খড়িকা প্রাথমিক বিদ্যালয়
নারীশিক্ষার ব্রত নিয়ে পায়ে-পায়ে শতবর্ষ
ময়টা ১৯১১ সাল। বঙ্গভঙ্গ রদের সেই ঐতিহাসিক বছরেই অধুনা ওড়িশা লাগোয়া পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলাকীর্ণ নয়াগ্রামে স্থাপিত হয় খড়িকা প্রাথমিক বিদ্যালয়। যে স্কুলে প্রথম দশ বছরে কোনও মেয়ে পা রাখেনি, আজ সেই স্কুলেই পড়ুয়াদের মধ্যে মেয়েরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। নয়াগ্রাম ব্লকের প্রথম স্কুলের দাবিদারএই খড়িকা প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শতবর্ষপূর্তি উৎসব হল দু’দিন ধরেশুক্র ও শনিবার।
খড়িকা গ্রামের সম্পন্ন মহাকুল পরিবারের আমন্ত্রণে শিক্ষাপ্রসারের মহতী উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন সাঁকরাইলের রগড়া গ্রামের শিক্ষাব্রতী প্রফুল্লকুমার সাউ। খড়িকামাথানিতে স্কুল প্রতিষ্ঠা করার জন্য এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি। স্কুল তৈরির জন্য জমি দান করেন খড়িকার সম্পন্ন মহাকুল পরিবারের উপেন্দ্রনাথ মহাকুল ও তাঁর দুই সম্পর্কিত ভ্রাতুষ্পুত্র জনার্দন মহাকুল ও বংশীধর মহাকুল। উপেন্দ্রনাথবাবুর ছেলে তথা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সত্তরোর্ধ বিমলচন্দ্র মহাকুল বলেন, “১৯১১ সালে ‘খড়িকা প্রাথমিক বিদ্যালয়’টির সূচনার পিছনে আমাদের পরিবারের পাশাপাশি, খড়িকা ও আশেপাশের গ্রামবাসীদের সম্মিলিত উদ্যোগ ও উৎসাহও ছিল অসীম। স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে প্রফুল্লবাবু থেকে যান খড়িকা গ্রামে। আমৃত্যু স্কুলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন তিনি।”
ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র তথা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক অশীতিপর শশাঙ্কশেখর আচার্য বলেন, “ছোটবেলায় প্রতিষ্ঠাতা-শিক্ষক প্রফুল্লকুমার সাউকে বাড়ি-বাড়ি ঘুরে পড়ুয়া সংগ্রহ করতে দেখেছি। সেই সময় স্কুলে মেয়েদের পাঠানোর চল ছিল না। মহাকুল পরিবারের তরফে প্রথম প্রথা ভাঙার পর মেয়েরা স্কুলে পড়তে আসে।” শতবর্ষের স্কুলটির অনেক ইতিহাসই এখন কালের গর্ভে। তবে স্থানীয় তথ্য বলছে, এলাকার মেয়েদের স্কুলমুখী করতে প্রফুল্লবাবুর দশ বছর সময় লেগেছিল। ১৯২১ সালে স্কুলে ভর্তি হওয়া প্রথম ছাত্রীর নাম রাধারানি মহাকুল। রাধারানিদেবীর ভাইপো অনিলকৃষ্ণ মহাকুল বলেন, “পিসিমার কাছে শুনেছি, তিনিই স্কুলের প্রথম ছাত্রী। তার আগে কেবল ছেলেরাই পড়ত।”
স্কুলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা বীণাপাণি শীট জানালেন, আদিবাসী ও অনগ্রসর সম্প্রদায় অধ্যুষিত প্রত্যন্ত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও বর্তমান ১১৬ জন পড়ুয়ার মধ্যে ছাত্রীরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী তথা প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা আহ্লাদী মাহাতোর কথায়, “প্রতিষ্ঠাতা-শিক্ষক প্রফুল্লবাবুর আদর্শে নারী শিক্ষার প্রসারে পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। তাই পড়ুয়াদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যাটা এখানে বেশি।”
শুক্রবার শতবর্ষপূর্তি উৎসবের উদ্বোধন করেন নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু। শতবর্ষ উপলক্ষে স্কুলপ্রাঙ্গণে স্থাপিত স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ও বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন বিধায়ক। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র তথা মেদিনীপুর হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন কার্যকরী অধ্যক্ষ অনিলকৃষ্ণ মহাকুল ওই তিনটি মূর্তি দান করেছেন। শনিবার শেষ দিনে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা, জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি স্বপন মুর্মু প্রমুখ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.