুর উপস্থিতি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই ফল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
গত ৩১ ডিসেম্বর কান্দরার কাছে একটি গ্রামে সেচখালের ধারে পিটিয়ে, গুলি করে খুন করা হয় তৃণমূলের কেতুগ্রাম ১ ব্লকের নেতা কৃপাসিন্ধুবাবুকে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তারাশঙ্কর পণ্ডিত দলেরই কার্যকরী সভাপতি হারা শেখ ছাড়াও আসাদুল্লা শেখ ও চাঁদ শেখের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার বেশ কয়েক সপ্তাহ পরে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে চাঁদ শেখ। তাকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমগোড়িয়া গ্রামের ইসলাম শেখকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে হারা শেখ ও আসাদুল্লা শেখ এখনও পলাতক। |
স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশের দাবি, বিধানসভা নির্বাচনের আগে হারা শেখের জন্য গ্রামছাড়া হন তৃণমূলের তৎকালীন সভাপতি ইউনিস মল্লিক। তাঁর জায়গায় হারা শেখের নাম প্রস্তাবিত হয়। হারা শেখ পালিয়ে যাওয়ার পরে আবার গ্রামে ফিরে আসেন ইউনিস। গত সপ্তাহে নিহত নেতার স্মরণসভায় ইউনিসকে দলে ফেরান কেতুগ্রামের তৃণমূলের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডল। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন রত্নাকরবাবুও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিডিও-র অফিসে অবস্থান কর্মসূচিতে বড় ভূমিকা ছিল ইউনিসের। বিডিও দফতরেও এ দিন উপস্থিত ছিলেন তিনি। ইউনিস অবশ্য বলেন, “গ্রামবাসী হিসেবে ওই সভায় গিয়েছিলাম।”
এই কর্মসূচির জন্য এ দিন কান্দরার প্রায় সব দোকান বন্ধ রাখে বাজার সমিতি। ওই সমিতির সম্পাদক, কংগ্রেস কর্মী রামরতন সাহা বলেন, “আমরা সন্ত্রাস ও আতঙ্কের পরিবেশে বাস করছি। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়ে খুনিদের ধরার জন্য আবেদন জানানো হয়। কিন্তু প্রসাশন নির্বিকার। তার প্রতিবাদে আমরা আজ দোকান বন্ধ রেখেছিলাম।” রত্নাকরবাবুর নেতৃত্বে গ্রামবাসীরা বিডিও-র কাছে দাবি করেন, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়ে এলাকায় শান্তি ফেরানোর জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই পুলিশের উপর ভরসা করতে পারছেন না তাঁরা। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি রত্নাকরবাবুর দাবি, “পুলিশ সক্রিয় না হওয়ায় দুষ্কৃতীরা সম্ভবত রাজ্য ছেড়েই পালিয়ে গিয়েছে। তাদের ধরার জন্য কৃপাসিন্ধুর খুনের তদন্ত সিআইডি-র হাতে দেওয়া দরকার।”
বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ হোসেন মির্জা শুধু বলেন, ‘‘ওই ঘটনার তদন্ত চলছে।’’ বিডিও তরুণ ভট্টাচার্য জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। |