জরায়ুর ক্যানসার রোধে শিলিগুড়ি শহরের বস্তি এলাকায় সমীক্ষা এবং আক্রান্তদের নিখরচায় চিকিৎসা পরিষেবা দিতে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তায় এই প্রকল্পের কাজ শুরু হতে চলেছে। বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এসজেডিএ)-র চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য তদ্বির করে রাজ্যে শিলিগুড়িতেই প্রথম এই কর্মসূচি শুরু করছেন। রবিবার এসজেডিএ’র দফতরে পরিকল্পনা নিয়ে স্বাস্থ্যকর্তাদের বৈঠক হয়। কী ভাবে কী করা হবে আলোচনায় প্রাথমিক ভাবে তা ঠিক হয়েছে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আগামী এপ্রিল থেকেই এই কাজ শুরু করা হবে বলে জানা গিয়েছে। কোনও রোগ নিয়ে সচেতনতা, সমীক্ষা বা চিকিৎসা পরিষেবা আলাদা ভাবে হয়েই থাকে। তবে কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের মধ্যে একসঙ্গে রোগ নিয়ে সচেতনতা প্রচার, সমীক্ষা এবং চিকিৎসা পরিষেবা দিতে এ ধরনের কর্মসূচি দেশের মধ্যে প্রথম বলে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। রুদ্রবাবু নিজেও চিকিৎসক। তিনি বলেন, “ক্যানসারে আক্রান্ত মহিলাদের প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন জরায়ুর ক্যানসারে ভোগেন। অনেকে রোগাক্রান্ত হলেও বুঝতেই পারেন না। পরে তা জটিল আকার নিলে কিছু করার থাকে না। অনেকেই মারা যান। |
বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন শিলিগুড়ি বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
অথচ শুরু থেকে চিকিৎসা করা হলে রোগ সারিয়ে তাঁরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবা এখনও সে ভাবে তাঁদের কাছে পৌঁছতে পারেনি। সে কথা মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্য দফতর এই কর্মসূচি নিয়েছে।” শিলিগুড়িতে তা সফল হলে পরবর্তীতে রাজ্যে তো বটেই দেশের অন্যত্রও তা কার্যকরি করা হবে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এসজেডিএ, শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে এই কাজ করবে। আইসিডিএস প্রকল্পের স্বাস্থ্যকর্মী, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘লাইফ লঙ লার্নিং’ বিভাগের শিক্ষক, পড়ুয়ারাও এর সঙ্গে যুক্ত থাকছেন। স্বাস্থ্য দফতরের টেকনিক্যাল অফিসার অসিত বিশ্বাস জানান, শিলিগুড়িতে ১৫৪ টি বস্তিতে প্রায় ১ লক্ষ ৬৮ হাজার মানুষ বসবাস করেন। তাঁদের মধ্য থেকে ৫ হাজার জনকে বেছে নেওয়া হবে। জাতীয় প্রকল্পের নির্দেশিকা মেনে নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে চিহ্নিত করা হবে রোগাক্রান্তদের। সরকারি অনুদানে তাঁদের চিকিৎসা ব্যবস্থাও হবে। প্রয়োজনে কলকাতার চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
প্রকল্পের মুখ্য সমীক্ষক পার্থপ্রতিম পাল বলেন, “পুরসভার ৮ টি হেল্থ পোস্ট রয়েছে। সেখান থেকেই বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করবেন। ১২ জনকে নিয়ে এক একটি দল তৈরি করা হবে। বাড়িবাড়ি গিয়ে প্রচার, উপসর্গ রয়েছে এমন মহিলাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে পরীক্ষা করাতে তারা সক্রিয় হবেন।” পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী জানান, পুরসভার ৩০৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে। তবে হেল্থ পোস্টগুলির পরিস্থিতি ভাল নয়। স্বাস্থ্য কর্তারা তাঁকে আশ্বস্ত করে জানান, হেল্থ পোস্টগুলিতে তারাই এই কাজের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে নেবেন।
এ দিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ডিরেক্টর অখিল বিশ্বাস, টেকনিক্যাল অফিসার অসিতবাবু, মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন, প্যাথলজি, প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক, নার্সিং বিভাগের কর্মী, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকরা-সহ আরও অনেকে। |