দু’বছরেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত। পুনর্বাসন নিয়ে জটিলতার জেরে বনগাঁয় রেলের প্রস্তাবিত স্টেডিয়াম তৈরির কাজ কার্যত এগোয়নি একচুলও।
২০০৯ সালের রেল বাজেটে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনগাঁয় স্টেডিয়াম তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন। ওই বছরেরই ৫ ডিসেম্বর বনগাঁ স্টেশন লাগোয়া আর এস মাঠে ঘটা করে প্রস্তাবিত প্রকল্পের শিলান্যাস করেন রেলমন্ত্রী। ঘোষণা করেছিলেন, প্রকল্প রূপায়ণের জন্য ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং প্রস্তাবিত স্টেডিয়ামটি মতুয়া সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে হবে। ওই আশ্বাসে নতুন করে স্বপ্ন দেখছিলেন বনগাঁর বহু খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। কিন্তু এখনও স্টেডিয়ামের একটি ইটও গাঁথা হল না। শিলান্যাসের ফলকটিও উধাও হয়ে গিয়েছে। আদৌ স্টেডিয়াম হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় অনেকে। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করেছেন, বর্তমান রেলমন্ত্রী বিষয়টি জানেন। দ্রুত স্টেডিয়ামের কাজ শুরু হবে।
কিছু দিন আগেই হাওড়ায় রেলের একটি অনুষ্ঠানে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘রেলে থাকতে যা বলেছি, সবই তো হল।” কিন্তু বনগাঁয় প্রস্তবাতি স্টেডিয়ামের জন্য এত দিনে শুধু রেলের আধিকারিক এবং ঠিকাদার সংস্থার প্রতিনিধিরা একবার জমিটি শুধু দেখে গিয়েছেন। তার পরে আর কাজ এগোয়নি।
কোথায় বাধা?
যে আর এস মাঠে শিলান্যাস হয়েছিল, সেই মাঠকে ঘিরেই স্টেডিয়াম বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে রেলের। জমিটি রেলেরই। তার একাংশে প্রায় ৩০টি পরিবার বাস করে। বাকি অংশে খেলাধুলো করে স্থানীয় ছেলেরা। সমস্যা দেখা দিয়েছে ওই পরিবারগুলির পুনর্বাসন নিয়ে। পরিবারগুলি যাবতীয় প্রয়োজনীয় নথিপত্র-সহ পুনর্বাসনের দাবি তুলেছেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েনও রয়েছে। |
প্রকল্প ঘোষণার পরে তৎকালীন রেলমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ওই পরিবারগুলির সরে যাওয়ার জন্য পুনর্বাসন দেওয়া হবে। ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে রেলের কয়েক জন আধিকারিক এবং বরাত পাওয়া ঠিকাদার সংস্থার প্রতিনিধিরা জমি পর্যবেক্ষণে গেলে এলাকার বেশ কিছু মহিলা-পুরুষ তাঁদের ঘিরে ধরে জমি মাপতে বাধা দেন। তাঁদের কটূক্তিও করা হয়। বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, প্রকল্পের জন্য ক্ষতিপূরণে কী আছে তা বিশদে না জানানো হলে কাজ করতে দেওয়া হবে না। পুনর্বাসন সম্পর্কে তাঁদের বিস্তারিত তথ্যও জানাতে হবে। ওই বছরই ছিল পুরসভা নির্বাচন। বনগাঁয় প্রস্তাবিত স্টেডিয়ামটি রাজনৈতিক প্রচারের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ওই এপ্রিলেই মছলন্দপুরে একটি রেল প্রকল্পের শিলান্যাসে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অভিযোগ করেছিলেন, “ওখানে কমরেডরা (সিপিএম) ঢুকে পড়েছে।” তখনও তিনি বলেছিলেন, “ওই জমি রেলের। হরিচাঁদ ঠাকুরের নামে ওখানে হাজার বার স্টেডিয়াম হবে।”
বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক গোপাল শেঠের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল এলাকায় গিয়ে ওই পরিবারগুলিকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ওই পরিবারগুলির প্রতিনিধি, স্থানীয় ওর্য়াডের সিপিএম কাউন্সিলর পার্থ সাহা, বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের জ্যোৎস্না আঢ্য এবং গোপালবাবু এ নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু জট কাটেনি। গোপালবাবু বলেন, “ পরিবারগুলিকে বলা হয়েছিল, রেলের অন্যত্র পুনর্বাসন দেওয়া হবে। কিন্তু ওঁরা জমির দলিলের দাবি তুলেছেন। তা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে, কিছু পরিবার এখন রেলের জমিতে সরে যেতে ইচ্ছুক। কিন্তু অন্য কিছু পরিবার এবং বাইরের কিছু লোক তাঁদের ভুল বুঝিয়ে বাধার সৃষ্টি করছে।” বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “ওই ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর এবং কিছু মানুষের অসহযোগিতার জন্য কাজ শুরু করা যায়নি। আমরা ওই পরিবারগুলিকে পুরসভার মাধ্যমে বিকল্প জায়গায় ব্যবস্থা করার কথাও বলেছিলাম। তবে, স্টেডিয়াম তৈরির চেষ্টা এখনও চলছে।” পুরপ্রধান জ্যোৎস্না আঢ্য বলেন, “ওই পরিবারগুলিকে বলা হয়েছিল, বাড়ি-সহ জল, আলো ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। ওঁরা রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু তার পর রেলের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা হয়নি।”
বিধায়কের তোলা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পার্থবাবু বলেন, “আমরা সব সময় চাই স্টেডিয়াম হোক। তবে, ওই জমিতে বসবাস করা পরিবারগুলিকে জোর করে উচ্ছেদের বিরোধিতা করেছিলাম। তাঁদের সঠিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়েছে। পুরসভার সঙ্গে আলোচনার সময়ে আমাদের বলা হয়েছিল, পরিবার পিছু দু’কাঠা করে জমি কিনে দেওয়া হবে। ওই প্রস্তাবে পরিবারগুলি রাজি। কিন্তু তার পর কাজ আর এগোয়নি।” জমি কিনে দেওয়ার কথা অবশ্য মানেননি পুরপ্রধান। রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। |