বাম বিশিষ্টজনদের সহমর্মিতা জানিয়ে সুমনের চিঠি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্যে ‘বামপন্থী’ বলে পরিচিত বিদ্বজ্জনেদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনে ‘সহমর্মিতা’ জানিয়ে চিঠি পাঠালেন তৃণমূল সাংসদ তথা গায়ক কবীর সুমন। রবিবার বিজন থিয়েটারে বামপন্থী বিদ্বজ্জনেদের মঞ্চ ‘সংস্কৃতি সমন্বয়’-এর কনভেনশনে পাঠানো ওই চিঠিতে সুমন রাজ্যে কৃষক আত্মহত্যা, শিক্ষাক্ষেত্রে ‘বাহুবলী’দের তাণ্ডবের মতো বিষয়ে প্রবল সমালোচনা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, যে সমস্ত সমস্যা নিয়ে বর্তমানে রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্ক চলছে, সেগুলি পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের আমলেও ছিল। শাসক পরিবর্তনের পরেও সেই ‘ট্র্যাডিশন’ অপরিবর্তিত। এই বিষয়ে ওই চিঠিতে সুমনের আক্ষেপ স্পষ্ট।
যাদবপুরের সাংসদ সুমনের সঙ্গে তাঁর দল তৃণমূল এবং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দূরত্ব’ দীর্ঘ দিন ধরেই প্রকট। সেই দিক থেকে তাঁর এই সমালোচনা ও আক্ষেপ ‘অপ্রত্যাশিত’ নয় বলে দলের একাংশের মত। তবে বিভিন্ন প্রশ্নে মমতার নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার যখন ‘অস্বস্তি’তে, সেই সময়েই সুমনের এই চিঠি তৃণমূলের ‘বিড়ম্বনা’ বাড়াল বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা।
চিঠিতে সুমন লিখেছেন, ‘আমাদের রাজ্যেও কৃষকেরা যে ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করছেন, বর্তমান সরকার তা মানতেই চাইছেন না। এই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। অপুষ্টিতে মারা গেছেন বাংলার কৃষিজীবী। আগের সরকার তা মানতে চাননি’। সুমনের আরও বক্তব্য, ‘আমরা যারা আমাদের রাজ্য, আমাদের ভাষা, আমাদের সাংস্কৃতিক উচ্চারণ ও অস্তিত্বকে রুচিহীনতা ও মগজহীনতার কাছে বলি দিতে নারাজ, আমাদের আজ জোটবদ্ধ হয়ে, তুচ্ছতা বিসর্জন দিয়ে অতীতে কার সঙ্গে কার কী বিরোধ ছিল, তা ভুলে গিয়ে কাজ করতে হবে’।
গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের সংস্কৃতি মহলে যে ‘আমরা-ওরা’ বিভাজনের সূত্রপাত হয়েছে, তা দূর করতে এবং বামপন্থী সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রতি নতুন সরকারের ‘অসহযোগিতা’র প্রতিবাদ করতে এ দিন বিজন থিয়েটারে ওই কনভেনশন হয়। সেখানে প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র বক্তৃতা করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতার প্রতি কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশুমৃত্যু, পাহাড়, জঙ্গল, চিড়িয়াখানায় জন্তু-জানোয়াররা কী খেলে ভাল থাকবেসবই উনি (মমতা) জানেন! এমন অপ্রাকৃতিক পরিস্থিতি বেশি দিন চলতে পারে না। একটু ধৈর্য ধরুন। ওই মহিলা নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মারবেনই! তত দিন আমরা যেন অপেক্ষা করি। তার মধ্যে আমরা যেন অবিমৃষ্যকারীর মতো কোনও আচরণ না করি।” তবে একই সঙ্গে অশোকবাবু এ-ও বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের মধ্যে যে ‘কংগ্রেসি সংস্কৃতি’ দেখা দিয়েছিল, বর্তমান সরকার সেটাই ‘সুদে-আসলে’ ফেরত দিচ্ছে। ওই কনভেনশনে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, অরুণ মুখোপাধ্যায়, ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়, ওয়াসিম কপূর, চন্দন সেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। |