রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল ফেরাতে একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কিন্তু হাসপাতালে রোগী আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত অব্যবস্থা চলছে গোটা রাজ্য জুড়ে। কোথাও রক্ষণাবেক্ষণের কর্মীর অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স, কোথাও বা গাড়ি ঠিক থাকলেও চালক নেই।
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য পরিবহণ ক্ষেত্রে সামগ্রিক ভাবেই প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ৩০ শতাংশ কর্মী রয়েছেন। ফলে পরিষেবার মান যা হওয়ার কথা, তা নেই। দফতরের এক কর্তা বলেন, “জেলাগুলি তো বটেই, এমনকী খাস কলকাতার অবস্থাও খুব খারাপ। কলকাতার লেডি ডাফরিন বা পাভলভ মানসিক হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স কাজ করছে না। ফলে প্রায়ই রোগী আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রবল অসুবিধের মুখে পড়তে হচ্ছে। রোগীদের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামকে নতুন স্বাস্থ্য জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ, সেখানকার চিফ মেডিক্যাল অফিসারকেই এখনও পর্যন্ত গাড়ি দেওয়া যায়নি।”
স্বাস্থ্য পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, রাজ্য জুড়ে চালকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় তিনশো কম আছে। এর ফলে, বহু জায়গাতেই অ্যাম্বুল্যান্স থাকলেও তা চালানোর লোক নেই। আবার যে সব অ্যাম্বুল্যান্সে চালক রয়েছেন, সেগুলির অধিকাংশেই রোগীকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘ক্লিনার কাম স্ট্রেচার বেয়ারার’ কর্মী নেই। এর ফলে অ্যাম্বুল্যান্সে থাকছেন শুধুমাত্র চালক। তিনিই কোনও রকমে রোগীর পরিবারের লোকেদের সাহায্য নিয়ে রোগীকে হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছেন।
এখানেই শেষ নয়, কর্মী কম থাকার কারণে অ্যাম্বুল্যান্স এবং অন্যান্য গাড়ির ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণও করা হচ্ছে না। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, তাদের গাড়িগুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গোটা রাজ্যে মোট সাত জন ফোরম্যান থাকেন। এর মধ্যে তিন জন ফোরম্যান থাকেন কলকাতায়। বাকি চার ফোরম্যান বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, শিলিগুড়ি এবং বহরমপুরে থাকেন। ওই চার জন ফোরম্যানই ঘুরে ঘুরে প্রতি জেলায় গাড়ি ও অ্যাম্বুল্যান্সের দেখভাল করেন। কিন্তু এই মুহূর্তে গোটা রাজ্যে এক জনও ফোরম্যান নেই। এর ফলে, স্বাস্থ্য পরিবহণের যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণের কাজই ধাক্কা খাচ্ছে।
কবে মিটবে এই সমস্যা? এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, “পিএসসি-তে ইতিমধ্যেই ‘গ্রুপ ডি’ পদে একটি তালিকা বাছাই হয়ে গিয়েছিল। ওই তালিকায় নিয়োগ হয়ে গেলে কর্মীর অভাব অনেকটাই দূর করা সম্ভব হত। কিন্তু নয়া সরকার তা কার্যকর না করায় স্বাস্থ্য পরিবহণ বিভাগ এখন কর্মীর অভাবে ধুঁকছে।” বিষয়টি মানছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীও। তাঁর কথায়, “খালি পদ রয়েছে, সেই পদে নতুন লোক নেওয়া হয়নি, পুরো বিষয়টিই সত্যি। রাজ্য সরকার হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে ওই সব খালি পদ পূরণ করবে। ইতিমধ্যেই বোর্ড গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী মাসের মধ্যেই বোর্ড কাজ শুরু করে দেবে।” স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন, কর্মীর অভাব পূরণ করতে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের অস্থায়ী ভাবে নিয়ে একটা চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি। |