সঙ্কটে সারস্বত-কেন্দ্র/১
সরকারের নজর নেই, ধুঁকছে জেলা গ্রন্থাগার
ইয়ের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। এক সময়ে গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল মেদিনীপুর জেলা গ্রন্থাগার। পূর্ব ভারতের শ্রেষ্ঠ জেলা গ্রন্থাগার হিসাবে পুরস্কারও পেয়েছিল। এমনই ঐতিহ্যশালী গ্রন্থাগারও বর্তমানে নানা সমস্যায় জেরবার।
কেন? গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির বক্তব্য, কর্মী-সঙ্কট ও অর্থের অভাবেই জেলা গ্রন্থাগারের মানোন্নয়ন অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বার বার সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েও সুফল মেলেনি। ২০০১ সালে ‘ন্যাশনাল লেভেল রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়ার পরে তৎকালীন রাজ্য সরকারও জেলা গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষকে সংবধর্না দিয়েছিল। সে সময়ে অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত ঘোষণা করেছিলেন, সাফল্যের জন্য গ্রন্থাগারকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্যও দেওয়া হবে। কিন্তু তা কেবল ঘোষণা-ই থেকে গিয়েছে। গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বিমান গুপ্ত বলেন, “কর্মী ও অর্থের সঙ্কটে অনেক কাজই ঠিক মতো করা যায়নি। জেলা গ্রন্থাগারের ভূমিকার প্রসার খুবই জরুরি। কিন্তু সরকারি সাহায্য না মেলায় সে ভাবে উন্নয়ন ঘটানো যায়নি।”
এই জেলা গ্রন্থাগারের সরকার অনুমোদিত কর্মী-সংখ্যা ১০। এক জন গ্রন্থাগারিক, ২ জন সহ-গ্রন্থাগারিক, ২ জন লাইব্রেরি অ্যাটেনডেন্ট, ১ জন পিওন, ১ জন দারোয়ান, ১ জন নাইটগার্ড, ১ জন ক্লিনার ও ১ জন ড্রাইভার থাকার কথা। বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ২ জন কর্মী। এক জন নাইটগার্ড ও আর এক জন মাত্র লাইব্রেরি অ্যাটেনডেন্ট। জেলা গ্রন্থাগারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক ও সহ-গ্রন্থাগারিকের পদ শূন্য! দীর্ঘ দিন ধরেই এমনটাই চলে আসছে। তা হলে কী ভাবে উন্নয়ন সম্ভব! সমস্যার কথা স্বীকার করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক ইন্দ্রজিৎ পান বলেন, “খুবই যে সমস্যা হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বার বার সরকারকে বিষয়টি জানানোও হয়েছে। কিন্তু শূন্যপদ পূরণ হয়নি।” কর্মী-সঙ্কটে ভুগছে জেলা গ্রন্থাগার দফতরও। জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক ছাড়া কর্মী রয়েছেন মাত্র ৩ জন। তাঁদের উপরেই বিশাল জেলার সব গ্রন্থাগারের দেখাভালের অসীম দায়িত্ব।
জেলা গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। ৭৫ হাজার ৩১৮টি বই রয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন মানুষের দান করা আরও কিছু বই। রয়েছে প্রত্ন-সামগ্রী। সেগুলির বিজ্ঞানসম্মত সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করা যায়নি। গ্রন্থাগারের সদস্য সংখ্যা ৩ হাজার। আগে গ্রন্থাগারে নিয়মিত বহু মানুষ আসতেন। বই পড়তেন, বাড়িতে নিয়ে যেতেন। এখন বড় জোর জনা পঞ্চাশেক পাঠক আসেন। তা-ও সব দিন আসেন না। কর্মী না থাকায় পাঠকরা ঠিকমতো পরিষেবা পান না বলেই অভিযোগ। এমনিতেই বর্তমানে গ্রন্থাগারমুখী মানুষের সংখ্যা কমছে। তার উপরে পরিষেবার মান খারাপ। অথচ এই জেলা গ্রন্থাগারে বহু উল্লেখযোগ্য বই রয়েছে। কর্মী না থাকায় মানুষ ব্যবহার করতে পারছেন না।
মেদিনীপুর জেলা গ্রন্থাগারের ছবি তুলেছেন কিংশুক আইচ।
আগে জেলা গ্রন্থাগারের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তা হল, জেলার বিভিন্ন এলাকায় গ্রামীণ গ্রন্থাগারে বই পৌঁছে দেওয়া। গ্রামীণ গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা কম। তাই ওই সব গ্রন্থাগারকে সমৃদ্ধ করার জন্য ভ্রাম্যমাণ পরিষেবা দেওয়া হত। দু’এক মাস ছাড়া-ছাড়া নতুন বই পৌঁছে দেওয়া হত ওই সব গ্রন্থাগারে। পরে ফের এক দফা নতুন বই নিয়ে গিয়ে আগের বার দিয়ে আসা বই ফিরিয়ে আনা হত। ফলে গ্রামীণ গ্রন্থাগারেও পাঠকরা ভাল এবং নতুন বই পড়ার সুযোগ পেতেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সেই পরিষেবা বন্ধ। ভ্রাম্যমাণ পরিষেবার জন্য যে গাড়ি ছিল, সেটিই বিকল হয়ে গিয়েছে। বিমানবাবু বলেন, “পরবর্তীকালে গাড়ি ভাড়া করে বই কিছু গ্রামীণ গ্রন্থাগারে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থাভাবে তা-ও করা যায়নি।” জেলায় ১৫৭টি গ্রামীণ গ্রন্থাগারে কী ভাবেই বা ভাড়াগাড়িতে বই পৌঁছনো সম্ভব! যেখানে বই পৌঁছনোর জন্য বছরে বরাদ্দই হয় মাত্র ১৫ হাজার টাকা! কন্টিজেন্সি বাবদ বরাদ্দ মাত্র ১৩ হাজার ১০০ টাকা। বইমেলায় বই কেনার জন্য ২৫ হাজার টাকা, বই বাঁধানোর জন্য ৫ হাজার টাকা, আসবাব কেনার জন্য মোটে ৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। আর কেরিয়ার গাইডেন্সের বই কেনার জন্য আগে ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হত। কয়েক বছর হল তা কমিয়ে অর্ধেক অর্থাৎ ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এই সমস্যার মধ্যেই পরিচালন সমিতি বহু শিক্ষককে আবেদন করে বৃত্তিমূলক শাখা খুলেছিল। যেখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রাজ্যের শিক্ষা দফতরের কাছে আবেদন জানিয়ে বছরে মাত্র ৬০০ টাকার বিনিময়ে একটি কম্পিউটর শিক্ষাকেন্দ্রও খোলা হয়েছিল। সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে, ২০ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকার বিশেষ বরাদ্দও মঞ্জুর করানো গিয়েছিল। ওই টাকায় একটি নতুন বড় হলঘর তৈরি হয়েছে। কিন্তু এখনও সব বই ক্যাটালগিংয়ের আওতায় আনা যায়নি। আর কম্পিউটর সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসা গিয়েছে মাত্রই ১৫ হাজার বই। বিমানবাবু বলেন, “জেলা গ্রন্থাগারের দিকে সরকারের একটু বেশিই নজর দেওয়া উচিত। কারণ জেলার সমস্ত গ্রন্থাগারই এই গ্রন্থাগারের উপর নির্ভরশীল।” ১৯৫৬ সালে বিদ্যাসাগর হলে ছোট একটি গ্রন্থাগার হিসাবে যাত্রা শুরু করে ১৯৬১-তে ৩৭ ডেসিমেল জমির উপর নতুন গ্রন্থাগার-ভবন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সরকারি উদাসীনতায় চূড়ান্ত সঙ্কটে আজকের জেলা গ্রন্থাগার।

(চলবে)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.