দশম শ্রেণির ছাত্রীকে হোটেলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ এবং মোবাইলে ছাত্রীটির ‘আপত্তিকর’ ছবি এমএমএসের (মাল্টিমিডিয়া মেসেজিং সার্ভিস) আকারে এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক হাতুড়ের বিরুদ্ধে। গত সেপ্টেম্বরে আলিপুরদুয়ার শহরের একটি হোটেলে ওই কাণ্ড ঘটলেও, এমএমএস ছড়ানোর বিষয়টি জানাজানি হয় দিন পনেরো আগে। ছাত্রীটির পরিবার গত ৭ মার্চ কোচবিহার কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করে। তদন্তে নামে আলিপুরদুয়ার পুলিশও। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেই বছর ছাব্বিশের ওই হাতুড়ে পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে।
আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া কোচবিহারের মধ্য মরিচবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ওই ছাত্রী। অভিযুক্ত আসাদুরাজ্জামান তার পড়শি। আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “অভিযোগ অনুযায়ী ঘটনাটা আলিপুরদুয়ার শহরের একটি হোটেলে হয়েছে। আলিপুরদুয়ার থানাতেও একটি মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। কী ভাবে ওই কিশোরী ও যুবককে পরিচয়পত্র ছাড়া হোটেলে ঘর দেওয়া হল, তদন্ত হচ্ছে তা নিয়েও।”
ওই কিশোরীর দিদির শ্বশুরবাড়ি আলিপুরদুয়ারে। গত ১ সেপ্টেম্বর সেখানে যাচ্ছিল ছাত্রীটি। পুলিশের কাছে করা অভিযোগে বছর ষোলোর ওই মেয়েটি দাবি করেছে, পথেই তার সঙ্গে অভিযুক্ত যুবকের দেখা হয়। আসাদুরাজ্জামান তাকে বলে, সে-ও আলিপুরদুয়ারেই যাচ্ছে। মেয়েটিকে সে পৌঁছে দিতে পারে। ছাত্রীটি ওই যুবকের মোটরবাইকে ওঠে।
আলিপুরদুয়ার শহরে পৌঁছে যুবকটি মিষ্টি খাওয়ানোর নাম করে মেয়েটিকে হোটেলে নিয়ে গিয়ে তোলে। অভিযোগ, হোটেলের ঘরে যুবকটি ছোরা দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করে ছাত্রীটিকে। মোবাইলে কিছু ‘আপত্তিকর’ ছবি তোলে। ঘটনা কাউকে জানালে মেয়েটির দুই দাদাকেও খুনের ‘হুমকি’ দেয় ওই যুবক।
পুলিশের কাছে ছাত্রীটি দাবি করেছে, সেই ‘ভয়েই’ সে এত দিন চুপ করে ছিল। সম্প্রতি এলাকার কিছু ছেলের মোবাইলে ওই এমএমএস ঘুরছে খবর পেয়ে মেয়েটিকে জেরা করেন তার দাদারা। তখনই ঘটনা জানাজানি হয়।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তথা কংগ্রেস নেতা কুলেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এমএমএসের ব্যাপারটা জানতে পারি। মেয়েটির পরিবার আমাকেও বিষয়টি জানিয়েছিল। অভিযুক্ত পালিয়েছে। ঘটনা সত্য হলে, অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।” তবে আসাদুরাজ্জামানের মা আয়েশা বেগমের বক্তব্য, “আমার ছেলে হোটেলে নিয়ে তোলার পরে মেয়েটি চিৎকার করল না কেন? ঘটনার পরেই মেয়েটি সব খুলে বললে ওকেই ছেলের বউ করে নিতাম। কিছু দিন আগে অন্য জায়গায় ছেলের বিয়ে দিয়েছি। আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে বাইরে চিকিৎসাধীন। ছেলেও বাড়িতে আসছে না।”
ছাত্রীটি রবিবার বলে, “দাদাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল আসাদুরাজ্জামান। সেই ভয়ে মুখ বুজে ছিলাম।” |