সকালের ব্যস্ত সময়ে রাস্তায় আড়াবাড়ি ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ট্রাক। পণ্য নামানোর জন্য বাজারে ঢোকার সরু পথ আটকে রয়েছে ট্রেকার। অফিস, স্কুলে যাওয়ার সময়ে রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক পার করে যাওয়ার চেষ্টায় সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়ায় অধিকাংশ রাস্তা যানজটে কাহিল। উত্তরবঙ্গের বিভাগীয় শহর জলপাইগুড়ির এখন এটাই প্রতিদিনের চিত্র। নিত্য যানজটে কাহিল শহরের বেগুনটারি থেকে দিনবাজার। শহরের প্রাণকেন্দ্র কদমতলা বা রায়কত পাড়ার মোড়ে সময়ের পরোয়া না করে ট্রাফিক নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে যাত্রীবাহী বাস দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকছে। ফলে সেখানেও তৈরি হচ্ছে যানজট। খোদ কোতোয়ালি থানার সামনেই সার দিয়ে দাঁড় করানো একের পর এক গাড়ি। যানজট সামলাতে হিমশিম ট্রাফিক কর্মী। বিভিন্ন সময়ে নানান পরিকল্পনা হলেও জলপাইগুড়ি শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি বলেই শহরবাসীর অভিযোগ। শহরে যান চলাচলের সুনির্দিষ্ট বিধি থাকলেও তা মানা হয় না বলে অভিযোগ। পার্কিংয়ের তোয়াক্কা না করেই মার্চেন্ট রোড, বাবুপাড়া, কদমতলার মতো ব্যস্ত এলাকায় রাস্তার ওপরেই সরকারি বেসরকারি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। শহরের ট্রাফিক সমস্যা সমাধানে পুলিশ প্রশাসন-পুরসভার মধ্যে চাপানউতোরও দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগ না থাকাতেই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সুসংহত পরিকল্পনা গড়ে ওঠেনি বলে যেমন পুরসভার তরফে একাধিকবার অভিযোগ করা হয়েছে। তেমনিই পুরসভার তরফে সহযোগিতার অভাব এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুরসভার সবুজ বাহিনীর সদস্যরাও কিছুদিন কাজ করার পরে আর পুলিশকে সহায়তা করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি পুরসভার কাউন্সিলরদের তরফে ট্রাফিক নিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। জেলা সদরের ট্রাফিক সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন মহলকে নিয়ে বৈঠক ডাকা হবে বলে পুলিশ সুত্রে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি যানজট সমস্যা সমাধানে ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “শহরে পণ্যবাহী যানবাহন ঢোকার সময় নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। ট্রাফিক কর্মীর অভাব রয়েছে। যে পরিকাঠামো রয়েছে তাতেই শহরের সমস্যা মেটানো সম্ভব। খুব শীঘ্রই শহরের ট্রাফিক সমস্যা নিয়ে বৈঠক ডাকা হবে।” শহরের শান্তিপাড়া, পান্ডাপাড়া, তিন নম্বর ঘুমটি, পোস্ট অফিস মোড়, বয়েলখানা বাজারেও যে কোনও দিন সকাল এবং বিকেলের ব্যস্ত সময়ে যানজট লেগেই থাকে। ট্রাফিক নিয়মের পরোয়া না করে ব্যস্ত সময়েই পণ্যবাহী গাড়ি শহরের রাস্তায় চলাচল করায় যানজট তো বটেই, দুর্ঘটনার আশঙ্কাও লেগেই থাকে। নিয়ম ভেঙে রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় পোস্ট অফিস মোড় থেকে থানা মোড় হয়ে বেগুনটারি পৌঁছতেই ঘন্টাখানেকেরও বেশি সময় লেগে যায় বলে অভিযোগ। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থাটাই নেই। সম্প্রতি চেয়ারম্যান পুলিশ প্রশাসনকে একটি চিঠি দিয়েছেন। ট্রাফিক আইন ভেঙে যে কোনও সময়ে পন্যবাহী গাড়ি শহরের মূল রাস্তায় চলাচল করে। যেহেতু শহরের মূল রাস্তাগুলি এই মুহূর্তে চওড়া করা সম্ভব নয়, সে কারণেই প্রশাসনকেই ট্রাফিক আইন নিয়ে উদ্যোগী হতে হবে।” স্বেচ্চাসেবী সংস্থা সুভাষ মঞ্চের আহ্বায়ক প্রবাল রাহা বলেন, “ট্রাফিক সমস্যা নিয়ে পুলিশ ও পুরসভাকে জানানো হয়েছে। যে কোনও সভ্য শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে যে ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন, জলপাইগুড়ি তার দৃষ্টান্তমূলক ব্যতিক্রম।” |