ফের দ্বন্দ্ব তৃণমূল-অন্দরে, বিক্ষোভ জাটুয়াকে ঘিরে
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দলের ক্ষতি করছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরাইশনিবারই মন্তব্য করেছিলেন এক তৃণমূল সাংসদ। রবিবার আর এক তৃণমূল সাংসদের গাড়ি আটকাল সেই গোষ্ঠী-কোন্দলের জেরেই।
ক্যানিংয়ে এ দিন প্রকাশ্যেই দলের একাংশের বিরুদ্ধে কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ এবং কটূক্তি করা হল তৃণমূল সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী চৌধুরীমোহন জাটুয়ার গাড়ি ঘিরে। চড়-থাপ্পড়, লাঠির বাড়ি পড়ল গাড়ির বনেটে, কাচে, গায়ে।
তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের সামনে দলের কর্মী-সমর্থকদের গোষ্ঠী-লড়াই সম্প্রতি বার বার এসেছে সংবাদ শিরোনামে। দলের কর্মী-সমর্থকদের মারপিটে বহরমপুরে পণ্ড হয়েছিল তৃণমূলের সভা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী পুর্ণেন্দু বসু। আগের সপ্তাহেই আরামবাগে প্রায় একই রকম ‘পরিস্থিতি’তে পড়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, “দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না।” শনিবার সিউড়িতে দলীয় সম্মেলনে সাংসদ শতাব্দী রায়ের অভিমত ছিল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য সিপিএম বা অন্য দলের চেয়ে তৃণমূলের নিজের লোকজনই দলের বেশি ক্ষতি করছে।
কিন্তু এর পরেও যে তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ থামার লক্ষণ নেই, তা স্পষ্ট রবিবার ক্যানিংয়ে চৌধুরীমোহন জাটুয়ার গাড়ি ঘেরাও করে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভে। দলীয় সম্মেলনে ‘যোগ দিতে না পারা’ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা দু’দফায় ঘণ্টাখানেক আটকে দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর গাড়ি।
তাম্বুলদহে জাটুয়ার গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ তৃণমূল কর্মী
রহিমা বিবি ও তাঁর সমর্থকদের। রবিবার। ছবি: সামসুল হুদা
মন্ত্রীর উদ্দেশে উড়ে আসে মন্তব্য ‘সিপিএমের দালাল’, ‘এদের জন্যই দল শেষ হয়েছে’, ‘সিপিএমের লোকজনকে ঢুকিয়ে এরাই দলের ক্ষতি করছে’ ইত্যাদি।
মন্ত্রী অবশ্য সেই সময়ে গাড়ির কাচ তুলে বসেছিলেন। পরে তিনি মেনে নেন, ওই ‘কাণ্ড’ দলের লোকজনই ঘটিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওখানে হাজির থাকা দলের কয়েক জনকে আমি চিনি। ওঁদের দলীয় কার্যালয়ে এসে আলোচনার জন্য বলি। কিন্তু ওঁরা রাজি হননি। পুলিশ আমার গাড়ি বের করে দেয়।” ঘটনার পিছনে সিপিএমের ‘উস্কানি’ রয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। যদিও পুলিশের কাছে তিনি কোনও লিখিত অভিযোগ জানাননি। অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “হাস্যকর অভিযোগ। ওদের সাংসদই বলছেন, ওঁরা নিজেরাই দলের ক্ষতি করছেন। আর কী বলব!” জেলা তৃণমূল সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কি না, বিশদে খোঁজ নিচ্ছি।” পুলিশ সুপার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা জানিয়েছেন, ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ দিন ক্যানিং-১, ক্যানিং-২ এবং বাসন্তীতে তৃণমূল ‘ব্লক সম্মেলন’-এর আয়োজন করে। ক্যানিং-২ ব্লকের সম্মেলন চলাকালীন ব্লক তৃণমূলের যুব সভাপতি আশরফ মোল্লা এবং প্রাক্তন ব্লক সভাপতি রহিমা বিবি ও তাঁদের অনুগামীরা জীবনতলা চৌমাথায় বিক্ষোভ শুরু করেন। অভিযোগ, সম্মেলনে তাঁদের ডাকা হয়নি। সম্মেলনটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক পাইক। তিনি আশরফ মোল্লাদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। বিক্ষোভ চালাকালীন দলের জেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি শক্তি মণ্ডল পৌঁছলে তাঁকেও ঘেরাও করা হয়। আশরফদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে মানিক পাইকের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। মাথা ফেটেছে আশরফের। মারধরের অভিযোগও মানিকবাবু মানেননি।
ওই ঘটনার পরে রহিমা বিবি অনুগামীদের নিয়ে তাম্বুলদহ-২ পঞ্চায়েতের সামনে অবরোধ শুরু করেন। সওয়া ১২টা নাগাদ ক্যানিং-১ ব্লকের সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে আটকে পড়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কনভয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ। তাঁরা মন্ত্রীকে নেমে আসার দাবি জানান। গাড়ির উপরে চড়-থাপ্পড় পড়তে থাকায় মন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কয়েক জন পুলিশকর্মী গাড়িটি ঘিরে রাখেন। পরে পুলিশ বাহিনী লাঠি চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। রহিমা বিবির দাবি, পুলিশের লাঠির ঘায়ে তাঁদের ৯ কর্মী-সমর্থক জখম হয়েছেন। তাঁদের ক্যানিং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আশরফ বলেন, “আমরা দীর্ঘ দিন ধরে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়ছি। অথচ, এখন সিপিএমের লোকেরা দলে ঢুকে আমাদের মারছে। এরই প্রতিবাদ জানাতে চাইছিলাম মন্ত্রীর কাছে। কিন্তু তিনি আমাদের কথা শুনলেন না।” মানিকবাবুর দাবি, “সম্মেলন বানচাল করার জন্য এ সব নাটক করেছেন আশরফ মোল্লা, রহিমা বিবিরা।”
পুলিশের হস্তক্ষেপে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তাম্বুলদহ থেকে বেরিয়ে যেতে পারলেও ফের একই অবস্থার সম্মুখীন হন বাহিরসোনা মোড়ে। রায়বাঘিনি হাইস্কুল মাঠে ক্যানিং-১ ব্লক সম্মেলনের আয়োজন হয়েছিল। আয়োজক ছিলেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি শৈবাল লাহিড়ি। তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর হিসেবে পরিচিত তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সদস্য স্বপন বৈদ্য ও তাঁর অনুগামীদের ওই সম্মেলনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। স্বপনবাবুরাই মন্ত্রীর গাড়ি আটকান। এখানেও একই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হলেও মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই পুলিশ মন্ত্রীকে বের করে নিয়ে যায়। আশরফ মোল্লা এবং মানিক পাইকের মতো স্বপনবাবু এবং শৈবালবাবুও পরস্পরের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলেছেন।
আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের পাতলাখাওয়াতেও এ দিন দলীয় সম্মেলনে দলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর সামনেই ‘হাতাহাতি’তে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল কর্মীরা। এলাকার একটি পঞ্চায়েতের দলীয় প্রধানকে কেন সম্মেলনের খবর দেওয়া হয়নি তা নিয়েই বাধে গোলমাল। কৃষ্ণকুমারবাবুর বক্তব্য, “কিছু স্থানীয় নেতা আমায় প্রশ্ন করছিলেন, কেন সবাইকে এই সম্মেলনের কথা জানানো হয়নি। সব প্রশ্নের উত্তর দেবার দায়িত্ব সভাপতির নয়। কিছু লোক নিজেদের তৃণমূল নেতা বলে দাবি করলেও দলের কোনও কাজ করেন না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.