পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্যে শাসক জোটের দুই শরিক তৃণমূল এবং কংগ্রেসের নিচু তলায় দলবদলের প্রক্রিয়া শুরু হল। যার জেরে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বদলে যাচ্ছে পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েতের সমীকরণ।
মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমার কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতির প্রধান-সহ ১২ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে সাত জন কংগ্রেসের, তিন জন সিপিএমের এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের দু’জন। রবিবার এ কথা জানিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায় বলেন, “কান্দির কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির প্রধান ও তাঁদের অনুগামীরা তৃণমূলে যোগ দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে উন্নয়নমুখী সরকারের হাত শক্তিশালী করলেন।”
পঞ্চায়েত ভোটের আগে কংগ্রেসের ‘শক্ত ঘাঁটি’ মুর্শিদাবাদ থেকে সাত কংগ্রেস কর্মীর তৃণমূলে যোগদানকে অবশ্য ‘গুরুত্ব’ দিতে নারাজ কংগ্রেস নেতৃত্ব। কান্দির কংগ্রেস বিধায়ক অপূর্ব সরকারের প্রতিক্রিয়া, “পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানেরা দল ছাড়ায় স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীরা খুশি হয়েছেন। দলত্যাগীদের অনেকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট পাবেন না, এই আশঙ্কায় ওঁরা দল ছেড়েছেন।” ওই সাত কংগ্রেস কর্মীর দলত্যাগ পঞ্চায়েত ভোটে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলে আশাবাদী অপূর্ববাবু। তবে যে দু’টি পঞ্চায়েত সমিতির প্রধানেরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, এই মুহূর্তে সেই দু’টি তৃণমূল দখল করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি তিনি। কিন্তু আগামী পঞ্চায়েত ভোটে সেগুলি আবার তাঁরা ফিরে পাবেন বলেই আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এরই পাশাপাশি, পুরুলিয়া জেলার জয়পুর ব্লকের বড়গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ ছ’জন সদস্য কংগ্রেস ছেড়ে এ দিনই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এর ফলে ওই পঞ্চায়েতটি তৃণমূলের দখলে এল। ওই পঞ্চায়েতে এত দিন তৃণমূলের একটিও আসন ছিল না। আবার পুরুলিয়াতেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন পুরসভার যে পাঁচ কাউন্সিলর, তাঁরা ফের কংগ্রেসেই ফিরে এসেছেন! গত বছরের ১৮ জুলাই কলকাতায় তৃণমূল ভবনে গিয়ে কংগ্রেসের ছয় কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। নভেম্বরে তাঁদের মধ্যে পাঁচ জন তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হন। তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বন্ধে ব্যবস্থা না-নেওয়ার অভিযোগ তুলে তাঁরা শনিবার কংগ্রেসের একটি সভায় দল বদলের কথা ঘোষণা করেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “উন্নয়নের স্বার্থে অন্য দল ছেড়ে এখন তৃণমূলে অনেকেই আসছেন। তবে কংগ্রেসে ফিরে যাওয়া ওই পাঁচ কাউন্সিলরের অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির মোট সদস্যসংখ্যা ২৮। তার মধ্যে কংগ্রেস ২০টি আসনে জিতে ক্ষমতায় এসেছিল। বাকি ৮টি ছিল বামফ্রন্টের দখলে। এখন কংগ্রেসের দখলে রইল ১৩টি আসন, তৃণমূলের ১১টি এবং বামফ্রন্টের ৪টি। স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাঁদেরই থাকায় পঞ্চায়েত সমিতি কংগ্রেসই দখলে রাখতে পারবে। কান্দি মহকুমা কংগ্রেসের সভাপতি দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “দলের সাত জন তৃণমূলে যোগ দিলেও পঞ্চায়েত সমিতি আমরা ধরে রাখব।” তবে যশোহরি আনোখা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের পূর্ণিমা ঘোষ-সহ ১১ জন তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ওই পঞ্চায়েতটি কংগ্রেসের হাতছাড়া হল। এই পঞ্চায়েতের মোট সদস্য সংখ্যা ১৩। দেবাশিসবাবু বলেন, “পঞ্চায়েত উন্নয়নের টাকা খরচ করতে না-পেরে পূর্ণিমাদেবীরা দলের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। সেই চাপে পড়েই তাঁরা দলত্যাগ করেছেন। তাতে কংগ্রেসের ভাল ছাড়া ক্ষতি হবে না।” পুরন্দরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের বৃন্দাবন মণ্ডলও অনুগামীদের নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।
কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির যে চার বাম সদস্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে বিশ্বনাথ সাহা ও সুভাষ ভক্ত সিপিএমের নির্বাচিত প্রতিনিধি। সিপিএমের কান্দি জোনাল কমিটির সম্পাদক কাজল চক্রবর্তী বলেন, “সুবোধ ভক্তকে অনেক দিন আগেই বহিস্কার করেছি। বিশ্বনাথ পার্টির সদস্য নন। তাঁর সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই।” ফরওয়ার্ড ব্লকের আব্দুল সালাম এবং সিপিএমের জাক্কার আলিও এ দিন তৃণমূলে যোগ দেন। ফ ব-র মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি বিবেক মিশ্র বলেন, “কান্দি পঞ্চায়েত সমিতি কংগ্রেসের দখলে। কোনও উন্নয়ন নেই। বাধ্য হয়েই ওঁরা দল ছেড়েছেন।” |